সম্পাদকীয় ১...
তৃতীয় পানিপথ
প্রদীপ ভট্টাচার্য মহাশয় পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ হইতে বিদায় লইয়া প্রমাণ করিলেন যে, তিনি প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। ২০১১ সালের জুন মাসে এই দায়িত্ব হাতে পাইবার পর হইতে দীর্ঘ প্রায় তিন বছরের মধ্যে দলনায়ক হিসাবে তিনি যদি কোনও যথার্থ কাজ করিয়া থাকেন, তবে মানিতেই হইবে প্রদীপবাবু তাহা সযত্নে এবং সাফল্যের সহিত সম্পূর্ণ লুকাইয়া রাখিয়াছেন। এমনকী গত সেপ্টেম্বর মাসে রাজ্য মন্ত্রিসভা হইতে কংগ্রেসের বিদায়ের পরেও দলের রাজনৈতিক অস্তিত্ব আতসকাচ দিয়াই খুঁজিতে হইয়াছে এবং যদি বা ইতস্তত কিছু নড়াচড়া দেখা গিয়াছে, তাহার সহিত রাজ্য সভাপতির কোনও সম্পর্ক ছিল না। প্রদীপ ভট্টাচার্য সম্পর্কে স্বচ্ছন্দে বলা চলে, তিনি আসিলেন, দেখিলেন এবং চলিয়া গেলেন। দলীয় হাই কমান্ড কেন যে তাঁহাকে রাজ্য শাখার সভাপতির পদে বসাইয়াছিলেন এবং কোন কৃতিত্বের পুরস্কার হিসাবে এত দিন এই পদে রাখিয়া দিলেন, সেই রহস্যের সমাধান কোনও দিন হইবার নয়। রহস্য হিসাবে বার্মুডা ট্রায়াঙ্গল ইহার তুলনায় নেহাত শিশু।
তবু, অবশেষে হাই কমান্ড নড়িলেন। কংগ্রেস নামক দলটির নায়কনায়িকারা ইদানীং সমস্ত বিষয়ে যে অবিশ্বাস্য এবং কল্পনাতীত অপদার্থতার ধারাবাহিক প্রমাণ পেশ করিয়া চলিয়াছেন, অন্তত এ ক্ষেত্রে তাহার একটি ব্যতিক্রম ঘটিল। হয়তো রাজ্যসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের খাঁড়ার ঘা-টি কংগ্রেসের পক্ষেও দুঃসহ হইয়াছে। লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিপর্বের কার্যত শেষলগ্নে রাজ্য কংগ্রেস সভাপতির পদে অধীর চৌধুরীর অভিষেক অন্তত এই সংকেত দিয়াছে, যে হাই কমান্ড পশ্চিমবঙ্গ নামক রাজ্যটির অস্তিত্ব সম্বন্ধে সম্পূর্ণ অচেতন নহেন। ইহাতে মৃতদেহে জীবনসঞ্চার ঘটিবে কি না তাহা ক্রমশ প্রকাশ্য, কিন্তু নেতৃপদের জন্য রাজ্য কংগ্রেসের ভাণ্ডারে আপাতত অধীরবাবুর তুলনায় যোগ্যতর প্রার্থী নাই। তিনি সমস্ত রাজ্যের নেতা নহেন, বহরমপুর তথা মুর্শিদাবাদই তাঁহার ঘাঁটি এবং তাঁহার প্রতিপত্তি সেই ঘাঁটিতেই সীমাবদ্ধ। নূতন ভূমিকায় সাফল্যের জন্য তাঁহাকে জেলা হইতে রাজ্যে উত্তীর্ণ হইতে হইবে। তাহা কঠিন কাজ। কিন্তু কঠিন কাজ করিবার সামর্থ্যের প্রমাণ তিনি ধারাবাহিক ভাবে দিয়াছেন। প্রথমে বামফ্রন্ট বেং তাহার পরে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রবল প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আপন ঘাঁটি দখলে রাখিবার ইতিহাসকে তিনি যদি আপন মনে প্রথম এবং দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধের সহিত তুলনা করেন, দোষ দেওয়া শক্ত। এ বার তাঁহার সম্মুখে তৃতীয় পানিপথ।
নূতন পথও বটে। লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেসের জোট বা অন্তত কার্যকর বোঝাপড়া দুই দলের পক্ষেই প্রয়োজনীয়, ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বামপন্থীদের সুবিধা। এই সহজ সত্যটির কারণেই বামফ্রন্টের নেতারা সাধ্যমত চেষ্টা করিতেছেন, যাহাতে জোট না হয়। শেষ অবধি বোঝাপড়া হওয়া না হওয়া অবশ্য তাঁহাদের চেষ্টার উপর নির্ভর করিবে না, নির্ভর করিবে কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেসের দর কষাকষির উপর। সেই প্রক্রিয়ায় অধীর চৌধুরীর ‘লড়াকু’ সত্তা কংগ্রেসের পক্ষে সুবিধাজনক হইবে কি না, তাঁহার সভাপতি হইবার ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহিত বোঝাপড়ার সম্ভাবনা ক্ষীণতর হইল কি না, সে সকল জল্পনা অনেকাংশেই অপ্রাসঙ্গিক, কারণ রাজ্য কংগ্রেসের মাথায় যিনিই অধিষ্ঠিত থাকুন, তাঁহার মাথায় আছেন এবং থাকিবেন হাই কমান্ড, শেষ অবধি দর কষাকষিতে দলের নীতি ও অবস্থান রাজধানী হইতেই নিয়ন্ত্রিত হইবে। সেই দিক হইতে দেখিলে, অধীর চৌধুরীকে হয়তো দিল্লির অভিভাবকদের সহিতও ‘লড়াই’ করিতে হইবে। স্পষ্টতই, এই নূতন পর্বে তাঁহার রাজনৈতিক বিচক্ষণতা এবং কূটনৈতিক বুদ্ধির পরীক্ষা হইবে। অগ্নিপরীক্ষা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.