|
|
|
|
তাণ্ডবে মাথা হেঁট, একমত সব দলের নেতারাই
জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি
১৩ ফেব্রুয়ারি |
জওহরলাল নেহরু তখন প্রধানমন্ত্রী। বাম সাংসদ হীরেন মুখোপাধ্যায় এক বার সংসদে বলেছিলেন, “এই কক্ষে বিরোধীদের মতামতকে প্রধানমন্ত্রী অগ্রাহ্য করছেন। মনে হচ্ছে সংসদ নয়, আমরা যেন গ্যাস চেম্বারে বাস করছি!”
আজ সংসদ কক্ষে মরিচ-গ্যাস ছড়িয়ে এক সাংসদই যে ভাবে পৃথক তেলঙ্গানা রাজ্য তৈরির প্রতিবাদ করেছেন, তা দেখে অরুণ জেটলি থেকে কমল নাথ সব দলেরই বর্ষীয়ান নেতাদের মুখে ফিরে এল সেই মন্তব্য: ‘এ তো সংসদকে গ্যাস চেম্বারে পরিণত করার সামিল!’
তফাৎ এটাই যে, গণতন্ত্রকে হত্যা করার অভিযোগ তুলে হীরেনবাবু রূপকার্থে সংসদকে গ্যাস চেম্বারের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। আর আজ সংসদ যেন সত্যি সত্যিই পরিণত হল গ্যাস চেম্বারে। যা দেখে লালকৃষ্ণ আডবাণী বলেছেন, “এত বছর সংসদে আছি, এমন ঘটনা কখনও দেখিনি।” সিপিআইয়ের গুরুদাস দাশগুপ্ত থেকে তৃণমূলের সৌগত রায় সকলেই বলছেন, সংসদের গরিমা ভূলুণ্ঠিত। |
|
চোখের জলে। রাজাগোপাল-কাণ্ডের পরে এক সাংসদ। ছবি: পিটিআই। |
প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সংসদ আগেও অনেক দেখেছে। প্রণববাবু যখন অর্থমন্ত্রী, তখন মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিরোধীরা এক বার পেঁয়াজের মালা নিয়ে সংসদ কক্ষে এসেছিলেন। সেই মালা প্রণববাবুকে পরানোর চেষ্টাও হয়েছিল। তাতে ব্যর্থ হয়ে অর্থমন্ত্রীর টেবিলের উপরে মালাটি রেখেই পিছু হটেন বিরোধীরা। প্রণববাবু কিন্তু চটে যাননি। তির্যক হাসি দিয়েই মোকাবিলা করেছিলেন বিরোধী আক্রমণের।
আগ্নেয়াস্ত্রের উপস্থিতিও দেখেছে লোকসভা। ৯০-এর দশকে পিস্তল হাতে কক্ষে ঢুকে পড়েছিলেন বিহারের সাংসদ আনন্দমোহন সিংহ। গুলি না-চালালেও পিস্তল উঁচিয়ে ভয় দেখিয়েছিলেন তিনি। যার জেরে কক্ষ থেকে বহিষ্কার করা হয় আনন্দমোহনকে। প্রাক্তন সাংসদ লাভলি সিংহের স্বামী আনন্দমোহনের বিরুদ্ধে অবশ্য একাধিক অপরাধের অভিযোগ ছিল। তিনি জেলও খেটেছেন দীর্ঘদিন।
২০০৮-এ প্রথম ইউপিএ সরকারের উপর আস্থা প্রস্তাব নিয়ে বিতর্কের সময়ও এক নজিরবিহীন দৃশ্য দেখেছিল লোকসভা। তাঁদের টাকা দিয়ে কেনার চেষ্টা চলছে অভিযোগ করে প্রমাণ হিসেবে প্রায় এক কোটি টাকা সভার টেবিলে ঢেলে দিয়েছিলেন কয়েক জন বিরোধী সাংসদ। তা নিয়ে হইচই হয়েছিল বিস্তর। মামলা গড়িয়েছিল আদালত পর্যন্ত।
কিন্তু আজকের ঘটনা বোধহয় সব ইতিহাসই ছাপিয়ে গিয়েছে। এক জন সাংসদ যে ভাবে মরিচ-গ্যাসের ক্যান নিয়ে সভায় ঢুকে তা ব্যবহার করলেন, তাতে শাসক দলের শীর্ষ নেতাদের মাথা হেঁট।
সংসদের লবিও আজ মুখর ছিল গ্যাস-কাণ্ড নিয়ে আলোচনাতেই। অন্ধ্রপ্রদেশের সাংসদ তথা কংগ্রেসের ডেপুটি চিফ হুইপ মধু গৌর অক্সি বলেন, “লোকটা যে হাঙ্গামা করবে এমন আশঙ্কা কয়েক দিন ধরেই করছিলাম।” ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, আশঙ্কাই যদি থাকে, তা হলে তা রোখার ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন? নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ঘাটতি রয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। |
|
নারাসারাওপেট মোদুগুলা বেণুগোপাল রেড্ডি |
সংসদের নিরাপত্তা বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর নীলাদ্রি সরকার বলেন “এই ঘটনা অভিনব। এখন নিরাপত্তা আরও কী ভাবে বাড়ানো যায়, তা স্পিকার ও চেয়ারম্যান শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করবেন।”
আসলে প্রশ্ন এখন একটাই। সাংসদরাও কি এ বার তল্লাশির আওতায় আসবেন? সাংসদদের সম্মান রক্ষার্থেই এখন তাঁদের খুঁটিয়ে তল্লাশি করা হয় না। দেখা হয় না পকেটে কী নিয়ে আসছেন তাঁরা। কিন্তু অনেকেই বলছেন, আজকের ঘটনার পরে সেই সম্মান আর রক্ষা করা যাবে কি না, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সংসদের পাশাপাশি গণতন্ত্রের আর এক পীঠস্থান বিধানসভাগুলিতেও দেখা যাচ্ছে একই রকম অবক্ষয়ের ছবি। দিল্লি বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন শুরু হয়েছে আজ থেকে। শুরুর দিনেই তুমুল হাঙ্গামার সাক্ষী রইল বিধানসভা। সেখানে আইনমন্ত্রী সোমনাথ ভারতীর ইস্তফার দাবিতে এক কংগ্রেস বিধায়ক ধেয়ে গেলেন স্পিকারের আসনের দিকে। স্পিকার এবং মুখ্যমন্ত্রীর সামনে থাকা মাইকও ভেঙে দিলেন তিনি। ঘটনার জেরে ভেস্তে গেল গোটা দিনের অধিবেশন।
দু’দিন আগে জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় চেয়ার ছুড়ে তাণ্ডব করেছেন বিরোধী পিডিপি বিধায়করা। বিহার এবং উত্তরপ্রদেশ বিধানসভাতেও মাইক ছোড়াছুড়ির ঘটনা দেখা গিয়েছে অনেক বারই। সেখানে অধিবেশন কক্ষেই পরস্পরের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়তে পিছপা হননি বাহুবলী বিধায়কেরা। সাম্প্রতিক অতীতে ভাঙচুর এমনকী মারামারির ঘটনা দেখেছে বাংলার বিধানসভাও।
ক্রমান্বয়ে এই সব ঘটনার ফলে বৃহত্তম গণতন্ত্র ভারতের ভাবমূর্তি যে বিশ্ব দরবারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা এক বাক্যে মেনে নিচ্ছেন প্রায় সব দলের নেতারাই। এনসিপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শরদ পওয়ার বলেন, “আমরা কোন পথে চলেছি, সেটা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।” তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য মন্তব্য, “কংগ্রেস যে ভাবে অসংসদীয় এবং অবৈধ উপায়ে বিক্ষোভকারীদের ঠেকিয়ে বিলটি পেশ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে, সেটাও কিন্তু নিন্দনীয়। আসলে মুদ্রার দু’টি পিঠ থাকে। শুধু একটা দিক দেখলে সমস্যার সমাধান হবে না।”
শুধু আলোচনার পরিসর না-পেয়েই একদা সংসদকে হিটলারের গ্যাস চেম্বারের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন হীরেন মুখোপাধ্যায়। আজ এই পেশি-আস্ফালন দেখলে কী বলতেন!
|
পেপার স্প্রে |
|
একটি রাসায়নিক।
নাম ক্যাপসাইসিন। ইথাইল অ্যালকোহলের সাহায্যে লঙ্কা থেকে এই ক্যাপসাইসিনের নির্যাস বের করা হয়। রাখা হয় স্প্রে করা যায়, এমন পাত্রে।
কাজ
এই স্প্রে-র সামনে পড়লে রক্ষে নেই। চোখ জ্বালা, অসহ্য যন্ত্রণা। চোখ থেকে জল ঝরতে ঝরতে সাময়িক অন্ধত্ব পর্যন্ত হতে পারে।
ব্যবহার
ইউরোপ, আমেরিকায় অনেক মহিলাই আত্মরক্ষার জন্য ব্যাগে রাখেন। বহু দেশে সংঘর্ষ রুখতে পুলিশও পেপার স্প্রে ব্যবহার করে। |
|
লাগরাপটি রাজাগোপাল |
• বিজয়ওয়াড়ার কংগ্রেস সাংসদ। বয়স ৪৯ বছর।
• মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার।
• প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা পি উপেন্দ্রর জামাই।
• দেশের ধনী সাংসদদের এক জন। অন্ধ্রের ধনীতম।
• গত লোকসভা ভোটের হলফনামা অনুযায়ী সম্পত্তি ২৯৯ কোটি।
• তেলঙ্গানার প্রতিবাদে সবার আগে ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন।
• কংগ্রেসের অভিযোগ, বিরোধিতা ব্যবসার স্বার্থে। |
|
সকাল
১০:৩৫ বিল পেশের প্রস্তুতি
১১:০০ হট্টগোলে সংসদ মুলতুবি
দুপুর
১২:০০ সভা বসতেই হট্টগোল, বিল পেশ শিন্দের
১২:০২ মাইক উপড়ে নিলেন বেণুগোপাল
১২:০২ পেপার স্প্রে ছুড়লেন রাজাগোপাল
১২:০৩ সভা মুলতুবি। আহত সাংসদরা হাসপাতালে
১:০৮ স্প্রে-র জ্বালায় বাড়ি গেলেন স্পিকারও
২:০০ সংসদ বসতে ফের হট্টগোল
২:০৫ ১৬ সাংসদ বহিষ্কৃত
৩:৩০ বিরোধীদের দাবি, বিল পেশ হয়নি। স্পিকার বললেন, হয়েছে
বিকেল
৫:০০ সোমবার বিল পাশের চেষ্টা, ইঙ্গিত সরকারের |
|
|
|
|
|
|