|
|
|
|
আবাসনে মন্দা, ওষুধ বিদেশি পুঁজি |
প্রেমাংশু চৌধুরী • নয়াদিল্লি
৯ ফেব্রুয়ারি |
মাসে মাসে মোটা টাকা বাড়ির ভাড়া গুণতে হচ্ছে। সেই টাকাটাই ইএমআই দিয়ে লেক টাউনের নতুন আবাসনে ফ্ল্যাট কেনার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন মহাদেব দত্ত। দামের অর্ধেক টাকা দেওয়া হয়ে গেলেও এখনও ভাড়া বাড়ি ছাড়তে পারেননি তিনি। কারণ আবাসনের কাজই শেষ করে উঠতে পারেনি নির্মাণকারী সংস্থাটি।
শুধু কলকাতা নয়। দিল্লি, গুড়গাঁও, নয়ডা থেকে শুরু করে মুম্বই, আমদাবাদ, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, হায়দরাবাদ, সব শহরেই একই ছবি। নির্দিষ্ট সময়ে আবাসন তৈরির কাজ শেষ হচ্ছে না। তার ফলে প্রতিশ্রুতি মতো ফ্ল্যাট হাতে পাচ্ছেন না ক্রেতারা। অর্থনীতিতে মন্দার ধাক্কা লেগেছে আবাসন ক্ষেত্র বা রিয়েল এস্টেটেও। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এখানেও সমস্যা সেই পুঁজির অভাব। পুঁজির অভাবেই নির্মাতারা আবাসন তৈরির কাজ সময়ে শেষ করতে পারছেন না। আবাসন ক্ষেত্রে পুঁজি বাড়াতে এখন তাই দেশি পুঁজির পাশাপাশি বিদেশি পুঁজি আনারও চেষ্টা করেছে কেন্দ্র। এক দিকে রিয়েল এস্টেটে সরাসরি বিদেশি লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে। আবাসন তৈরির জন্য কৃষিজমি কেনার জন্যও বিদেশি পুঁজি কাজে লাগানোর অনুমতি দিতে চাইছে সরকার। অন্য দিকে সাধারণ মানুষের প্রতারণা রুখতে রিয়েল এস্টেট (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) বিল আনা হচ্ছে।
সমস্যাটা কোথায়? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে কোনও আবাসন তৈরির জন্য ৫০ রকমেরও বেশি লাইসেন্স ও ছাড়পত্র নিতে হয়, যা জোগাড় করতেই দু’বছর লেগে যায়। আবাসন তৈরির পুঁজি জোগাড় করতে ওই সব লাইসেন্স পাওয়ায় আগেই ফ্ল্যাটের বুকিং নিতে শুরু করে দেন প্রোমোটাররা। অর্ধেক ফ্ল্যাট বিক্রি করতে পারলেই নির্মাণ কাজ শুরুর জন্য যথেষ্ট টাকা হাতে থাকে। আবাসন তৈরির জন্য কৃষিজমি কিনতে হলে ঋণ দেয় না ব্যাঙ্ক। ফলে অনেকে জমি কেনার আগেই ক্রেতাদের থেকে অগ্রিম নিতে শুরু করেন। অনেকে আবার একটি আবাসন প্রকল্প তৈরির কাজ শেষ না হতেই আর একটির কাজে হাত দেন। ফলে প্রথম প্রকল্পের টাকা পরের প্রকল্পে চলে যায়। তাতেও পুঁজির টান পড়ে।
যত দিন বাজারে রমরমা ছিল, তত দিন সমস্যা ছিল না। কিন্তু অর্থনীতিতে মন্দার সঙ্গে সঙ্গে ফ্ল্যাট বিক্রিও কমতে থাকে। তাতেই সমস্যার শুরু। রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞ রঘু কুমারের মতে, ২০১২ সালের শেষ দিক থেকেই ফ্ল্যাট বাড়ির বিক্রি কমছে। প্রোমোটাররা যে দাম হাঁকছেন, তাতে বিক্রি হচ্ছে না। গোটা দেশে খালি পড়ে থাকা ফ্ল্যাটের সংখ্যা ১ কোটিরও বেশি। দিল্লি, মুম্বই, পুণের মতো শহরে নতুন ফ্ল্যাট বিক্রি ১০ শতাংশেরও বেশি হারে কমেছে। প্রোমোটারদের পুঁজিতেও টান পড়ছে। আগের হিসেব মতো আর কিছু চলছে না। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে শ্রমিকদের মজুরি ও কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি। সব মিলিয়ে ঠিক সময়ে কেউই ফ্ল্যাট হাতে পাচ্ছেন না।
তার ফলে একই সঙ্গে ইএমআই ও বাড়ি ভাড়ার টাকা গুণতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে অনেকেরই। প্রোমোটারদের অফিসে বিক্ষোভের ঘটনা বাড়ছে। উল্টো দিকে রিয়েল এস্টেট সংস্থাগুলির লোকসানের অঙ্ক বাড়ছে। ইউনিটেক থেকে ডিএলএফ-এর মতো বড় মাপের রিয়েল এস্টেট সংস্থাগুলিরও শেয়ার দর তলানিতে।
এই পুঁজির অভাব দূর করতে কেন্দ্রীয় আবাসন মন্ত্রক চাইছে, আবাসন প্রকল্প, টাউনশিপ তৈরিতে চাষের জমি কিনতে হলে তার জন্যও বিদেশি পুঁজি কাজে লাগানোর অনুমতি দিতে। কোনও রিয়েল এস্টেট প্রকল্পে ন্যূনতম বিদেশি বিনিয়োগের সীমা ১০ লক্ষ ডলার থেকে কমিয়ে ৫ লক্ষ ডলার করারও প্রস্তাব রয়েছে।
অন্য দিকে সাধারণ মানুষের প্রতারণা ও বসবাসের জন্য জমি-বাড়ি কেনায় স্বচ্ছতা আনতে আনা হচ্ছে রিয়েল এস্টেট (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) বিল। যেখানে একটি স্বাধীন নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ তৈরির কথা বলা হয়েছে। এই বিল অনুযায়ী, আবাসনে ফ্ল্যাট বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়ার আগেই প্রকল্পটি কর্তৃপক্ষের কাছে নথিভুক্ত করাতে হবে। নথিভুক্ত না করিয়েই ফ্ল্যাট বিক্রি করলে বা নির্দিষ্ট সময়ে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করতে না পারলে মোটা জরিমানাও ধার্য করা হয়েছে। |
|
|
|
|
|