|
|
|
|
প্রশাসনিক ভবনের জন্য অবশেষে বরাদ্দ পূর্বে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
জেলা ভাগের বারো বছর পরও তৈরি হয়নি পূর্ব মেদিনীপুরের আলাদা প্রশাসনিক ভবন। অবশেষে তা নির্মাণের জন্য ৮২ কোটি ২২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করল রাজ্য সরকার। রাজ্যের প্রশাসনিক কর্মীবর্গ দফতর থেকে সম্প্রতি এই টাকা বরাদ্দ হয়েছে। আগামী এপ্রিল-মে মাস নাগাদ নিমতৌড়িতে জেলা প্রশাসনিক ভবন-সহ আধিকারিকদের বাংলো নির্মাণের প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু করে দেওয়া যাবে বলে আশা করছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন।
২০০২ সালের পয়লা জানুয়ারি অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা ভাগ করে তমলুক শহরকে পূর্ব মেদিনীপুরের সদর হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। প্রাথমিক ভাবে তমলুক শহরে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের পাশে থাকা অতিরিক্ত জেলাশাসকের অফিসকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনিক ভবন হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়। ওই অফিসের তিন তলা ভবন বাড়িয়ে চার তলা করা হলেও সমস্ত সরকারি দফতরের সঙ্কুলান হয়নি। তাই সরকারি বিভিন্ন দফতরগুলির জন্য শহরের বিভিন্ন জায়গায় ভাড়া বাড়ি নেওয়া হয়। দূরত্বের কারণে অসুবিধা যেমন হচ্ছে, তেমনই প্রতি মাসে বাড়ি ভাড়া বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা খরচ হচ্ছে রাজ্য সরকারের। এই সমস্যা দূর করতে ২০০৫ সালে নবগঠিত জেলার প্রশাসনিক ভবন-সহ বিভিন্ন দফতরের কার্যালয় একই চত্বরে নির্মাণ করার জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এর জন্য জেলা পরিষদ ও প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে তৈরি হয় সাইট সিলেকশন কমিটি। তত্কালীন জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিরঞ্জন সিহি ছিলেন ওই কমিটির চেয়ারম্যান। ওই কমিটির প্রস্তাব অনুসারে তমলুক শহরের অদূরে নিমতৌড়িতে হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক সংলগ্ন এলাকায় জেলা প্রশাসনিক ভবন-সহ সদর অফিস গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ২০০৭ সাল নাগাদ স্থানীয় গণপতিনগর, চকশ্রীকৃষ্ণপুর, কুলবেড়িয়া প্রভৃতি মৌজা মিলিয়ে প্রায় ১১২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। প্রস্তাবিত জেলা প্রশাসনিক ভবন, জেলা পরিষদ অফিস ভবন, বাংলো-সহ বিভিন্ন দফতরের অফিস নির্মাণের জন্য রাজ্যের পূর্ত দফতর পরিকল্পনা তৈরি করে। জেলাশাসকের অফিস-সহ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের জেলা অফিস একই ছাতার তলায় আনার জন্য ৮ তলা বিশিষ্ট মূল প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। ৬ একর জায়গা জুড়ে ওই চত্বরে জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসক, সদর মহকুমাশাসকের বাংলো ভবন তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মূল জেলা প্রশাসনিক ভবন ছাড়াও ওই একই চত্বরে জেলা পরিষদ অফিস, একটি বড় মাপের কমিউনিটি হল, জেলা পুলিশ লাইন, জেলা সংশোধানাগার প্রভৃতি গড়ে তোলা হবে। জেলা পুলিশ লাইনের জন্য ১৮ একর, জেলা সংশোধানাগারের জন্য ৬ একর জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছে।
২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই জেলায় রাজনৈতিক পালা বদলের পর জেলা প্রশাসন ভবন নির্মাণের কাজ নিয়ে কিছুটা অচলাবস্থা চলে। রাজ্যে নতুন সরকার আসার পর পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনিক সদর অফিস তৈরির জন্য ফের তত্পরতা শুরু হয়। নিমতৌড়িতে অধিগৃহীত জমি চিহ্নিত করে ইতিমধ্যে খুঁটি সহ তার ঘিরে দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত ওই জেলা প্রশাসনিক অফিস চত্বরে বিশাল জলাশয় খনন করা হয়েছে। রাস্তা তৈরির জন্য এলাকা চিহ্নিত করে প্রাথমিক কাজ হয়েছে। ওই চত্বরে ইতিমধ্যে প্রায় এক কোটি বরাদ্দ করে জেলা সংখ্যালঘু ভবন তৈরির কাজ হয়েছে। ওই চত্বরেই প্রস্তাবিত শহিদ মাতঙ্গিনী হাজরা গভর্নমেন্ট কলেজ ভবন তৈরির কাজ চলছে।
অতিরিক্ত জেলাশাসক অজয় পাল জানান, এ বার মূল জেলা প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের জন্য প্রায় ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়াও জেলা প্রশাসনিক আধিকারিকদের বাংলো নির্মাণের জন্য প্রায় ২২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের অধীনস্থ ম্যাকিনটোস বার্ন সংস্থা প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ কাজের দ্বায়িত্ব পেয়েছে। চলতি আর্থিক বছরের মার্চ মাসের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের বরাদ্দ টাকা পৌঁছে যাবে। আগামী এপ্রিল-মে মাস নাগাদ জেলা প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। |
|
|
|
|
|