হাইকোর্টের নির্দেশ মতো তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা আজ, সোমবার। তার ঠিক আগেই সাগর ঘোষ হত্যা মামলার অন্যতম এক অভিযুক্তকে হেফাজতে নিল সিআইডি। শনিবার গভীর রাতে বোলপুরের ডাকবাংলো এলাকা থেকে শেখ ইউনুস নামে ওই তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। রবিবার সিউড়ি আদালতে হাজির করানো হলে সিজেএম রাজেশ চক্রবর্তী তার ১০ দিন সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ দেন।
বীরভূমের পাড়ুইয়ে সাগর ঘোষ হত্যা মামলার তদন্ত নিয়ে বারবারই ক্ষোভ জানিয়েছে হাইকোর্ট। গত ৩ ফেব্রুয়ারি সিআইডি-র তদন্তের হাল দেখে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের পর্যবেক্ষণ ছিল, জেলা পুলিশের তদন্তের সঙ্গে সিআইডি-র তদন্তের ফারাক নেই। তার পরেই তিনি সাত দিনের মধ্যে ‘ঠিকঠাক’ তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলেন। না হলে তদন্তের ভার নিরপেক্ষ সংস্থাকে দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেন তিনি। আজ, সোমবার মামলার শুনানি রয়েছে। তার আগেই ইউনুসের গ্রেফতার তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। |
সিউড়ি আদালতে তোলা হচ্ছে শেখ ইউনুসকে। রবিবার তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি। |
গত ছ’মাসে এই প্রথম সাগরবাবুর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে কাউকে গ্রেফতার করা হল। এর আগে এই ঘটনায় চার জনকে গ্রেফতার করেছিল জেলা পুলিশ। কিন্তু নিহতের পরিজনদেরই বক্তব্য ছিল, তাঁরা নিরপরাধ। ইউনুসের গ্রেফতারের পরেও সাগরবাবুর পরিজনেরা অবশ্য বিশেষ সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। তাঁদের অভিযোগ, তৃণমূলের বড় নেতাদের আড়াল করতেই ইউনুসকে ধরা হয়েছে। হাইকোর্টের ক্ষোভ প্রশমনের জন্যই এই গ্রেফতার। সাগরবাবুর ছেলে হৃদয়বাবু বলেন, “ছ’মাসে মাত্র এক জনকে ধরা হল। অথচ অভিযুক্ত ৪১ জন। আমরা চাই মূল অপরাধীদের আগে ধরা হোক।” সিআইডি-র তদন্তকারী অফিসার বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় এ নিয়ে মন্তব্য করেননি।
গত ২১ জুলাই রাতে নিজের বাড়িতে খুন হন কসবা পঞ্চায়েতের নির্দল প্রার্থী (বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) হৃদয় ঘোষের বাবা সাগরবাবু। নিহতের পুত্রবধূ শিবানীর করা অভিযোগে, প্রথম নামটিই হল বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের। দ্বিতীয়টি বীরভূম জেলা পরিষদের তৃণমূল সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীর। অভিযোগপত্রে ছ’নম্বরে নাম ছিল ইউনুসের। অনুব্রতর দাবি, শেখ ইউনুস দলের এক জন কর্মী।
এলাকাবাসী অন্য কথা বলছেন। কসবায় তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর নেতা-কর্মীদের দাবি, সম্প্রতি ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী দলের অঞ্চল সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছে ইউনুসকে। ইউনুসের মা নুন্নেহার বিবিরও বক্তব্য, “ছেলে রাজনীতি করত না। কিছুদিন আগে ও বলে, তৃণমূলের নেতারা এলাকার দায়িত্ব দিয়েছেন ওকে।” এ কথা মানতে নারাজ তৃণমূল। মন্ত্রী তথা বোলপুরের বিধায়ক চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, “শেখ ইউনুস নন, শেখ মুস্তাক তৃণমূলের কসবা অঞ্চল সভাপতি।”
সাগরবাবুর পরিবারের লোকেদের অভিযোগ, খুনের ঘটনায় প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত ইউনুস। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শিবানীদেবী বলেন, “ওই রাতে ইউনুসও শ্বশুরমশাইয়ের উপরে গুলি চালিয়েছিল।” শিবানীদেবীর করা অভিযোগপত্রে ৪ ও ৫ নম্বরে সুব্রত রায় ও ভগীরথ ঘোষের নাম রয়েছে। তাঁরাও সাগরবাবুকে গুলি করেন বলে অভিযোগ। কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজলাসেও নিহতের পরিবার এই দাবি করেছিল। যদিও ওই দু’জন ধরা পড়েননি। স্থানীয় সূত্রের খবর, ক’দিন আগেই সুব্রত ও ভগীরথ পারিবারিক পুজোয় যোগ দিয়েছেন। হাইকোর্টে মামলার শুনানি চলাকালীন সরকারি আইনজীবী শাক্য সেন জানান, অভিযুক্তদের অনেকেই ফেরার। আপাতত হাইকোর্টের দিকেই তাকিয়ে নিহতের পরিবার। সাগরবাবুর স্ত্রী সরস্বতীদেবী বলেন, “স্বামীর খুনের পরে যা করার আদালতই করেছে। স্বামীর খুনিদের শাস্তির ব্যবস্থাও আদালত ঠিকই করবে।” |