কেএলও প্রধান জীবন ধরা দেবেন, আশা পুলিশের
বার পুলিশের হাতে ধরা না দিয়ে কেএলও প্রধান জীবন সিংহের আর উপায় নেই। এমনটাই দাবি করছেন রাজ্য পুলিশ ও গোয়েন্দাদের একাংশ।
কারণ, তাঁদের মতে, টম অধিকারী ও মনচলাল সিংহের নেপালে ধরা পড়ার বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত হওয়ার পর সাংগঠনিক কাজকর্ম চালানোর মতো বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য লোকজন কেএলও-তে জীবন সিংহের হাতে আর রইল না। গোয়েন্দাদের দাবি, এখন যা অবস্থা, তাতে জীবনকে পুরোপুরি নির্ভর করতে হবে অসমের লোকজনের উপর, যেটা কেএলও চেয়ারম্যানের আদৌ পছন্দ নয়।
তবে পুলিশের একাংশের ধারণা, কেএলও-র চেয়ারম্যান ধরা দেবেন কেবল সম্মানজনক শর্তেই। টানা ১৪ বছর পুলিশের চোখ এড়িয়ে থাকার পর সাধারণ অপরাধীর মতো ধরা দেওয়া কোনও ভাবেই জীবন সিংহের পক্ষে সম্ভব নয় বলে ওই পুলিশকর্তাদের বক্তব্য। কী ভাবে, কার মাধ্যমে, কী ধরনের শর্ত তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে পাঠান, সে দিকে চোখ রাখছেন গোয়েন্দারা। জীবন সিংহ শেষ বার পুলিশের হাতে ধরা পড়েন ১৯৯৯-এর অক্টোবরে।
জলপাইগুড়ি জেলার অসম ঘেঁষা এলাকা কুমারগ্রাম এলাকার উত্তর হলদিবাড়ি গ্রামের তমির দাস-ই পরবর্তী সময়ে হয়ে ওঠেন কেএলও-র এক নম্বর নেতা জীবন সিংহ। আলিপুরদুয়ার কলেজের স্নাতক ও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী জীবন এখন চল্লিশোর্ধ্ব। অল কামতাপুর স্টুডেন্টস ইউনিয়নের (আকসু) শীর্ষনেতা হিসেবে ছাত্র জীবন থেকেই কামতাপুরি ভাষা ও রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষের উন্নয়নের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে তিনি সামনে আসেন। ১৯৯৫-এর ডিসেম্বরে কেএলও তৈরি হওয়া ইস্তক জীবনই তাঁর প্রধান।
২০০৩-এর ডিসেম্বরে ভুটান পাহাড়ে আলফা ও কেএলও দমনের লক্ষ্যে হওয়া সেনা অভিযান ‘অপারেশন ফ্লাশ আউট’-এর সময়েও জীবনকে ধরা যায়নি। রাজ্যে পালাবদলের পর ২০১১-র জুলাই মাসে রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, জীবন সিংহ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসার ব্যাপারে আগ্রহী। সেই সময়ে একই কথা জানান টম অধিকারীরাও। শেষ পর্যন্ত সেই বৈঠক আর হয়নি। উল্টে এক বছর পর টম, মালখান, মনচলালেরা ফিরে যান জঙ্গি শিবিরে।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, টম অধিকারী ওরফে জয়দেব রায় তাঁর অতি বিশ্বস্ত বলেই গত বছর এপ্রিল মাসে নেপালের ঝাপা জেলার এক গোপন আস্তানায় কেএলও-র ১৫ জনের কেন্দ্রীয় কমিটি তৈরি হওয়ার সময়ে ‘অসম লবি’-র সঙ্গে রীতিমতো লড়াই করে জীবন তাঁকে সংগঠনের দু’নম্বর জায়গা অর্থাৎ ভাইস চেয়ারম্যানের পদ দেন। চেয়ারম্যানের আর এক বিশ্বস্ত অনুচর মনচলাল ওরফে ডক্টর সংগঠনের অর্থসচিব ছিলেন বলে টাকাপয়সা লেনদেনের যাবতীয় ক্ষমতা বকলমে ছিল জীবনেরই হাতে। ওই দু’জনের ধরা পড়ার পাশাপাশি আবার গত ২৯ জানুয়ারি পুলিশ গ্রেফতার করেছে কেএলও-র সহকারী সাধারণ সম্পাদক প্রাণনারায়ণ কোচ ও ডেপুটি কমান্ডার-ইন-চিফ তরুণ থাপাকে। টম, মনচলালের মতো ওই দু’জনও কিন্তু উত্তরবঙ্গের ভূমিপুত্র।
শুধু তা-ই নয়, উত্তরবঙ্গের আর এক ভূমিপুত্র, মালদহের বাসিন্দা, কেএলও-র সাংগঠনিক সম্পাদক মালখান সিংহ ওরফে মাধব মণ্ডলকে অনেকটাই কোনঠাসা করে ফেলা গিয়েছে এবং মালখানের জালে পড়াটা শুধু সময়ের অপেক্ষা বলে পুলিশের একাংশের দাবি। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, এই পরিস্থিতিতে কেএলও-র রাশ প্রায় পুরোপুরি চলে গিয়েছে সংগঠনের কমান্ডার-ইন-চিফ তথা সামরিক প্রধান নিত্যান্দ সরকার ওরফে শ্যাম রায় ওরফে জামাই, সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক লাল সিংহ ডেকা, সাধারণ সম্পাদক কৈলাস কোচ ও সহকারী অর্থসচিব পঞ্চানন বর্মনের হাতে। এই চার জনই অসমের বাসিন্দা। আবার তাঁদের নির্দেশে অসম ও উত্তরবঙ্গে নাশকতামূলক কাজকর্ম চালাচ্ছে মূলত অনাথ ওরফে হিরণ্য ও র‌্যাম্বোর দল। এই দু’জনও অসমের।
বস্তুত, জীবন ও মালখানকে বাদ দিলে এই মুহূর্তে কেএলও-র কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাংস্কৃতিক সচিব, আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দা জীবেশ কোচ ও সহকারী প্রচার সচিব, দক্ষিণ দিনাজপুরের পিন্টু বরুয়া ছাড়া উত্তরবঙ্গের কেউ নেই। আবার এঁদের গুরুত্ব সংগঠনে তেমন কিছু নয়।
রাজ্য গোয়েন্দা শাখা (আইবি)-র এক কর্তা বলেন, “জীবনের সব চেয়ে বড় ভরসার জায়গা ছিল টম। সেই টম ধরা পড়া মানে জীবনের ডান হাত এক রকম কেটে যাওয়া।” ওই গোয়েন্দা-কর্তার বক্তব্য, এখন যা অবস্থা দাঁড়াল, তাতে জীবনকে পুরোপুরি জামাই, ডেকাএদের অঙ্গুলি হেলনে চলতে হবে। এটা জীবনের পক্ষে বেশি দিন মেনে নেওয়া সম্ভব নয় বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন।
পুলিশি সূত্রের খবর, ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে কেএলও-র দ্বাদশ ব্যাচের জঙ্গি প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে এক প্রতিবেশী রাষ্ট্রের দুর্গম জঙ্গলে। একই জায়গায় ২০১২ ও ২০১৩-তে কেএলও-র দশম ও একাদশ ব্যাচের সদস্যেরা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এই তিনটি ব্যাচের সদস্যসংখ্যা শ’দেড়েক বলে পুলিশের দাবি এবং ওই প্রশিক্ষিত যুবকদের মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশই অসমের বাসিন্দা। রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষকর্তার বক্তব্য, “গত বছর এপ্রিলে তৈরি হওয়া কেএলও-র ১৫ জনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে চেয়ারম্যান জীবন-সহ আট জন সদস্য ছিলেন উত্তরবঙ্গের ভূমিপুত্র।” কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে উত্তরবঙ্গের কেএলও নেতারাই কেন্দ্রীয় কমিটিতে সংখ্যালঘু। অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা অসমের কেএলও জঙ্গিরা কিন্তু এখনও পর্যন্ত এক জনও ধরা পড়েননি। আর তাঁরাই আপাতত পশ্চিমবঙ্গ, অসমএই দু’রাজ্যের পুলিশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.