খামখেয়ালি আবহাওয়ার জন্য শহরে বাড়ছে রোগের দাপট
ট্রামে, বাসে মেট্রোয় একই চিত্র। ছলছল চোখ। কারও চোখে লাল রং ধরেছে। হাতে রুমাল। হয় ঘন ঘন নাক মুছতে হচ্ছে কিংবা কাশির দমকে উঠে আসা কফ সামাল দিতে হচ্ছে। কারও কারও গলা দিয়ে ঘড়ঘড় আওয়াজ বেরোচ্ছে। শ্বাসনালিতে কফ জমে থাকার ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে কাশতে কাশতে মাটিতে বসে পড়ছেন।
মহানগরীতে কোনও নির্দিষ্ট রোগ হানা দেয়নি কিন্তু। ঘন ঘন তাপমাত্রা বদলের মাসুল গুনছেন কলকাতাবাসী। ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া এবং অন্য রোগজীবাণু পরিবর্তিত আবহাওয়ায় প্রবল পরাক্রমশালী হয়ে উঠেছে। তারা মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করছে এবং অনেক ক্ষেত্রে হারিয়েও দিচ্ছে। যাদের ক্ষেত্রে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে তাঁদের হাতেই রুমাল, চোখ লাল কিংবা কাশতে কাশতে বসে পড়ছেন তাঁরা।
ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ। এরই মধ্যে ঘরে পাখা চলছে। কখনও কখনও বাইরের রোদ থেকে ফিরে এসি-ও চালিয়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ। ঠান্ডা পানীয়ের বিক্রির বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়ে গিয়েছে। আবহাওয়া দফতর শীতকে হিমঘরে পাঠিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে ফের শুরু হয়েছে উত্তুরে হাওয়ার দাপট। দু’দিনে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চার ডিগ্রি নেমেছে। চিকিত্‌সকেরা বলছেন, আবহাওয়ার এই হঠাত্‌ পরিবর্তনটাই যত নষ্টের গোড়া। গা ম্যাজম্যাজ ভাব, সর্দি, কাশি, গলা খুসখুস সব ওই আবহাওয়ার পট পরিবর্তনের জন্য।
খানিকটা নিরীহ চেহারায় শুরু হয়ে তার পরে রীতিমতো লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়ারা। ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, বসন্ত, হাম ইত্যাদি হলে রোগের কারণটা সহজেই ধরা পড়ছে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হানাদার ব্যাক্টেরিয়ারা নামগোত্রহীন। ফলে তাদের মোকাবিলার নির্দিষ্ট উপায়ও চিকিত্‌সদের অজানা। তাতেই বাড়ছে জটিলতা। জ্বর কমানোর ওষুধ, কাশির সিরাপ এমনকী অ্যান্টিবায়োটিকও হেরে যাচ্ছে তার কাছে।
শিশু চিকিত্‌সক অপূর্ব ঘোষ বলেন, “১০৩-১০৪ ছাড়িয়ে যাচ্ছে জ্বর। তার চেয়েও বেশি ভোগাচ্ছে কাশি। আমাদের ভয়, এই সর্দি-কাশির ফাঁক গলে কোন সময়ে আবার নিউমোনিয়া ঢুকে যায়। তা হলে পরিস্থিতি খুবই জটিল হওয়ার ভয় রয়েছে।”
কী হচ্ছে
• জ্বর (কখনও ঘুসঘুসে, কখনও তাপমাত্রা বেশি)
• গা-হাত-পায়ে ব্যথা (কখনও কেবল পেশিতে, কখনও হাড়ে)
• কাশি (কখনও এক দিন থাকছে, কখনও থেকে যাচ্ছে সপ্তাহখানেক)
• গলা ব্যথা (গরম জলে গার্গল করলে কখনও সেরে যাচ্ছে, কখনও সারছে না)
• শ্বাস নিতে কষ্ট (কখনও কাফ সিরাপে সারছে, কখনও ভোগাচ্ছে সপ্তাহখানেক)
কেন হচ্ছে
• এই পরিস্থিতিতে নানা ধরনের ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস সক্রিয় হচ্ছে
• জীবাণুবাহক প্রাণী যেমন মশা-মাছির বংশবিস্তার দ্রুত হচ্ছে
• তাপমাত্রার ঘন ঘন পরিবর্তনে মানবশরীরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হচ্ছে
• সেই ছিদ্র দিয়ে শরীরে বাসা বাঁধছে নানা ধরনের ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া
• রোগ নিয়ন্ত্রণে নানা ধরনের ওষুধের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দুর্ভোগ বাড়ছে
কী করতে হবে
• গায়ে জলভরা গুটি বেরোলে চিকিত্‌সকের কাছে যান (এটা জল বসন্তের সময়)
• জ্বর, গলা ব্যথা হলে অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না, চিকিত্‌সকের কাছে যান
• জীবাণুর চরিত্র জানতে অবশ্যই রক্ত পরীক্ষা করাবেন (অনেক ক্ষেত্রে ধরা পড়বে না)
• শ্বাসকষ্ট বেশি হলে বাড়িতে না রেখে হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে ভর্তি করান
• ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস শরীর দুর্বল করে দেয়, বাড়িতে বিশ্রাম নিন

তারই সঙ্গে যোগ হয়েছে চিকেন পক্স। কখনও প্রবল জ্বরের সঙ্গে গায়ে ফোসকার মতো গোটা বেরোচ্ছে। কখনও আবার গোড়ায় জ্বর বা গায়ে ব্যথা থাকছে না, শুধু র্যাশ। ফলে রোগটাকে চেনার ক্ষেত্রেও তৈরি হচ্ছে নানা বিভ্রান্তি।
বহু ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, চিকেন পক্সের প্রতিষেধক নেওয়ার পরেও রোগটা হচ্ছে। ডাক্তারদের বক্তব্য, প্রতিষেধক নিলে রোগ হবে না, তা নয়। কিন্তু রোগের আক্রমণের বহরটা কম রাখে ওই প্রতিষেধক। অপূর্ববাবু বলেন, “আগে বলা হত, চিকেন পক্সের একটা প্রতিষেধক টিকাই যথেষ্ট। কিন্তু ২০১২-র পরে বিশ্ব জুড়েই এটা বদলে গিয়েছে। এখন দু’টি প্রতিষেধক টিকা নেওয়ার কথা বলা হয়।”
তাপমাত্রার ওঠাপড়ার সঙ্গে এই ধরনের রোগের সম্পর্ক খুব নিবিড়। কারণ এই সময়েই জীবাণুরা অতি মাত্রায় সক্রিয় হয়ে পড়ে। মানুষের দেহে এই সময়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটা কমে যাওয়ায় অতর্কিতে আক্রমণ করে এই সব ভাইরাস। আত্মরক্ষার প্রায় কোনও সুযোগই থাকে না। আক্রান্ত হওয়ার পরেও কার্যত বসে বসে অপেক্ষা করার পালা। কখন রোগটা নিজে থেকে ছাড়বে। মেডিসিন-এর চিকিত্‌সক সৌমিত্র ঘোষ বলেন, “প্রায় প্রতি বছরই শীত চলে যাওয়ার সময়টা এমন করে জানান দিয়ে যায়। তাই এই সময়টা সকলকে খুব সাবধানে থাকার পরামর্শ দিই আমরা। কিন্তু তার পরেও রোগ ঠেকানো যায় না। সে ক্ষেত্রে আমরা সাধারণ জ্বর কমানোর ওষুধ দিয়েই চিকিত্‌সা করি। কারণ, সব ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক লাগে না, বা অ্যান্টিবায়োটিকে কাজ হয় না।” ডাক্তারেরা বলছেন, বেশি মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। বরং বাড়িতেই বিশ্রাম নিন, আর প্রচুর পরিমাণ জল খান। শুকনো কাশির জন্য প্রতিদিন নিয়ম করে মধু খেলে ফল মিলবে। আর কাশির সঙ্গে কফ উঠতে থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কোনও কাফ সিরাপ খেতে পারেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.