মগরাহাটের বিষমদ-কাণ্ডের একটি মামলায় মূল অভিযুক্ত নুর ইসলাম ফকির ওরফে খোঁড়া বাদশা এবং তাঁর স্ত্রী সাকিলা বিবি-সহ ১০ জন বেকসুর খালাস পেলেন। বৃহস্পতিবার ডায়মন্ড হারবার আদালতের অতিরিক্ত জেলা জজ অঞ্জলি সাহা তাঁদের বেকসুর খালাস ঘোষণা করেন। তবে, খোঁড়া বাদশা-সহ ওই ১০ জনের বিরুদ্ধে ওই ঘটনাতেই আরও দু’টি মামলা চলায় এখনই তাঁরা হাজতবাস থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না।
২০১১-র ১৪ ডিসেম্বর সকাল থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটের সংগ্রামপুর, উস্তি এবং মন্দিরবাজার থানা এলাকায় একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। তিন দিনে ১৭৩ জন মারা যান। চিরদিনের মতো দৃষ্টিশক্তি হারান ১০ জন। ময়না-তদন্তের রিপোর্টে জানা যায়, মদে বিষক্রিয়ায় সকলের মৃত্যু হয়েছে।
এ ঘটনা নিয়ে তোলপাড় হয় রাজ্য-রাজনীতিও।
মৃতেরা মগরাহাট, উস্তি এবং মন্দিরবাজার এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় ওই তিন থানার পক্ষ থেকেই মামলা করা হয়। তার মধ্যে মন্দিরবাজার থানার মামলায় (কেস নম্বর ২২০-২০১১) এ দিন খোঁড়া বাদশা-সহ ১০ জন বেকসুর খালাস পান। ওই মামলায় অভিযোগ ছিল সংগ্রামপুরের ভাটি থেকে বিষমদ বিক্রির। এই মামলার সরকারি আইনজীবী মোহানুর রহমান গায়েন বলেন, “তদন্তে যা কিছু পাওয়া গিয়েছিল, সবই আদালতে পেশ করা হয়েছে। দীর্ঘ শুনানির পরে আদালত এ দিন খোঁড়া বাদশা-সহ ১০ জনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন।” প্রায় একই সুরে খোঁড়া বাদশার আইনজীবী সৈয়দ গফ্ফর আলি বলেন, “আমার মক্কেল নির্দোষ ছিলেন। পুলিশ যে সাক্ষী ও তথ্যপ্রমাণ আদালতে হাজির করেছিল, তা থেকে কিছুই প্রমাণ না হওয়ায় বিচারক মক্কেলকে বেকসুর খালাস করে দিয়েছেন।”
পুলিশ সূত্রের দাবি, মন্দিরবাজার থানার মামলাটিতে ২৩ জন সাক্ষী ছিলেন। তাঁদের একাংশ আদালতে নির্দিষ্ট ভাবে জানাতে পারেননি, যাঁরা ঘটনার শিকার তাঁরা কোথা থেকে মদ কিনেছিলেন। অভিযুক্তেরা খালাস পাওয়ার পিছনে সেটা অন্যতম কারণ হতে পারে বলে অনুমান পুলিশের।
দু’বছর আগে বিষ মদে মৃত্যুর খবর জানাজানি হতেই সংগ্রামপুর স্টেশন লাগোয়া খোঁড়া বাদশার ভাটি মাটিতে মিশিয়ে দেয় জনতা। ভাঙচুর চালানো হয় অনতিদূরে খোঁড়া বাদশার বাড়িতেও। ওই ঘটনার পর থেকে বেপাত্তা ছিলেন খোঁড়া বাদশা ও তাঁর স্ত্রী। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ ছিল, গোচরণ থেকে আসা চোলাই মদ খোঁড়া বাদশার ঠেক থেকে বিক্রি করা হত। নেশার তীব্রতা বাড়ানোর জন্য ওই ঠেকেই চোলাইয়ের সঙ্গে রাসায়নিক মিশিয়ে তা বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করতেন খোঁড়া বাদশা। ওই দম্পতিই ঘটনার মূল চক্রী বলে অভিযোগ তোলেন তিন থানা এলাকার বাসিন্দারা।
২০১১-র ২৫ ডিসেম্বর ক্যানিং থেকে সাকিলা বিবিকে ধরে সিআইডি। ২০১২-র জানুয়ারিতে ডায়মন্ড হারবার আদালতে আত্মসমর্পণ করেন খোঁড়া বাদশা। তিনটি মামলায় গোচরণ, মন্দিরবাজার, উস্তি ও মগরাহাট থানার এলাকা থেকে ৪৭ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। উস্তি ও মগরাহাট থানার মামলা দু’টির তদন্তভার নিয়েছে সিআইডি। ওই দু’টি মামলার শুনানি চলছে আলিপুর আদালতে। |