সম্পাদকীয় ১...
সময় যখন আসিবে
প্রায় এক শতাব্দী আগে দার্শনিক লুডউইগ উইটগেনস্টাইন লিখিয়াছিলেন: যাহা আদৌ বলা যায়, তাহা স্পষ্ট ভাবে বলা যায়; এবং যে বিষয়ে কথা বলা যায় না সেই বিষয়ে নীরব থাকিতে হয়। বিজেপি এবং কংগ্রেসের বিকল্প একটি ‘তৃতীয়’ ফ্রন্ট গড়িবার বিষয়ে বিবিধ উদ্যোগী দলের নেতারা স্পষ্ট করিয়া কিছু বলিতে পারিতেছেন না, কারণ এই বিষয়ে স্পষ্ট করিয়া কিছু বলিবার উপায় নাই। তাহা সত্ত্বেও রাজনীতির ফেরে পড়িয়া নানা জনে নানা উক্তি করিতেছেন এবং সেই সকল উক্তি কেবলই বিভ্রম বাড়াইতেছে। প্রাজ্ঞ দার্শনিকের নির্দেশ না মানিলে এমনই হয়। সহজ ও স্পষ্ট সত্য ইহাই যে, তৃতীয় ফ্রন্ট বলিয়া কিছু নাই। সংসদের অন্তিম লগ্নে এগারো দলের একটি সম্মিলিত তৎপরতা খাড়া করিয়া কিছু অত্যুৎসাহী দল বা নেতা যাহা সরবরাহ করিয়াছেন, তাহাকে পিটুলিগোলা বলিলে পিটুলিগোলার অপমান হয়। তৃতীয় ফ্রন্ট বলিয়া আদৌ কিছু গড়িয়া উঠিবে কি না, সেই ফ্রন্ট কংগ্রেস এবং বিজেপি হইতে ‘সমদূরত্ব’ বজায় রাখিবে কি না, সমদূরত্ব বলিতেই বা ঠিক কী বোঝায়— এ সব অনেক পরের কথা। লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের আগে এই সকল প্রশ্ন সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক। সেই ফল বলিয়া দিবে, কোন দল কত আসন লইয়া নূতন লোকসভায় প্রবেশ করিতেছে। যাহার যত আসন, তাহার তত গুরুত্ব। নূতন কোনও ফ্রন্ট নির্মাণের প্রশ্ন যদি ওঠে, তবে সেই আসনসংখ্যা-ভিত্তিক আপেক্ষিক গুরুত্বই হইবে তাহার চেহারা ও চরিত্রের নির্ণায়ক। রাম জন্মাইবার আগে রামায়ণ লিখিত হইয়াছিল। সে অযোধ্যা নাই, সেই বাল্মীকিও নাই।
তৃতীয় ফ্রন্টের ধ্বজা ধরিয়া যাঁহারা দৌড়াদৌড়ি করিতেছেন, তাঁহাদের তৎপরতার পিছনে একটি আশা কাজ করিতেছে। তাহা এই যে, দুই প্রধান দল কংগ্রেস এবং ভারতীয় জনতা পার্টি যথেষ্ট আসনে জয়ী হইতে পারিবে না, সুতরাং তাহাদের নেতৃত্বে সংগঠিত জোট দুইটি সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হইবে, সেই অস্থিরতার ঘোলা জলে মাছ ধরিবার সুযোগ মিলিবে। এই সম্ভাবনা যে অলীক বা অমূলক, তাহা বলে চলে না। আগামী নির্বাচনে কংগ্রেসের পক্ষে ভাল ফল করা কঠিন, তাহা দলের সর্ব স্তরের নেতারা বিলক্ষণ জানেন। ফলে বিজেপির উন্নতি হইবে, তাহা একপ্রকার সর্বজনস্বীকৃত, কিন্তু সেই উন্নতি এন ডি এ সরকার গঠনের পক্ষে যথেষ্ট হইবে কি না, তাহা এখনও আদৌ সংশয়াতীত নহে। বস্তুত, নির্বাচনী পাটিগণিতের একটি (অতি)সরল নির্যাস ইহাই যে, দুই প্রধান দলের সম্মিলিত আসনসংখ্যা যদি লোকসভার অর্ধেক আসনের গণ্ডি অতিক্রম করিতে না পারে, তাহা হইলে তৃতীয় পক্ষের সরকার গঠনের সম্ভাবনা জোরদার হয়। কিন্তু তেমন পরিস্থিতিতে তৃতীয় পক্ষের সম্ভাব্য শরিকদের কে কত আসন লইয়া দর কষাকষির টেবিলে বসিতে পারিবেন, তাহাই হইবে প্রথম ও প্রধান প্রশ্ন। এই প্রেক্ষিতে বামপন্থীদের অবস্থা বিশেষ করুণ। তাঁহারা তৃতীয় ফ্রন্টের ‘অনুঘটক’ হইয়া উঠিতে মনে মনে যত ব্যগ্রই হউন, তাঁহাদের সম্ভাব্য আসনসংখ্যা সেই ভূমিকাকে কোনও ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হইয়া উঠিবার রসদ জোগাইতে পারিবে বলিয়া মনে হয় না। অ-কংগ্রেস, অ-বিজেপি সরকার গঠনের প্রক্রিয়া যদি চালু হয়ও, প্রকাশ কারাট সেই প্রক্রিয়ায় হরকিষেন সিংহ সুরজিতের ভুমিকা লইতে পারিবেন, এমন ভরসা কম। ‘আদর্শভিত্তিক রাজনীতি’র মন্ত্র জপিয়া কিছুমাত্র লাভ নাই। খেলাটি আদর্শ বা নীতির নহে, ভোটলব্ধ সংখ্যার। আর, বামপন্থীদের সমস্যা একেবারে মূলে। একটি নয়, দুইটি সমস্যা। এক, তাঁহাদের ফাটা রেকর্ডে প্রচারিত আদর্শগুলির বাস্তব মূল্যও বিশেষ অবশিষ্ট নাই। দুই, সেই আদর্শে তাঁহাদের নিষ্ঠার বিশ্বাসযোগ্যতাও তথৈবচ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.