প্রথম টেস্টে লক্ষ্যপূরণ করতে পারল না ভারত। টেস্ট হারলেও অবশ্য নিজেদের স্পিরিটটা হারায়নি টিম ইন্ডিয়া। টপ অর্ডারের কয়েক জন ব্যাটসম্যান নিশ্চয়ই নিজেদের শট বাছাইয়ের কথা ভেবে আফসোস করবে। অজিঙ্ক রাহানের মতো কেউ কেউ আবার ভাববে, টিমের যখন খুব দরকার, তখন আমার একটা বড় ইনিংস খেলার সময় এসে গিয়েছে। তবে ওদের সবারই উচিত এগিয়ে এসে নিউজিল্যান্ডের প্রশংসা করা। নিউজিল্যান্ডের এই লড়াইটা বুঝিয়ে দিল, টেস্ট ক্রিকেটে ওদের আট নম্বর র্যাঙ্কিং কত অর্থহীন। র্যাঙ্কিংয়ের সিস্টেমটা নিয়েও বোধহয় এ বার ভাবার সময় হয়েছে।
ভারতীয় ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার আগে যারা জিতল, তাদের নিয়ে আলোচনা করাটা ন্যায্য। তেড়েফুঁড়ে বল করতে দৌড়ে আসা ওয়াগনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উইকেটগুলো নিয়ে গেল। ওর দুটো দুষ্প্রাপ্য গুণ অপ্রতিরোধ্য আগ্রাসন আর ব্যাটসম্যানের দিকে ধেয়ে আসা শর্ট বল এই টেস্টে খুব কাজে এল। দিল্লির জুটি শিখর ধবন আর বিরাট কোহলি যখন সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ করে ম্যাচ নিয়ে প্রায় বেরিয়ে যাচ্ছিল, তখন পুরনো বলে ওদের দু’জনকেই ফিরিয়ে দিল ওয়াগনার। আর তার পর নতুন বল হাতে ফিরে এসে বিপজ্জনক ধোনির উইকেট। এই ওয়াগনার যে নিউজিল্যান্ড টিমের তৃতীয় সিমার, সেটা থেকেই বোঝা যায় ওদের ফাস্ট বোলিংয়ের গভীরতা কত বেশি। |
কোহলির উইকেটটা কিন্তু উপহার ছিল ওয়াগনারের জন্য। নিজের দশ নম্বর স্টাম্পের কাছে আসা একটা ডেলিভারিকে পুল করার চেষ্টা করল কোহলি। ওটা যে আন্ডার-এজ হয়ে কিপারের হাতে জমা পড়বে, সেটা সত্যিই কুৎসিত ব্যাপার। তবে ব্যাটসম্যান কোহলির ভাবমূর্তির কথা ভেবে ‘কুৎসিত’ না বলে আউটটাকে অদ্ভূত বলা উচিত। ধবন যে বলটায় আউট হল, সেটা একটা হিংস্র বল ছিল। তাতে ওর শর্ট বল সামলানোর ক্ষমতা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন ওঠেনি। বলটা ওর গায়ে উঠে আসছিল আর অনেক চেষ্টা করেও ধবন ওটার রাস্তা থেকে নিজেতে সরাতে পারেনি। আর ঠিক ওই মুহূর্ত থেকেই নিউজিল্যান্ড আবার ম্যাচটা নিজেদের হাতে নিয়ে নিল।
রোহিত আরও এক বার বেশ কয়েকটা বল খেলে ভুল সময় আউট হল। ওকে এখনও নিজের গেমপ্ল্যানটা ঠিকঠাক করতে হবে। আর ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময় আরও নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে খেলতে হবে। রোহিতের অভ্যেস হল মাঝে মধ্যে শরীর থেকে দূরে আলগা শট খেলা। দেশের মাঠে সেটা করে ও পার পেয়ে গেলেও যেতে পারে। কিন্তু বিদেশে করতে গেলে ধরা পড়বেই।
রাহানেও একটা ভাল সুযোগ নষ্ট করল। ওর আউট নিয়ে আম্পায়ারের দিকে আঙুল তুললেও প্রশ্ন থেকেই যায়, ভাল শুরু করেও রাহানে কি বড্ড বেশি সুযোগ নষ্ট করছে? এই পর্যায়ের ক্রিকেট খেলার মতো যথেষ্ট উচ্চাকাঙ্খা কি ওর আছে? রাহানে কমবয়সি আর যথেষ্ট প্রতিভাবান। কিন্তু ওকে আরও উপরে তাকাতে হবে। আর আমি নিশ্চিত, ও সেটাই করছে।
টেস্টটা যখন শেষ হল, ততক্ষণে ভারতের বোলিং আর ব্যাটিং দুটোই অনেক উন্নত দেখাল। ওয়েলিংটনে সিরিজ টাই করতে গেলে এটা ওদের ধরে রাখতে হবে। মানছি ব্যাপারটা সময়সাপেক্ষ, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি ভারত সেটা পারবে।
|
দ্বিতীয় ইনিংস
ভারত ৩৬৬ (আগের দিন ৮৭-১) |
শিখর ক ওয়াটলিং বো ওয়াগনার ১১৫
পূজারা ক ওয়াটলিং বো সাউদি ২৩
কোহলি ক ওয়াটলিং বো ওয়াগনার ৬৭
রোহিত ক ওয়াটলিং বো সাউদি ১৯
রাহানে এলবিডব্লিউ বোল্ট ১৮
ধোনি বো ওয়াগনার ৩৯
জাডেজা ক সোধি বো বোল্ট ২৬
জাহির ক টেলর বো ওয়াগনার ১৭
ইশান্ত ক ওয়াটলিং বো বোল্ট ৪
শামি ন.আ. ০
অতিরিক্ত ২৫
মোট ৩৬৬।
পতন: ৩৬, ৯৬, ২২২, ২৪৮, ২৬৮, ২৭০, ৩২৪, ৩৪৯, ৩৬২।
বোলিং: বোল্ট ২৩.৩-২-৮৬-৩, সাউদি ২৩-৪-৮১-৩, ওয়াগনার ২৫-৮-৬২-৪
অ্যান্ডারসন ৭-১-২২-০, সোধি ১৫-২-৭৮-০, উইলিয়ামসন ৩-০-১৮-০। |
|
|