প্রায় অসাধ্য সাধন করে ফেলছে ‘শঙ্কর’।
হ্যাঁ, ৫০ দিনের মাথায় ‘চাঁদের পাহাড়’-এর বক্স অফিস কালেকশন থেকেই প্রযোজক সংস্থা ভেঙ্কটেশ ফিল্মস ১৫ কোটি টাকা তুলে ফেলেছে। এর উপরে রয়েছে ৪ কোটি টাকার স্যাটেলাইট রাইটস।
অর্থাৎ বাংলা ছবির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় হিটের নাম এখন, ‘চাঁদের পাহাড়’। “আমার কাছে যা হিসেব, তাতে ১৫ কোটি টাকা তো উঠেই গিয়েছে। এখনও কয়েকটা জায়গায় চলছে। স্যাটেলাইট থেকে শুনেছি ৪ কোটি টাকা এসেছে। এর সঙ্গে আরও কিছু রাইটস আর আমেরিকার বক্স অফিস কালেকশন জুড়লে লাইফটাইম আর্নিং-এ ২০ কোটি ছুঁয়ে ফেলবে চাঁদের পাহাড়,” বলছেন বলিউডের বাণিজ্য-বিশেষজ্ঞ তরণ আদর্শ।
‘চাঁদের পাহাড়’-এর আগে বাংলায় সবচেয়ে ব্যায়বহুল ছবি ছিল সৃজিত-প্রসেনজিতের ‘মিশর রহস্য’। সে ছবির বাজেট ছিল সাত কোটি টাকা। কিন্তু শুধু বক্স অফিস ধরলে সেই ছবির কালেকশন ৬ কোটি ৮০ লাখ টাকায় এসে থেমে গিয়েছিল। পরিসংখ্যানের দিক থেকে ‘চাঁদের পাহাড়’-এর পর সবচেয়ে বড় হিট ছবির নাম ‘পাগলু’। দেব-কোয়েল জুটির সেই ছবির লাইফটাইম কালেকশন, ১০ কোটি টাকা যা ‘চাঁদের পাহাড়’-এর অর্ধেক।
পরিসংখ্যানগুলো মেনে নিচ্ছেন ভেঙ্কটেশ ফিল্মস-এর প্রতিযোগীরাও। “বলতে লজ্জা নেই যে, ‘চাঁদের পাহাড়’ বাংলা ছবির ইতিহাসে সব চেয়ে বড় হিট। এর অর্ধেক কালেকশনও আজ অবধি কোনও বাংলা ছবি করতে পারেনি,” বলছেন অশোক ধানুকা। দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়ার রানা সরকার বলছেন, “তরণ আদর্শ যে অঙ্কটা বলছেন, তার সঙ্গে আমি একমত। ‘চাঁদের পাহাড়’ই বাংলা ছবির ইতিহাসে সব চেয়ে বড় হিট।”
আর ভেঙ্কটেশ কী ভাবছে? মহেন্দ্র সোনির বক্তব্য হল, “চাঁদের পাহাড়-এর সাফল্য প্রমাণ করছে, বাংলা ছবির বাজার অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। এটা কিন্তু সবে শুরু। ২০ কোটির রেকর্ডও খুব তাড়াতাড়ি ভাঙতে পারব বলে আশা করছি।” ‘চাঁদের পাহাড়’-এর সঙ্গে একই দিনে মুক্তি পেয়েছিল আমির খানের ‘ধুম থ্রি’। কিন্তু পূর্ব ভারতে তার বক্স অফিস কালেকশন ছ’কোটির কাছাকাছি এসে থামে। “এতেই বোঝা যাচ্ছে, ‘চাঁদের পাহাড়’ কত বড় হিট,” বলছেন ভারতলক্ষ্মী স্টুডিওর কর্ণধার এবং এগজিবিটর নবীন চৌখানি। |
তবে ২০ কোটির ব্যবসা বাংলা ছবির ক্ষেত্রে বিরাট হলেও, অন্যান্য আঞ্চলিক ছবির তুলনায় তা এখনও কম। শুধু তামিল ইন্ডাস্ট্রিতেই আজ অবধি সবচেয়ে বড় হিট ‘এন্থিরন’য়ের বক্স অফিস কালেকশন ছিল ২৮০ কোটি টাকা। তার পরে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে ‘বিশ্বরূপম’ (১৮০ কোটি) এবং ‘শিবাজি’ (১৩০ কোটি)। তেলুগু ইন্ডাস্ট্রিতে আজ অবধি সবচেয়ে বড় হিটের নাম ‘আত্তারিন্তিকি দারেদি’। সে ছবি ৭৪ কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল। এর পরে ‘মগধীরা’ এবং ‘গব্বর সিংহ’ যথাক্রমে ৭৩ কোটি ও ৬৬ কোটি টাকার ব্যবসা করে।
কিন্তু দক্ষিণ ভারতের সঙ্গে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির তুলনা করাটা ঠিক নয় বলেই মনে করছেন প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা। কেন? “ওদের মার্কেটটা আমাদের থেকে অনেক বড়। ওদের বড় স্টারের ছবি মুক্তি পায় ৫৫০০টা হলে। সেখানে আমাদের বাংলায় রয়েছে বড় জোর ৫০০টা হল। ওদের মতো হলের সংখ্যা এখানে হলে, আমাদের এখানেও বক্স অফিস কালেকশন ওই রকম হতে পারত।”
পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের কাছে ‘চাঁদের পাহাড়ে’র সাফল্যের অঙ্কটা কী? এক, ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা। দুই, বিভুতিভূষণের গল্প। আর তিন, দেবের বিপুল জনপ্রিয়তা। “এই তিনটে জিনিস না থাকলে ‘চাঁদের পাহাড়’ এত বড় হিট হত না,” বলছেন মৃদুভাষী পরিচালক।
দেব নিজে অবশ্য এ সব ভাবছেন না। তাঁর হিসেবে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ তিনি নন, কমলেশ্বরই। “এত বড় হিটের অংশীদার হতে পেরে স্বাভাবিক ভাবেই খুব খুশি। কিন্তু কমলেশ্বরদা ছাড়া এই সাফল্য আসত না।”
দেব-কমলেশ্বর-ভেঙ্কটেশের জুটি পাহাড়টা জিতেই নিয়েছেন। |
বাংলার সেরা ১০ |
• চাঁদের পাহাড় ১৫ কোটি*
• পাগলু ১০ কোটি
• সাথী ৯.৮ কোটি
• পরান যায় জ্বলিয়া রে ৯.৫ কোটি
• খোকা-৪২০ ৯ কোটি
• আওয়ারা ৮.৫ কোটি
• চ্যালেঞ্জ-টু ৭.৫ কোটি
• মিশর রহস্য ৬.৮ কোটি
• বস ৬.৭ কোটি
• চিরদিনই তুমি যে আমার ৬.৫ কোটি
* ছবিটা এখনও চলছে। সঙ্গে স্বত্ব-মূল্য যোগ হলে ২০ কোটি ছোঁয়ার কথা। |
|