শহরে না আছে ভাল পার্ক, না আছে শপিং মল। তাই একঘেয়েমি কাটাতে ভ্যালেন্টাইনদের মন খুঁজছে দুর্গাপুরের শপিংমল, রেস্তোরাঁর ঝাঁ চকচকে পরিবেশ।
কয়েক বছর ধরে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন ডে-তে বাঁকুড়ার যুবাদের মন টানছে শিল্পনগরী দুর্গাপুরের শপিংমল, রেস্তোরাঁ কিংবা মাল্টিপ্লেক্স। সঙ্গিনীকে নিয়ে অনেকেই মোটরবাইক হাঁকিয়ে দুর্গাপুর ছুটছেন। অনেকে আবার বাসে চড়ে বেরিয়ে পড়ছেন।
গত এক দশকে দুর্গাপুর শহরের বিশেষত সিটি সেন্টার এলাকার ভোল অনেকটাই বদলে গিয়েছে। কয়েকটি শপিংমল, মাল্টিপ্লেক্স, রেস্তোরাঁ তৈরি হয়েছে। শপিংমলের ফুডকোর্ট, কিংবা রেলিংয়ে ঠেস দিয়ে সঙ্গীর সঙ্গে অনেকটা সময় পার করে দেওয়া যায়। পাড়ার চেনামুখদের ভিড়ও থাকে না। ফলে নির্ভাবনায় জমাটি আড্ডা দিতে বাধা নেই।
তাই বাঁকুড়া শহর থেকে দুর্গাপুরের ৪০ কিলোমিটারের পথ পার করতে যুবকরা প্রেমিকাকে সঙ্গে নিয়ে মোটরবাইকের এক্সিলেটর দাপিয়ে প্রায় উড়ে যাচ্ছেন। সেখানে সিটি সেন্টার ছাড়াও দিনভর সুবিশাল কুমারমঙ্গলম পার্কেও দিব্যি ঘুরে কাটানো যায়। তাই শুধু ভি ডে নয়, সপ্তাহের যে কোনও দিন মন চাইলেই প্রেমিক-প্রেমিকারা এখন দুর্গাপুরে উড়ে যাচ্ছেন। শুধু বাঁকুড়া শহর নয়, বিষ্ণুপুর থেকে বড়জোড়া, গঙ্গাজলঘাটি, বেলিয়াতোড়ের অনেক ছেলে-মেয়েরাও এখন দুর্গাপুরে যাচ্ছেন নিভৃতে সময় কাটাতে। |
শুধু যে যুগলরাই যাচ্ছেন, তা নয়। বন্ধুরাও দলবেঁধে এই বিশেষ দিনে বেরিয়ে পড়ছেন দুর্গাপুরে। আজ শুক্রবার, ওই বিশেষ দিনে কোথায় কী ভাবে তাঁরা সময় কাটাবেন, তার আগাম পরিকল্পনাও সেরে ফেলছেন তাঁরা।
বাঁকুড়ার কলেজ পড়ুয়া অনিতা রায়ের কথায়, “শুক্রবার সকাল সকাল বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাসে চড়ে আমরা কয়েক জন বন্ধু কুমারমঙ্গলম পার্কে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছি। দুপুরে সেখানেই কোনও রেস্তোরাঁয় খাওয়া দাওয়া করে বিকেলে বাড়ি ফিরব।” বাঁকুড়া শহরের আর এক কলেজ পড়ুয়া শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ও বান্ধবীকে নিয়ে দুর্গাপুরে যাবেন বলে ঠিক করেছেন। তিনি বলেন, “দুর্গাপুরে গেলেই মনটা অন্য রকম হয়ে যায়। সিটি সেন্টারের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি করব। কিছু কেনাকাটা করার পরে ফুরসৎ পেলে মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখে বাড়ি ফেরার ইচ্ছা রয়েছে।”
কী-ই বা করবেন ওঁরা? বাঁকুড়া শহরে বাস্তবিকই প্রেম করার জায়গার বড় অভাব যে। কলেজ পড়ুয়ারা যদিও বা প্রেম করার জন্য কলেজ চত্বরে একটু জায়গা পান, কলেজ পাশ করে বেরিয়ে গেলে তাও জোটে না। গন্ধেশ্বরী নদী, দ্বারকেশ্বর নদের তীর বা কলেজ রোড ধরে কতক্ষণ আর ঘুরে বেড়ানো যায়! লোকের টিপ্পনিও কম শুনতে হয় না। একটু বসে গল্প করতে গেলে কয়েকটি রেস্তোরাঁ ছাড়া আর গতি থাকে না প্রেমিক যুগলদের। সেখানেও তো বেশিক্ষণ টেবিল আঁকড়ে পড়ে থাকা যায় না।
প্রতাপবাগানে যদিও একটি পার্ক (সুকুমার উদ্যান) রয়েছে, তাতেও আবার পাড়ার কাকিমা, দাদু-জেঠুদের অবাধ বিচরণ। ‘‘ধরা পড়ে গেলে ঝামেলার শেষ থাকবে না’’— কথাটা বলছিলেন বাঁকুড়ার পাঠকপাড়ার বাসিন্দা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর আক্ষেপ, “কোথাও নিরিবিলিতে একটু বসে গল্প করার মতো জায়গা এই শহরে নেই। তাই অনেকেই ভি ডে-তে ছুটছেন শহরের বাইরেই। বাঁকুড়ার বাসিন্দা শান্তনু বাউল বলেন, “শপিং মলে কেনাকাটা বা মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখারও তো অনেকের ইচ্ছা যায়। এই শহরে কী আছে?” এই শহরের বর্তমান তরুণ প্রজন্মের মন ছুটছে তাই দুর্গাপুর, আসানসোলের মতো তুলনামূলক উন্নত শহরে। একটু নিরালার খোঁজে, একটু শহুরে ভাবে সময় কাটানোর তাগিদে।
বাঁকুড়ার পুরপ্রধান শম্পা দরিপাও বিষয়টি নিয়ে ওয়াকিবহাল। তিনি বলেন, “সত্যি কথা, শহরে প্রেম করার জায়গার অভাব রয়েছে। যে কয়েকটি পার্ক রয়েছে অধিকাংশই বাচ্চাদের জন্য। তবে প্রেমিক যুগলদের জন্যও আমরা আলাদা পার্ক গড়ার চিন্তা ভাবনা করছি।”
তত দিনে ক’টা ভি-ডে পার হয় কে জানে! |