ডাঁই হয়ে পড়ে রয়েছে শুকিয়ে যাওয়া আলুর খোসা। ছড়িয়ে রয়েছে সব্জি টুকরো, আবর্জনা, পপকর্ন, চিপসের প্যাকেট, আধপোড়া কাঠ, ছাই। কিছু দূরে পড়ে রয়েছে থার্মোকলের থালা, বাটি, গ্লাস। শেষ মাঘের মৃদুমন্দ বাতাসে খড় কুটোর মতো উড়ে চলেছে মুরগির পালক।
বাঁকুড়ার শুশুনিয়ায় গেলে পাহাড়ের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হওয়ার বদলে এই দৃশ্য-দূষণই নজরে পড়ছে। চড়ুইভাতির মরসুম প্রায় শেষ হয়ে গেলেও, তার আবর্জনায় প্রায় ভরে গিয়েছে পাহাড়তলি। না পর্যটকেরা, না স্থানীয় প্রশাসন, সাফাইয়ের কাজে এগিয়ে আসেনি কেউ।
শুশুনিয়া পাহাড়তলিতে গিয়ে দেখা গেল কয়েকশো মিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে অবর্জনা। শুধু দৃশ্য দূষণই নয়, দূগর্ন্ধও ছড়াচ্ছে এলাকায়। দক্ষিণবঙ্গের পর্যটন কেন্দ্রগুলির মধ্যে শুশুনিয়া পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের জায়গা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও বড়ই সাধের জায়গা শুশুনিয়া। জঙ্গলমহলের পর্যটন উন্নয়নের জন্য বারবার তাঁর ঘোষণায় অযোধ্যাপাহাড়, মুকুটমণিপুরের সঙ্গে শুশুনিয়ার নাম উঠে এসেছে। কিন্তু সেই শুশুনিয়ার এই অবস্থায় ক্ষুদ্ধ বাসিন্দারা। অখুশি এখন ঘুরতে আসা পর্যটকেরাও। |
বাসিন্দাদের প্রশ্ন, “বাঁকুড়া সফরে এলেই পর্যটনস্থল হিসেবে শুশুনিয়াকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী। তাহলে শুশুনিয়ার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি কেন প্রশাসনিক উদাসীনতার শিকার হবে?’ মরশুম শেষে এই পাহাড়ে বেড়াতে আসা পর্যটকেরা প্রাকৃতিক শোভার থেকেও বেশি দৃশ্য দূষণে বিব্রত হচ্ছেন। দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার এলাকা থেকে শুশুনিয়ায় বেড়াতে আসা শ্যামাপদ রক্ষিত, কাজল রক্ষিতরা পাহাড়কোলে এই দৃশ্য দেখে বলেন, “খুব খারাপ লাগছে। মুরগির পালক উড়ে এসে গায়ে পড়ছে। পর্যটনস্থলগুলিতে পরিছন্নতা বজায় রাখতে নিয়মিত নজরদারির ব্যবস্থা করা উচিত প্রশাসনের।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও একই দাবি তুলছেন। এলাকার পাথরশিল্পী বাপি কর্মকার, মিষ্টি ব্যবসায়ী নেপাল মণ্ডলরা বলেন, “নোংরা জায়গার উপরেই পিকনিক করতে বাধ্য হন পর্যটকরা। খুব অসুবিধায় পড়তে হয় তাঁদের। অপরিষ্কার থাকার জন্য আমাদের কাছেও অনেকে অভিযোগ করেন।” তাঁদের দাবি, শীতের মরসুম চলে যাওয়ার পরেও দিনের পর দিন পিকনিকের জঞ্জাল ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে শুশুনিয়া পাহাড় এলাকায়। শুধু চলতি বছরেই নয়, প্রতি বছরেই এই দৃশ্য চোখে পড়ে। পিকনিকের মরশুমে নিয়মিত পরিষ্কার করা হোক এই এলাকা।
জেলা পরিষদের খাদ্য দফতরের জেলা মনিটরিং কমিটির সদস্য তথা ছাতনা ব্লক তৃণমূল সভাপতি পরমেশ্বর কুণ্ডু বলেন, “বিডিও-র কাছে আমি প্রস্তাব দিয়েছি পিকনিক করতে আসা পর্যটকদের কাছ থেকে গাড়ির ‘পার্কিং ফি’ স্থানীয় পঞ্চায়েত। সেই টাকাতেই শুশুনিয়ার আবর্জনা সাফ করার কাজ করানো হোক কোনও সংগঠন বা স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীকে দিয়ে।” এলাকায় ‘ডাস্টবিন’ গড়ার বিষয়েও বিডিওকে জানাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
বনদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার জঞ্জাল দ্রুত সাফ করার জন্য জেলা প্রশাসনকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। ছাতনা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মৌসুমি মিশ্র বলেন, “বিষয়টি বিডিও দেখছেন। তিনিই এ বিষয়ে বলতে পারবেন।” ছাতনার বিডিও সুতপা নস্কর বলেন, “শুশুনিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতকে আপাতত নিজস্ব তহবিল থেকে দ্রুত পাহাড় সংলগ্ন এলাকার জঞ্জাল সাফ করতে বলেছি। সামনের বছর থেকে ‘পার্কিং চার্জ’ আদায় করে জঞ্জাল সাফ করা যায় কি না সেই বিষয়েও আমাদের আলোচনা চলছে।” |