অন্য কয়েকটি প্রেমের গল্প |
চেনা ছবি। অচেনা চিত্রনাট্য। প্রেমদিবসে ছ’টি বহুচর্চিত রোম্যান্টিক সিনেমার রিমেক। লিখছেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত। |
সেই সংলাপটা আজও অনেকের কানে বাজে।
বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের ছবি ‘স্বপ্নের দিন’-এ খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে প্রসেনজিৎ। ছাদ বলতে পূর্ণিমার আকাশ। কানে ভেসে আসে সেই সংলাপ, ‘ভালবাসা মানে মন কেমন করা’। মন কেমন করা। ভাল
না লাগা। আবার ভাল লাগাও। এই দোলাচলের মধ্য দিয়েই তো সম্পর্কের ভাঙা গড়া। তা সে বাস্তবে হোক বা পর্দায়।
আর এই সম্পর্কের নানা রঙের তুলির টানেই তো ক্লান্তিহীন ভাবে বলিউড সিনেমা বানিয়েই চলেছে। রোম্যান্টিক কমেডি থেকে পরকীয়া প্রেম, সমকামিতা থেকে প্রতিশ্রুতি-ফোবিয়া সব সম্পর্কই আজ ক্যামেরাবন্দি।
কেমন হয় যদি কিছু ছবি ফিরে দেখা যায়? যদি গল্পগুলো একটু পাল্টে নতুন ভাবে ভাবা যায়... সম্পর্কগুলোকে আতসকাচের নীচে আবারও ফেলে দেখা হয়... সময়ের আঁচে সেঁকে যাওয়া চিত্রনাট্যগুলোকে যদি আরও একবার পড়ে দেখা যায়... পুরনোকে অস্বীকার না করেও তো নতুন কিছু খুঁজে পাওয়ার চাহিদা থাকতেই পারে...
আজ যে ভ্যালেনটাইন্স ডে। |
|
|
|
নিঃশব্দ |
লুটেরা |
‘দ্য লাঞ্চ বক্স’ |
|
যেখানে শুধু শব্দের মন বোঝে শব্দ: ‘দ্য লাঞ্চবক্স’
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় |
সিনেমাটা ভাল লেগেছিল। কিন্তু দেখে একটা কথা বারবার মনে হয়েছিল যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন, কোনও ভদ্রলোক কি এটা দিনের পর দিন বুঝতে পারবেন না যে, তিনি ভুল ডাব্বার টিফিন খাচ্ছেন? ছবির শেষটাও আমার বেশ কাঁচা লেগেছিল। তাই ভাবলাম কেমন হয় যদি সিনেমাটা একটু অন্য স্বাদে বানানো হয়? হয়তো একদিন ডাব্বাতে পাঠানো ইরফানের চিঠি
পড়ে যায় নিমরতের স্বামীর হাতে। তা দেখে খোঁজ করতে শুরু করেন কে চিঠি পাঠাচ্ছে। খোঁজ করতে করতে শেষ পর্যন্ত ইরফানের অফিসে পৌঁছান। সেখানে তখন লাঞ্চটাইম। ইরফান আর নওয়াজ বসে লাঞ্চ করছেন। ভদ্রলোক ‘এক্সকিউজ মি’ বলে নওয়াজকে অনুরোধে করেন, যদি তাঁরা একান্তে কথা বলতে পারেন। নওয়াজ রাজি
হয়ে যান।
পরের দৃশ্যে দু’জন টেবিলের দু’দিকে। সামনে দু’টো ডাব্বা। নিমরতের স্বামী খেতে খেতে বলেন, ডাব্বা ভর্তি খাবার যদি ইরফানের কাছে আসে, তা হলে ক্ষতি নেই। কিন্তু ডাব্বাটা যেন খালি ফেরত আসে। ইরফানের একাকীত্ব কাটানোর জন্য তিনি ডাব্বা শেয়ার করতে রাজি আছেন। আলু-গোলি অবধি শেয়ার করা যায়। কিন্তু তার বেশি নয়।
শেষ দৃশ্যে নিমরত রেডি হচ্ছেন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টিপ পরছেন। ইরফানের সঙ্গে প্রথম বার দেখা করতে যাবেন বলে। ঠিক সে সময় কলিং বেল।
দরজা খোলা।
ছবি শেষ।
যে স্ক্রিন সম্পর্ককে কোনও দিন পাল্টাতে চাইব না: ‘অমর প্রেম’ অনেস্ট, পিওর আর ক্লাসিক। মেজাজটা আর বেটার করা যাবে না।
ভালবাসা=আস্থা |
যেখানে প্রেমের জন্য বেঁচে থাকা, মরে যাওয়া: ‘লুটেরা’
বেদব্রত পাইন |
ছবিটা দেখে মনে হয়েছিল সব চরিত্রই কেমন যেন ভাগ্যের উপর সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভরশীল। তাই প্লটটা খানিকটা প্রেডিক্টেবল মনে হয়েছিল। আমি পাখির চরিত্রে সোনাক্ষী-র বদলে চাইব প্রিয়ঙ্কা চোপড়া থাকুক। রণবীর সিংহের বদলে রণবীর কপূর। আর একটা নতুন চরিত্র আনতে চাইব। সেটাতে থাকবে পরমব্রত। পাখির বাবার মৃত্যু পর্যন্ত গল্পটা একই থাকবে। তখন পাখিরা প্রায় সর্বস্বান্ত। এই সময় দেখানো যে পাখি পড়াশোনা করে পুলিশে যোগ দিয়েছে। একমাত্র উদ্দেশ্য হল, বরুণ (মানে রণবীর)কে খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া। প্রতিশোধ নিতেই হবে। সেটা করার জন্য পুলিশের একজনকে ‘মোল’ হিসেবে ব্যবহার করবে। এই স্পাইয়ের রোলেই থাকবে পরমব্রত। কিন্তু সমস্যা শুরু হয়, যখন পরমব্রত চেষ্টা করে রণবীরকে ধরে নিজেই সব ক্রেডিট নিতে। একজন মহিলা তার থেকে ভাল কাজ করে ক্রেডিট নিয়ে যাবে এটা ওর সহ্য হয় না।
এ দিকে রণবীর একবার ফেরত আসে গ্রামে। খবর নিতে যে, প্রিয়ঙ্কার হল কী? সে জানতে পারে যে, প্রিয়ঙ্কা এখন পুলিশে চাকরি করে। পরমব্রতর সঙ্গে ওর ভাব হয়। ও জানে না যে পরমব্রত স্পাইয়ের ভূমিকায়। কিন্তু বোঝে যে, পরমব্রত চায় প্রিয়ঙ্কাকে খুন করতে। এ দিকে প্রিয়ঙ্কা বুঝতে পারে যে পরমব্রতের আসল উদ্দেশ্য হল ফলস এনকাউন্টারে রণবীরকে খুন করা। যাতে রণবীরকে ধরার সব ক্রেডিটটাই ও নিজেই নিতে পারে।
এটা জানতে পেরে হঠাৎ প্রিয়ঙ্কার প্রতিশোধস্পৃহাটাই উধাও। বাবার মৃত্যুর দুঃখ আর বিশ্বাসঘাতকতা সব কিছু ম্লান হয়ে যায় প্রেমের সামনে। ও ছুটে যায় রণবীরকে বাঁচাতে। আর ও দিকে রণবীর চেষ্টা করে প্রিয়ঙ্কাকে বাঁচাতে। শেষ পর্যন্ত কি দু’জনে তা পারবে?
যে স্ক্রিন সম্পর্ককে কোনও দিন পাল্টাতে চাইব না ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’ মধুর গোপন প্রেমের স্বাদই আলাদা। প্রথম দেখার আলগা প্রেম তো নয়। দু’জনের অনেক কিছু হারানোর ছিল। সেখানেই রোম্যান্স।
ভালবাসা= স্বার্থপরতা, কখনও সব দিয়ে নিজের আনন্দ পাওয়া, কখনও সব নিয়েও। |
যেখানে ভালবাসা মানে ফিরে যাওয়া: ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’
অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী |
অয়ন মুখোপাধ্যায়ের ছবির গল্পটা সাধারণ। একটা ‘নার্ড’য়ের সঙ্গে একটা ছেলের দেখা। ভাল লাগা। তার পর বিচ্ছেদ। এবং শেষে আবার প্রেম।
আমার চিত্রনাট্যে পাহাড়ে গিয়েই দু’জনের আলাপ। দীপিকার ‘নার্ডি’ লুকটাই থাকত। ঠিক সময় ভুল জিনিস করায় অভ্যস্ত এক মেয়ে। হয়তো পাহাড়ের ঝুপড়িতে চা খেতে গিয়ে ভাঁড়টাই ভেঙে ফেলল। আর চা চলকে পড়ল রণবীরের টি-শার্ট-য়ে। রণবীরের জীবনে ওর প্রেজেন্সটা অনেকটা ঝোড়ো হাওয়ার মতো। পড়ন্ত সিল্যুয়েটে ওর মুখটা দেখে রণবীরের ভাল লাগে।
কিন্তু এই ভাল লাগাটা ওই পর্যন্তই। ছুটি কাটিয়ে রণবীর, দীপিকা নিজেদের জীবনে ফেরত আসে। রণবীর ওর পেশাদারি জীবনে সাফল্য পায়। আজ নিউ ইয়র্ক তো কাল টোকিয়ো করতে থাকে। কিন্তু ভোলে না দীপিকাকে। চাকরিজীবন রণবীরকে পাল্টে দেয়। তার বিয়ে হয় এক ধনী পরিবারে। স্ত্রী পাঁচতারা হোটেলে বসে রণবীরকে ওয়াইন ঢেলে দেয়। এই জীবন...
কিছু দিন এ সবে ওর দমবন্ধ। রণবীর পাল্টাতে থাকে। ও মিস করে দীপিকার সঙ্গে ভাঁড়ে চা খাওয়া। সেই অগোছালো চুল। আর সংস্কারকে তুড়ি মেরে মানুষের সঙ্গে ভিড়ে মিশে যাওয়া। হঠাৎ একদিন ফেসবুকের মাধ্যমে দীপিকার সঙ্গে আবার যোগাযোগ। দীপিকা পাল্টে গিয়েছে। চোখে চশমা নেই। চুলটা সিল্কি। পেশাদার জীবনেও সে সফল। রণবীর এ দিকে অনেকটাই এলোমেলো। চুল উস্কোখুস্কো। জামার বোতামগুলো ভুল করে লাগানো। প্রেম নয়, অদ্ভুত এক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে দীপিকার সঙ্গে রণবীর। দীপিকাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায় সেই সময়ে, যখন সে ব্যাকরণ না মেনে হাঁটতে ভালবাসত। কিন্তু রণবীর পারবে কি দীপিকাকে পাল্টাতে?
পুনশ্চ: বাস্তব জীবনেও কি রণবীর-দীপিকা আবার নিজেদের হারিয়ে যাওয়া সম্পর্কের নতুন মানে খুঁজে পাবে?
যে স্ক্রিন-সম্পর্ককে কোনও দিন পাল্টাতে চাইব না ‘সদমা’ ভালবাসার উত্তরণ, হঠাৎ পাল্টে যাওয়া, সেই পুরনো ভালবাসা ফিরে পাওয়ার আকুতি এত গভীর এবং জটিল অনুভূতিকে এত সহজ এবং স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে কেউ দেখাননি। আবেগহীন মানুষকেও এটা নাড়া দেবে।
ভালবাসা= হটাৎ ঘন কালো মেঘ, আবার হঠাৎ বৃষ্টির ছাঁট।
|
|
|
|
ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি |
‘শুদ্ধ দেশি রোম্যান্স’ |
‘দেড় ইশকিয়া’ |
|
যেখানে ভালবাসা মানে না বয়সের পার্থক্য: ‘নিঃশব্দ’
কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় |
‘নিঃশব্দ’ বা ‘দ্য লাস্ট ট্যাঙ্গো ইন প্যারিস’ একটা ম্যাচিওর্ড মানুষের সঙ্গে এক কমবয়সি মানুষের সম্পর্কের গল্প। কিন্তু রামগোপাল বর্মা ফিল্মটাকে একটা থ্রিলারের মতো করে দেখেছেন।
আমি ছবিটা বানালে সম্পর্কের গভীরতায় ঢুকতাম। অনেকের জীবনেই বার্ধক্যজনিত একটা নিরাপত্তাহীনতা কাজ করে। মৃত্যু ক্রমশ এগিয়ে আসছে। সেখানে দাঁড়িয়ে নতুন করে একটা প্রেমে পড়ার গল্প। পুরুষটির ক্ষেত্রে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার ভয় দানা বাঁধতে থাকে মনে। লাইফ-ইনস্টিঙ্কটগুলো ততই তীব্র হয়ে ওঠে। অবসাদের একটা বিরাট জায়গা থাকে। বয়সটা চলে যায় ডিনায়াল মোডে। বৈবাহিক যে সম্পর্কটা হয়তো প্রেম দিয়ে শুরু হয়েছে, সেটা স্রেফ সুবিধেজনক সহাবস্থানে পরিণত হয়। তখন লাভ, লাস্ট বা ইনফ্যাচুয়েশন কিছুই আর থাকে না। যা পড়ে থাকে, তা হল সুখসুবিধে। আর সে সময় একটা তাগিদ অনুভব করে এই কনভিনিয়েন্সের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসার। এটা একটা আর্বান ইন্টেলেকচুয়াল ক্রাইসিস। এ দিকে অল্পবয়সি মেয়েটির ক্ষেত্রে হয়তো তার ছোটবেলার একটা মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা থাকতে পারে। যে কারণে সে ভোগে একটা ‘ডিসপ্লেসড্ ফোবিয়া’ থেকে। সেই মুহূর্তে সে চায় একটা নিরাপদ সম্পর্ক।
ওদের দু’জনের আলাপ হয়। তৈরি হয় একটা সম্পর্ক। যা কেবল মাত্র শরীরকে ভিত্তি করে নয়। একটা পারস্পরিক নির্ভরতা। রোম্যান্স। হয়তো সারা দিন শুধুমাত্র বসে কথা বলা...এই টুকুই। এই সম্পর্কের পরিণতি কি শুধু বিয়ের পিঁড়িতেই সম্ভব?
আমি বলব ‘না’। স্রেফ দর্শককে খুশি করার জন্য এমন একটা এন্ডিং চাইব না। ওরা দু’জনেই হয়তো সমাজের কাছে ব্রাত্য হয়ে যাবে। এটাই এন্ডিং।
যে স্ক্রিন-সম্পর্ককে পাল্টাতে চাইব না ‘ওয়েক আপ সিড’ কারণ যা যা দেখানো হয়েছে, আমি ঠিক তাই দেখাতে চাইতাম।
ভালবাসা= পাল্টে যাওয়া দৃষ্টিভঙ্গি। |
যেখানে সম্পর্ক মানে বিয়ে, রেজিস্ট্রি নয়: ‘শুদ্ধ দেশি রোম্যান্স’
পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় |
কমিটমেন্ট ফোবিক সম্পর্ক নিয়ে ছবি। কোনও মেট্রো শহরের পটভূমিতে তৈরি নয়। জয়পুরের মতো একটা ছোট শহরকে বেছে নিয়েছেন পরিচালক মণীশ শর্মা। পরিনীতি চোপড়া এবং সুশান্ত সিংহ রাজপুত রয়েছেন বিশ্বাসযোগ্য চরিত্রে।
তবে বাণী-র ট্র্যাকটা চিত্রনাট্যে ভিড় বাড়ায়। চিত্রনাট্যকার জয়দীপ সাহানি ওটা না করে যদি শুধুমাত্র পরিনীতি আর সুশান্তের ওপর ছবিটা ফোকাস রাখত, তা হলে আমার আরও পছন্দের হত। শুরু হবে ‘বয় মিটস গার্ল’ গল্প দিয়ে। ভাড়াটে বরযাত্রী হিসেবে সুশান্ত দারুণ। ফিল্মের শুরুটা কিন্তু আমি সুশান্তের বিয়েটা দিয়ে করতামই না। বরং দেখাতাম সুশান্ত আর পরিনীতির হঠাৎ আলাপ হয়ে যাওয়া। তার পর প্রেম। বিয়ে। আর বিয়ে থেকে পালানো। মূল ছবিতে নাহয় সুশান্তের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পরে ওর সঙ্গে বাণীর একটা সম্পর্ক দেখানো হয়। আর কিছুই বলা হয় না, বিচ্ছেদের পরে পরিনীতির কী হল। আজও আমাদের সমাজে যদি একটা ছেলে কমিটমেন্ট-ফোবিয়াতে ভোগে, তাকে ‘জাজ’ করা হয় না। এক সপ্তাহ হয়তো আওয়াজ দেবে, কিন্তু তার পর ওর বন্ধুরাই বলবে, ‘গুরু, ফাটিয়ে দিয়েছিস!’ কিন্তু একটা মেয়েকে? তাকে কেউ সেটা বলবে না। তাই আমার কাছে ইন্টারেস্টিং হয়ে উঠত অন্য একটা ট্র্যাক। যেখানে দেখানো হচ্ছে পরিনীতির কী হচ্ছে বিচ্ছেদের পরে। শেষে ওদের আবার দেখা হয়। ওরা বিয়ে থেকে আবার পালায়। কিন্তু তার পর ঠিক করে, বিয়ে না করেই একসঙ্গে থাকবে।
যে স্ক্রিন সম্পর্ককে কোনও দিন পাল্টাতে চাইব না: ‘রকস্টার’ সম্পর্কের সিনেমা হিসেবে ইমতিয়াজ আলির এই ছবিটা আমার বেশ লাগে। এমনকী ওর ছবির গড়নটাও।
ভালবাসা= লাস্ট + এক্স ফ্যাক্টর |
যেখানে ভালবাসা মানে কবিতা: ‘দেড় ইশ্কিয়া’
শ্রীজাত |
‘দেড় ইশ্কিয়া’ ছবিতে কবিতা একটা বড় চরিত্র হয়ে দাঁড়ায়। অভিষেক চৌবের সিনেমায় মাধুরী দীক্ষিত রয়েছেন বেগম পারা-র ভূমিকায়। আর নাসিরুদ্দিন শাহ্ হলেন ইফতেকার। যিনি আসলে ছিঁচকে চোর। তার উদ্দেশ্য হল বেগম পারাকে বিয়ে করে তাঁর সম্পত্তির মালিক হওয়া। কিন্তু বেগম পারার একটাই শর্ত। যে তাঁকে মুশায়েরা শুনিয়ে খুশি করতে পারবে, তাকেই উনি বেছে নেবেন। নাসিরুদ্দিন তাঁকে শায়েরি শোনাতে থাকেন। প্রতিযোগিতা জমে ওঠে। তার পর গল্পের নানা ট্যুইস্ট। সিনেমাটা যে চালে শুরু হয়েছিল, ভেবেছিলাম কবির লড়াই দিয়েই তা শেষ হবে। কিন্তু তার বদলে দেখলাম শুধু গোলাগুলি। ভালবাসার ছবিতে অযথা এই গোলাগুলির ব্যবহার হিন্দি ছবিতে এখন একটা ক্লিশে। অতি-ব্যবহৃত ফরম্যাট।
রিনাদি (অপর্ণা সেন)-র জন্য চিত্রনাট্য লিখতে বসে ভাবছিলাম, আমি ‘দেড় ইশ্কিয়া’র চিত্রনাট্যটা নতুন করে সাজাতাম... ছবিটা শেষ করতাম কবির লড়াই দিয়ে। মাধুরীকে দিয়ে বলাতাম আমার লেখা গজলের উর্দু কাপলেট: ‘অপনে অপনে ধন্দে মে সব হোতে হ্যাঁয়/ মিলনেওয়ালে কব বেমতলব হোতে হ্যাঁয়।’ তার উত্তরে নাসিরুদ্দিন শাহ্ বলতেন: ‘মিল যাতে হ্যায় লোগ হসিন মুঝকো লেকিন/ তুম সে অচ্ছে তুম জ্যয়সে কব হোতে হ্যাঁয়।’
ছবিতে মাধুরী-হুমার সম্পর্ক খুব সুন্দর ভাবে দেখানো হয়েছে। জানি না এটাকে সমকামিতা বলব কি না। চমৎকার নির্ভরতার সম্পর্ক। আমি এটা লিখলে হয়তো ওদের মধ্যে আরও একটু ঘনিষ্ঠতা আনার চেষ্টা করতাম।
যে স্ক্রিন সম্পর্ককে কোনও দিন পাল্টাতে চাইব না: ‘ইজাজত’।
ছবিটা সব দিক থেকেই সম্পূর্ণ।
ভালবাসা= ঠোঁট আর মনের মাঝখানের স্টেশন। |
|