আন্দ্রে রাসেল কি নাইটদের জীবনে ভ্যালেন্টাইন হিসেবে উদয় হতে পারবেন?
বৃহস্পতিবার নাইটরা তাঁকে নেওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় টিভি চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে বললেন, “নাইটদের হয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে রাসেল।”
নাইটদের নিলামের নিশ্চেষ্টতা এ দিনও অব্যাহত ছিল। রস টেলরের জন্য না যাওয়া। অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিমান উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান আদিত্য তারে-র জন্য না গিয়ে সেই মনবিন্দর সিংহ বিসলার পেছনে ছোটা। ভারতীয় ক্রিকেটমহল তখন নিঃসন্দেহ হয়ে পড়েছে, দ্বিতীয় দিনটাও একই রকম গেল। এই সময় লাঞ্চের ঘণ্টাখানেক বাদে তারা রাসেলকে তুলে নেয়।
কাছাকাছি সময়ে একই হোটেলে বসে শ্রীনিবাসন আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিল মেম্বারদের বলছেন, “ধরে নিন আইপিএল সেভেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। আমাদের তরফ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে অনুরোধ করা হবে, যদি ওঁরা নিরাপত্তা দিতে পারেন। ফ্র্যাঞ্চাইজিরা খুবই চাইছে আইপিএল ভারতে হোক। কিন্তু যা পরিস্থিতি, মনে হচ্ছে পুরোটাই দক্ষিণ আফ্রিকায় হবে।” গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্যরা কেউ জানেনও না, শ্রীনি ক’দিন আগেই দক্ষিণ আফ্রিকা বোর্ড কর্তাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। এমনকী মাত্র কিছু দিন আগে তাঁর কাছে চরম ধিক্কৃত হারুন লর্গ্যাটের সঙ্গেও কথা বলেছেন। যাতে এই ক্রিকেট-বিতর্ক ধ্বস্ত সময়ে আইপিএল দক্ষিণ আফ্রিকায় সরিয়ে নেওয়া যায়। |
শহরে নাইট-বিরোধী উত্তাপ। বৃহস্পতিবার ইডেনের সামনে। |
গভর্নিং কাউন্সিল বৈঠকে শ্রীনি বলেন, “স্পনসর পেপসি চাইছে আইপিএল দেশে হোক। ফ্র্যাঞ্চাইজিরা চাইছে দেশে হোক। ওদের বোঝাতে হবে। দেখতে হবে যাতে টাকার ক্ষতি না হয়। মেম্বার্স অ্যাসোসিয়েশনদের যদি টাকার ঘাটতি হয়, আইসিসি থেকে আনা টাকায় সেই ঘাটতি মিটিয়ে দেব।” ট্যাক্স অ্যাকাউন্টেন্টকে এর পর তিনি নির্দেশ দেন, কী ভাবে খেলাটা বিদেশে করা গেলে আয়কর নিয়ে কোনও সমস্যা না হয় সেটা দেখতে হবে। একটা হতে পারে ওরা পুরো খরচা করল। তার পরে আমরা ওদের সেই খরচা মিটিয়ে দিলাম ইন্ডিয়ান কারেন্সিতে। আর একটা হতে পারে, শুরু থেকেই বিদেশি মুদ্রায় খরচ করা হল।
আইপিএল সেভেন শুরু ৯ এপ্রিল। শেষ ৩ জুন। গতকাল অবধি ফ্র্যাঞ্চাইজিরা জানতেন, অন্তত শেষের দিকের কিছু ম্যাচ ভারতে হবে। আজ শ্রীনির মডেলের কথা ছড়িয়ে পড়ার পর তাঁরা বলতে শুরু করেন, টিম গঠন যখন হয়েছিল তখন তো দক্ষিণ আফ্রিকার কথা ভেবে করা হয়নি। টুর্নামেন্ট যদি সরাতেই হয়, আরব আমিরশাহিতে নিয়ে যাওয়া হোক। অন্তত উইকেটের চরিত্রটা কাছাকাছি থাকবে। তা ছাড়া আমিরশাহি ভারতের অনেক কাছে। যাতায়াতেরও সুবিধে হবে। শ্রীনির তাতে সায় নেই। তিনি মনে করেন, আমিরশাহিতে খেলা হলে আবার ম্যাচ ফিক্সিং নিয়ে জোরদার লেখালেখি, টিভি অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যেতে পারে। সেটা নতুন উপদ্রব হয়ে দেখা দেবে। তার চেয়ে দেশ থেকে যত দূরে পারা যায় চলে যাওয়াই ভাল।
দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলা সরে যেতে পারে শুনে নাইটরা আবার নিজেদের শক্তি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকান উইকেটে এ দিনের ক্রয় করা দুই বিদেশি আন্দ্রে রাসেল এবং রায়ান টেন দুশখাতে দু’জনেই উপযোগী হয়ে দেখা দিতে পারেন। জাক কালিস তো আছেনই। পেস আক্রমণ দক্ষিণ আফ্রিকান কন্ডিশনের পক্ষে যথেষ্ট ভাল। মর্নি মর্কেল, উমেশ যাদব আর বিনয় কুমার। কিন্তু বাউন্সি উইকেটে খেলার মতো যথেষ্ট ব্যাটসম্যান তাদের নেই। মনে করা হচ্ছে গৌতম গম্ভীর রান না পেলে টিমের সমস্যা হয়ে যাবে। ইউসুফ পাঠান বা রবিন উথাপ্পা কেউই অতীতে দক্ষিণ আফ্রিকায় সফল নন। |
কলকাতা নাইট রাইডার্স
|
নতুন নাইট রাসেল |
মোট খরচ: ৫৯ কোটি
ব্যাটসম্যান: গৌতম গম্ভীর, রবিন উথাপ্পা, মণীশ পাণ্ডে, ক্রিস লিন, সূর্যকুমার যাদব।
ব্যাটসম্যান/উইকেটকিপার: মনবিন্দর সিংহ বিসলা, দেবব্রত দাস।
অলরাউন্ডার: জাক কালিস, ইউসুফ পাঠান, রায়ান টেন দুশখাতে, সাকিব আল হাসান, আন্দ্রে রাসেল, সায়ন শেখর মন্ডল।
স্পিনার: সুনীল নারিন, পীযূষ চাওলা, কুলদীপ যাদব।
পেসার: মর্নি মর্কেল, বিনয় কুমার, উমেশ যাদব, প্যাট কামিন্স, বীর প্রতাপ সিংহ। |
|
বলতে ভুলে গেছি, ঈশপের গল্পের প্রতীকী শেয়াল ছানার মতো বাংলা থেকে কিছু ক্রিকেটার এ দিন ঢোকানো হল। সায়নশেখর মণ্ডল, বীরপ্রতাপ সিংহ এবং দেবব্রত দাস। এই সান্ত্বনা পুরস্কারে কোথাও কারও মন ভিজল বলে মনে হয় না। এমনিতেও কেকেআর সমর্থকরা ক্রিকেট টিম যা হয়েছে তাতে ‘প্রেম দিবস’ উদযাপনের কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না। সিএবি-তে এ দিন তীব্র বিক্ষোভ হয়। ক্লাবহাউস গেটের সামনে ফ্ল্যাগ পোড়ানো হয় কেকেআরের। ‘নো লক্ষ্মী, নো কেকেআর’ লেখা ব্যানারও টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আবাসন ও যুবকল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস দুপুরে ফোনে বললেন, “কেকেআরের সঙ্গে এত বছর খুব ঘনিষ্ঠ, কিন্তু এটা ওদের জিজ্ঞেস করতেই হবে যে পীযূষ চাওলাকে ৪ কোটি ২৫ লক্ষ টাকায় যদি নিতে পারে, তা হলে একই টাকায় শামিকে ছেড়ে দিল কেন? খুব অবাক লাগছে।”
মনে হচ্ছে আন্দ্রে রাসেলকে যদি সত্যিই ভ্যালেন্টাইন হিসেবে উদিত হতে হয়, নাইট সমর্থকদের বৈশাখ মাসের আগে ‘প্রেম দিবস’ পালন করা ছাড়া কোনও রাস্তা খোলা নেই। |