উত্তরের চিঠি
 
ঘুম ভেঙে দেখি, জেগে আছে
পুরো গ্রামটায় বিদ্যুৎ দেখেনি কেউ। পাঁচ বছর আগে ফেলে যাওয়া ইলেকট্রিক পোলে ঘুঁটে দেয় বউরা। তবু সম্প্রতি পূর্ব দিকের মাঠে সরষে খেতের পাশেই কারা যেন বায়োস্কোপ দেখিয়েছে। মাথার উপর চাঁদ, সূর্য, তারা। আর অসহ্য সব যন্ত্রণার মধ্যেই পর্দায় ভেসে উঠল ‘রাণু’। তখনও একটানা জেনারেটর চলছে। স্পিকারে ডায়ালগ শোনা যাচ্ছে। ১০০-১৫০ লোক কম করে এসেছে ‘রাণু’ দেখতে। কে এই রাণু? কীসের গল্প চলছে পর্দায়? একশো দিনের কাজ, ইন্দিরা আবাস বা কন্যাশ্রী-র প্রাপকরা চোখ বড় বড় করে দেখছে। কী ভাবে যেন নিজের ঘরের ঘটনাটাই পর্দায় ঘটে চলেছে। আশ্চর্য, মেধাবী রাণুর বাবা-মা ভাইকে পড়ালেও তাকে আর পড়ানোর খরচ নাকি দেবে না। নাইনে একটা সরল বাক্য কী ভাবে যেন শেষ হয়ে গেল বিপিএল সংসারে। ১৮ অঘ্রান বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফলের দিন রাণুর বিয়ে হয়ে যাচ্ছিল। হয়নি। মাস্টারমশায় রুখে দিলেন। রাণু এখন স্কুলে যায়।
২০০৬-এর বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইন এই বার্তাই দিয়েছে সমাজকে। এখন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আর সমাজ কল্যাণ দফতরকে সঙ্গে নিয়ে চাইল্ড লাইন ব্লকে ব্লকে এই সচেতনতার কাজটা করছে। এক মুঠো বীজ পেলে লাল নীল ফুলের ফোয়ারা ছুটিয়ে দিতাম বলছিলেন চাইল্ড লাইনের সুরজ। শ্রীনগর থেকে কন্যাকুমারী, সুরাট থেকে ইটানগরদেশের সর্বত্র ১৮ বছরের কম বয়সি ছেলেমেয়েদের নিয়ে কাজ করে এই চাইল্ড লাইন। খেলনার বদলে যাদের হাতে উঠে এসেছিল নাইন এম এম পিস্তল কিংবা ক্যাডবেরিতে অনীহা চলে আসা। ইফতার আড়ালে কীসের ঘ্রাণ টেনে নেয় বুক ভরে। আবার দুর্গাঠাকুর দেখবে বলে হিলিতে চুপ চুপ করে অষ্টমীর দিন পা ফেলেছিল দশ জন খুলনা গার্ল। কেউ জানে, কেউ জানে না। কিন্তু এ সব ঘটনার পর জেলায় প্রথম যেখানে উদ্বিগ্নের রিং-টোন বেজে ওঠে, সেটি সুরজ দাশের। সব শিশুকে নিরাপদ স্থানে পাঠানোর পর ওর দু’ চোখ ভরে ঘুম নেমে আসে। তার পর স্বপ্ন। তার পর সবাই দেখে ঘুম ভেঙে জেগে আছে। এই জাগরণ আজ ভীষণ জরুরি। যেমন জরুরি কৃষ্ণা তিরাথের নামটা জানা। ইন্টারভিউ ছাড়া যে ব্যক্তির নাম জানাটা অর্থহীন। এ প্রজন্ম জানুক দেশের নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হলেন কৃষ্ণা তিরাথ। নবপ্রজন্মের কাছে অঙ্গীকারের দায়িত্ব সুকান্ত আমাদের দিয়েছিলেন সেই কবে। তবুও ব্লাইন্ড ক্লাস ফোরের সে যখন রেপ্ড হয় কিংবা ডাস্টবিনে ফিমেলকে ফেলে রেখে মা চলে যায়, তখন মনে হয় চাকা আর লোহার ব্যবহার না শিখলেই হয়তো ভাল হত। কেননা ওই ভ্রম পশুরও নেই। তাই মানুষের ঘটানো নৃশংস অন্যায়কে অবিলম্বে পাশবিক বলা বন্ধ হোক। নইলে মতিলাল বস্তির মেয়েটি আগুন নিয়ে খেলতে খেলতে মাকে অপমানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল মৃত্যুর দরজায়। এ দায় কিন্তু রাষ্ট্রকেই নিতে হবে বার বার। কী ভাবে সবাই সচেতন হবে, তা গবেষণার বিষয়। কিন্তু তা বলে তো চাইল্ড লাইন, আমরা উদ্যোগ হারাব, কিছুই হবে না বলে গ্লাভসের ভেতরে আক্রান্ত হাতগুলো ঢুকিয়ে ফেলব। তা অনভিপ্রেত, অপ্রত্যাশিত। কথা বলতে বলতেই সুরজের এক বাংলাদেশি বন্ধু ঘরে দিয়ে গেলেন ওখানকার কাগজ কালের কণ্ঠ, কালের ধ্বনি, ভোরের বার্তা। প্রথম পাতায়ও চাইল্ড লাইন, সুরজ। দু’ হাত দিয়ে আড়াল করলেও দেখলাম ইচ্ছে কাঁটাতার মানে না। আয়েষা, বেনজির, বাবলিদের ঘরে ফিরিয়ে দিয়েছে চাইল্ড লাইন। আক্ষেপ একটাই। এখনও দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলায় মহিলা হোম নেই। তাই গভীর রাত, বর্ষার বিকেল বা শীতের দুপুরে অসহায় মেয়েগুলোকে মালদহে হোমে পাঠাতে হয়। একটা ফিমেল জুভেনাইল হোম খুব জরুরি। আর প্রয়োজন ড্রাগ ডি-অ্যাডিকটেড সেন্টার। যে চিকিৎসা কলকাতা ছাড়া অসম্ভব। যে অসুখের জন্য পরিবেশ দায়ী। শুধু রচনা, প্রবন্ধ, বক্তব্যের পরও কিছু বাকি থেকে যায়। তা মাঠে নেমে পড়া। চাইল্ড লাইন চেষ্টা করছে। আমরাও সচেতন হয়ে বরং আশপাশটা দেখি। দেখি ভোট না দিয়েও কী করে নাগরিক হওয়া যায়। ইউনিভার্সাল সিটিজেন অনেকটা পাখির মতো, অনেকটা শিশুর মতো।

লেখা ও ছবি : সন্দীপন নন্দী।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.