ব্যাঙ্কের দরজা বন্ধ। এ রাজ্যে ঝাঁপ বন্ধ এটিএমেরও। দেশ জুড়ে ৪৮ ঘণ্টা ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের প্রথম দিনে তাই স্বাভাবিক ভাবেই নাকাল হলেন সাধারণ মানুষ। আজ, মঙ্গলবার, ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনেও এই ছবি বদলানোর সম্ভাবনা প্রায় নেই। ফলে জরুরি প্রয়োজনেও এটিএমের নীচে হাত পাতার জো নেই। উপায় নেই চেক জমার। অবস্থা বুঝে ইতিমধ্যেই রাজ্যে টেট পরীক্ষায় বসার জন্য অনলাইনে আবেদনের মেয়াদ দু’দিন বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এসএসসি-র চেয়ারম্যান সুবীর ভট্টাচার্য জানান, ধর্মঘটের জন্য অনলাইন আবেদনের মেয়াদ আরও দু’দিন বাড়িয়ে বৃহস্পতিবার করা হয়েছে।
মূলত কর্মী-অফিসারদের বেতন সংশোধনের দাবিতেই দু’দিনের এই ধর্মঘট ডেকেছে কর্মী সংগঠনগুলি। এর দিনক্ষণও আগেই ঘোষণা করেছে তারা। কিন্তু তা সত্ত্বেও এ দিন মূলত দু’টি কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিষেবার অভাবে নাকাল গ্রাহকেরা। |
এক, শনিবার প্রথম অর্ধের পর থেকেই ব্যাঙ্কের দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাঁদের জন্য। ফলে শনি-রবি মিলিয়ে আসলে টানা সাড়ে তিন দিন ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পাচ্ছেন না তাঁরা। আর দুই, অনেক গ্রাহকের মতে, শুধু ব্যাঙ্কের দরজা বন্ধ থাকলে এক কথা। কিন্তু গ্রাহকদের চরম সমস্যার মুখে ফেলে দিয়েছে এটিএমের ঝাঁপও বন্ধ থাকা। হাওড়া চ্যাটার্জিহাট স্টেট ব্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে এক বয়স্ক গ্রাহক বলছিলেন, “জানতাম। কিন্তু মাথায় ছিল না। এখন এসে দেখি ব্যাঙ্ক, এটিএম দুই-ই বন্ধ। ধর্মঘট ডাকুক। কিন্তু সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখে অন্তত এটিএমকে এর বাইরে রাখা উচিত।”
দেশে জুড়ে দু’দিনের এই ধর্মঘট ডেকেছে অফিসার ও কর্মীদের ন’টি ইউনিয়নের যৌথ সংগঠন ইউনাইটেড ফোরাম অব ব্যাঙ্ক ইউনিয়ন্স (ইউএফবিইউ)। সংগঠনের এক মুখপাত্র জানান, সারা দেশে ২৭টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ৫০ হাজার শাখার প্রায় ৮ লক্ষ কর্মী এতে সামিল হয়েছেন। অন্য রাজ্যে কম-বেশি বেসরকারি ব্যাঙ্ক খোলা থাকলেও, পশ্চিমবঙ্গে তার দরজা ছিল বন্ধ।
সোমবার সকালে কলকাতায় অন্তত কিছু এটিএমের ঝাঁপ খোলার চেষ্টা করেছিল বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি। শুরুর দিকে খোলাও ছিল ২০% এটিএম। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার প্রায় সবগুলিই বন্ধ হয়ে যায়। অভিযোগ, ধর্মঘটীরা জোর করে বন্ধ করে দিয়েছেন ওই সব এটিএমের দরজা। হুমকি দিয়েছেন মঙ্গলবারও না-খোলার। সংগঠনের সভাপতি রাজেন নাগরের অবশ্য দাবি, এটিএমের নিরাপত্তা রক্ষীরাও ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন। মঙ্গলবারও তাঁরা কাজে আসবেন না।
ধর্মঘটের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম এ দিন বলেছেন, “ব্যাঙ্কের সমস্ত মুনাফাই বেতন বৃদ্ধির জন্য খরচ করা সম্ভব নয়।” তবে একই সঙ্গে ইউনিয়নের দাবিও যুক্তিসঙ্গত ভাবে বিবেচনা করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
কিন্তু ধর্মঘটের জেরে আরও তেতো হয়েছে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ আর কর্মী ইউনিয়নের টানাপোড়েন। এক দিকে, ধর্মঘটের জন্য ইউনিয়নের উপর ক্ষুব্ধ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সংগঠন ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কস আসোসিয়েশন (আইবিএ)। যে কারণে কঠোর বার্তা দিতে ইউএফবিইউ-র সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত বৃহস্পতিবারের বৈঠক বাতিল করে দিয়েছে তারা।
আবার তাতে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে ইউনিয়ন সভাপতি বলেছেন, “ওই দিন আমরা বৈঠকে বসব। আন্দোলনের পরবর্তী পদক্ষেপ করা নিয়ে কথা হবে।” কর্মী সংগঠনের আহ্বায়ক নগেন্দ্র নাথ ভট্টাচার্যের দাবি, “কিছু পাল্টা দাবি পেশ করেছে ব্যাঙ্কস অ্যাসোসিয়েশন। যেমন, ৫৫ বছর বয়স হলেই স্বেচ্ছাবসর দেওয়ার স্বাধীনতা, বেতনের একটা বড় অংশ কাজের ভিত্তিতে বাড়ানো ইত্যাদি। কিন্তু এ সব দাবি মানা সম্ভব নয়।” |