পূর্বাভাস ছিলই। আর সেটা সত্যি করেই কার্যত বন্ধের চেহারা নিয়েছে অর্ধেক ব্রিটেন। ঝড়-বৃষ্টি-বন্যা-তুষার। গত কয়েক দিন ধরে মাত্র এই চারটে শব্দের সঙ্গেই যেন নিজেদের খাপ খাওয়াতে শুরু করেছেন ব্রিটেনের বাসিন্দারা। কিন্তু কালকের ঝড়ের পরে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নিয়েছে। এরই মধ্যে আবহাওয়া দফতরের সতর্কবার্তা, আগামী কাল ও পরশু প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে পশ্চিম ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড আর উত্তর আয়ার্ল্যান্ডে। এতটাই যে আগামী দু’দিনেই গোটা মাসের বর্ষণের কোটা পূর্ণ হয়ে যেতে পারে এলাকাগুলিতে। |
টেমসের জলোচ্ছ্বাসে ভাঙন ধরেছে পাড়ে। বন্যা প্রতিরোধে তাই বালির বস্তাই সম্বল। ইংল্যান্ডের এগহ্যামে। |
ফলে সরকার আর প্রশাসনের দুশ্চিন্তা বেড়েই চলেছে। বৃষ্টির সঙ্গে দেশের নানা জায়গায় চলছে তুষারপাত। তার মধ্যেই ঝড়-বৃষ্টিতে ঘরবন্দি মানুষ নিজেদের গরম রাখার সুযোগটুকুও পাচ্ছেন না। কারণ কালকের ঝড়ের ফলে ওয়েলস আর উত্তর-পশ্চিম ইংল্যান্ড সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। শুধুমাত্র ওয়েলসেই নতুন করে প্রায় আশি হাজার বাড়ি বিদ্যুৎহীন। ফলে জ্বালানো যাচ্ছে না রুম হিটারও। কার্ডিফ, ম্যানচেস্টার, ব্ল্যাকপুলের অবস্থা শোচনীয় বলে খবর। জায়গায় জায়গায় উপড়ে পড়েছে গাছ। কোনও কোনও বাড়ির ছাদ উড়ে গিয়েছে। তবে এর উল্টো ছবিটাও আছে। কারও কারও আবার বাড়ির সামনের বাগান পুরোপুরি জলে ডুবে যাওয়ায় সেখানে আস্তানা গেড়েছে রাজহাঁস।
সরকারি সাহায্যের সমালোচনা নিয়ে আজও চর্চা হয়েছে ব্রিটেনের নানা জায়গায়। তবে তারই মধ্যে তাঁর সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। পুলিশের সঙ্গে উদ্ধার কাজে হাত লাগিয়েছে সেনা ও নৌসেনা। আজ সকাল থেকে ঝোড়ো হাওয়ার দাপট কমলেও কাল থেকে প্রবল বৃষ্টি হবে বলে আগাম জানিয়ে রেখেছে আবহাওয়া দফতর। বন্যা সতর্কতা জারি থাকছে বার্কশায়ার, উইল্টশায়ার আর সমারসেটের জন্য। গত ষাট বছরের মধ্যে টেমস নদীর জলস্তর সব চেয়ে বেশি উঠতে পারে বলে সতর্ক করেছেন আবহবিদেরা। ইংল্যান্ড আর ওয়েলসের জলমগ্ন এলাকাগুলিতে ড্রেনের জল উপচে রাস্তায় চলে আসায় নানা রকম অসুখের আশঙ্কা করছেন অনেকে।
সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষ এখন প্রবল আতঙ্কে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার জন্য ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনাও। উইল্টশায়ারে তড়িদাহত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধের। ব্রিস্টলে লরি উল্টে আহত হয়েছেন এক চালক। ম্যাঞ্চেস্টারে ঝড়ে কার্যত উড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন এক ৪৪ বছরের মহিলা। মাথায় গুরুতর আঘাত নিয়ে আপাতত হাসপাতালে ভর্তি তিনি। |
এই অবস্থায় রেল পরিষেবা স্তব্ধ গোটা ব্রিটেন জুড়ে। দেশের পশ্চিমাংশ পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। লন্ডন থেকে কার্ডিফের রেল পরিষেবা বাতিল করা হয়েছে। গোটা ইংল্যান্ডে একের পর এক ট্রেন বাতিল হচ্ছে। স্টেশনগুলিতে উপচে পড়ছে যাত্রীদের ভিড়। কিন্তু রেল দফতর পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, মানুষের সুরক্ষার স্বার্থেই পরিষেবা বন্ধ রাখতে এক রকম বাধ্য হচ্ছে তারা। রাস্তাতেও গাড়ি চলছে ধীর গতিতে। ফলে কাজের দিনে যানজটে আটকে পড়ে বাড়ি ফিরতে নাকাল হচ্ছেন মানুষ।
ব্রিটেনে ঘরবন্দি ফুটবলপ্রেমীদের জন্যও সময়টা একেবারেই ভাল যাচ্ছে না। খারাপ আবহাওয়ার জন্য ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের একের পর ম্যাচ বাতিল হচ্ছে। ম্যানচেস্টার সিটি-সান্ডারল্যান্ড আর এভারটন-ক্রিস্টাল প্যালেসের ম্যাচ বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ক্লাব কর্তারা জানাচ্ছেন, দর্শকদের অসুবিধার কথা মাথায় রেখে পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করেই ম্যাচগুলি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ম্যানচেস্টার সিটির অধিনায়ক তো আবার এ নিয়ে টুইটও করে ফেলেছেন। ভিনসেন্ট কোম্পানি লিখেছেন, “খেলা বাতিল। সবাই বাড়িতে থাকুন। আবহাওয়াটা ভয়ঙ্কর।”
|
ত্রস্ত আমেরিকা
সংবাদ সংস্থা • নিউ ইয়র্ক
১৩ ফেব্রুয়ারি |
ঝড়ের দাপটে কাবু আমেরিকাও। উত্তর-পূর্ব আমেরিকার বড় অংশ ঝড় ও তুষারপাতে বিপর্যস্ত। টেক্সাস থেকে মেইন, ওয়াশিংটন থেকে বস্টন। ২২টি রাজ্যে প্রায় পাঁচ লাখ বাড়িতে আলো নেই। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, নিউ ইয়র্কের হাডসন উপত্যকা আর নিউ ইংল্যান্ডে ১০ থেকে ২০ ইঞ্চি পুরু বরফ জমতে পারে। এই দুর্যোগে মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। টেক্সাসে বরফে পিছলে অ্যাম্বুল্যান্স উল্টে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। বিমান পরিষেবাও মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। আজ প্রায় তিন হাজার সাতশো উড়ান বাতিল করেছে মার্কিন বিমান সংস্থা। তবে সব চেয়ে খারাপ পূর্বাভাস রয়েছে আটলান্টা শহরের জন্য। ১৯৭৩ সালের পর এই প্রথম সাঙ্ঘাতিক তুষার-ঝড় আছড়ে পড়তে চলেছে সেখানে। |