এসে গেল আর এক দফা লোকসভা নির্বাচন। প্রতিটি নির্বাচনের আগে সব রাজনৈতিক দল কিছু প্রতিশ্রুতি দেয়। গদিতে আসীন হলে জনগণের জন্য কী কী কাজ করবে, দেয় সেগুলির একটা ফিরিস্তি। বর্তমানে গদিতে সমাসীন ইউ পি এ সরকারের প্রধান শরিক দল কংগ্রেস ১৩ দফা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এ বার আবার কিছু নতুন প্রতিশ্রুতি পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে, পুরনো প্রতিশ্রুতিগুলি (আনন্দবাজার পত্রিকায় ১১ মার্চ, ২০০৯ প্রকাশিত) পর্যালোচনা করে দেখা যেতে পারে, তাদের কতগুলি পূরণ করা হয়েছে।
প্রতিশ্রুতি:
(এক) বি পি এল পরিবারের জন্য মাসে তিন টাকা কে জি দরে ২৫ কে জি চাল বা গম।
(দুই) গ্রামীণ রোজগার নিশ্চিতকরণ প্রকল্পে দৈনিক ১০০ টাকা বেতনে বছরে ১০০ দিনের কাজ।
(তিন) বি পি এল পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য বিমা। (চার) প্রত্যেক ব্লকে আরও একটি করে মডেল স্কুল। |
(পাঁচ) মহিলাদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরির এক তৃতীয়াংশ সংরক্ষণ।
(ছয়) দলিত ও আদিবাসী ছেলেমেয়েদের জন্য সমস্ত স্তরে বিনামূল্যে শিক্ষা।
(সাত) কৃষকদের জন্য জাতীয় পুনর্বাসন বিল ও জমি অধিগ্রহণ আইনের সংশোধন।
(আট) ওয়াকফ উন্নয়ন নিগম গঠন ও জাতীয় ইউনানি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন।
(নয়) মৌলানা আজাদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তহবিল দ্বিগুণ।
(দশ) সন্ত্রাস দমনে আরও বিশেষ বাহিনী, পুলিশে ব্যাপক সংস্কার।
(এগারো) ২০১১ সালের মধ্যে সকলের জন্য সচিত্র পরিচয়পত্র।
(বারো) তিন বছরের মধ্যে সব গ্রামে ব্রডব্যান্ড।
(তেরো) সংখ্যালঘুদের সমান সুযোগ তৈরির জন্য কমিশন গঠন।
এই যে তেরো দফা প্রতিশ্রুতি গত বার দেওয়া হয়েছিল, তার গোটা তিনেক মাত্র অংশত পূর্ণ হয়েছে, বাকিগুলি কাগজেকলমেই রয়ে গেছে। একটি আধুনিক বাংলা গানের প্রথম চরণ মনে পড়ছে: ‘কথা দিয়ে যদি কথা না রাখো/ অমন করে তবে কথা দিও না’। আগামী নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি অর্থাৎ ‘কথা’ দেওয়ার আগেসব দলকেই গানের চরণটি মাথায় রাখতে অনুরোধ জানাই।
সুখেন্দু বসু। উলুবেড়িয়া, হাওড়া
|
এ দেশের কোনও শহরে বা গ্রামে ভি আই পি-দের আগমন জনসাধারণের সুস্থ জীবনযাত্রা প্রায়শই ব্যাহত করে। বিশেষ করে সড়ক পরিবহণ ব্যবস্থা সাময়িক ভাবে হলেও অল্পবিস্তর বিঘ্নিত হয়। হাজার হাজার যাত্রী বাসে, ট্যাক্সিতে আটকে পড়ে দুর্ভোগ পোহান। অতিপ্রয়োজনীয় কর্তব্য-কর্ম সম্পাদনে ব্যর্থ হন। শুধু তাই নয়, আত্মীয়স্বজনের উদ্বেগ বাড়িয়ে যাত্রাপথের বিড়ম্বনার জন্য দায়ী অতীব গুরুত্বপূর্ণ সেই ব্যক্তিকে স্বাগত জানানোর পরিবর্তে তাঁরা তাঁর মুণ্ডপাত করেন। আগত ভি আই পি-র উদ্দেশ্য যতই মহৎ হোক না কেন, যাত্রাপথে দুর্ভোগে পড়া হাজার হাজার যাত্রীর কাছে তিনি তখন ভিলেনে পরিণত হন।
এমনই এক তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল এই পত্রলেখককেও। দিনটি ছিল ৭ ডিসেম্বর ২০১৩। সে দিন ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতি আসছেন তাঁর প্রাক্তন লোকসভা কেন্দ্র জঙ্গিপুরে। তাঁর আগমন জঙ্গিপুরবাসীর কাছে নিঃসন্দেহে গর্ব এবং সৌভাগ্যের দ্যোতক। কিন্তু এ আগমন অবিমিশ্র আনন্দ বা সৌভাগ্য বহন করে আনেনি। এ দিন দুপুরে যানবাহন নিয়ন্ত্রণের ফলে ৩৪ নং জাতীয় সড়কে দশ কিমিব্যাপী যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। ব্যস্ত এই জাতীয় সড়কে প্রায় এক ঘণ্টার জন্য যান চলাচল কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায়। বিপত্তি এখানেই। সে দিন বিভিন্ন যানবাহনে হাজার হাজার নিরুপায় যাত্রী প্রচণ্ড দুর্ভোগের মুখে পড়েছিলেন। কোনও স্বাধীন সভ্য দেশে ভি আই পি-দের আগমনের জন্য রাস্তা অবরোধের এমন ঘটনা কোনও ভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ভি আই পি-দের আমরা স্বাগত জানাই। কারণ, তাঁদের আগমন আঞ্চলিক উন্নয়নের সহায়ক। কিন্তু তাঁদের আগমন যেন প্রবহমান স্বাভাবিক জনজীবনের প্রতিবন্ধক না-হয়ে ওঠে। ভবিষ্যতে এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রশাসনিক পদাধিকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
অশোককুমার সেনগুপ্ত। নিমতিতা, মুর্শিদাবাদ
|
প্রয়াত বীণাপাণি দেবীর যেমন দেহদানের শেষ ইচ্ছা পূরণ করা গেল না সরকারি হাসপাতালের অদ্ভুত নিয়ম ও উদাসীনতায়। (‘ছুটি, তাই বহু হাসপাতাল ঘুরেও দেহদান হল না’, পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ৩-১) প্রায় একই ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলাম কিছু দিন আগে। বিশিষ্ট নট-নাটককার-নির্দেশক শ্যামল ঘোষ পি জি হাসপাতালে ২৮ ডিসেম্বর সকাল ৮-৩০ নাগাদ শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এই হাসপাতালেরই ‘চেস্ট’ বিভাগে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। প্রয়াত ঘোষের পরিবারের লোকজনেরা শ্যামলবাবুর অঙ্গীকার করা দেহদানের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। হাসপাতাল সূত্র থেকে জানানো হয়, ওই হাসপাতালেরই ‘অ্যানাটমি’ বিভাগে শ্রীঘোষের দেহ সংরক্ষিত করা হবে। সেই মতো শ্যামলদার পরিবারের মানুষ জানান। কিন্তু হঠাৎই ওই হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, স্থানাভাবের কারণে শ্যামলবাবুর দেহ তাদের পক্ষে সংরক্ষণ করা সম্ভবপর নয়। মারা যাওয়ার ৮ ঘণ্টার মধ্যেই দেহ সংরক্ষিত রাখা জরুরি। তাই বাধ্য হয়ে পরিবারের লোকজনেরা এন আর এস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা দেহ নিতে সম্মত হয়। তবে একটাই শর্ত, দুপুর ১-৩০ এর মধ্যে দেহ এন আর এস-এর ‘অ্যানাটমি’ বিভাগে জমা করতে হবে। কারণ, শনিবার হওয়ায় দুপুর দেড়টার পর ‘স্টাফ’ পাওয়া যাবে না। অগত্যা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পি জি থেকে দেহ নিয়ে ছোটা হল এন আর এস-এ। এবং অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে শ্যামলবাবুর শেষ ইচ্ছের বাস্তবায়ন হল অতঃপর।
প্রশ্ন একটাই, মরণোত্তর দেহদান বা চক্ষুদানের মতো বিষয়ে গণ আন্দোলনকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থারা যখন আন্তরিক ও আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বেশিসংখ্যক মানুষকে দেহদানের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ করার, তখনই শুধুমাত্র ব্যবস্থাপনার ত্রুটিতে এই আন্দোলন ধাক্কা খাচ্ছে। মৃত্যু কি শনি-রবি ছুটির দিন মেনে হবে? কেন সরকারি হাসপাতালগুলোতে দেহ গ্রহণ ও সংরক্ষণের প্রথা সাত দিন চব্বিশ ঘণ্টা চালু থাকবে না?
চন্দন দাশ। নাট্যসম্পাদক, পরিচালক, শৌভনিক মুক্তঅঙ্গন রঙ্গালয়, কলকাতা-২৬ |