ভুল মেনে বুদ্ধ ঠিক করেননি, বলল দল
নেতাই নিয়ে রীতিমতো ভুলের ভুলভুলাইয়ায় জড়িয়ে পড়ল সিপিএম!
নেতাই-কাণ্ডে ভুল স্বীকারের প্রশ্নে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পাশে দাঁড়াল না আলিমুদ্দিন। দলের মধ্যে বিতর্কের জেরে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব অনুমোদন করলেন না বুদ্ধবাবুর ওই মন্তব্য। শেষ পর্যন্ত শনিবার সন্ধেয় বুদ্ধবাবুর উপস্থিতিতে আলিমুদ্দিনে রাজ্য কমিটির বৈঠকে খানিকটা স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু জানিয়ে দিলেন, নেতাই নিয়ে ওই মন্তব্য না-করলেই ভাল হত!
মেদিনীপুরে গিয়ে গত সপ্তাহে কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই দলের পলিটব্যুরো সদস্য বুদ্ধবাবু মন্তব্য করেছিলেন, “নেতাইয়ে আমাদের ছেলেরা ভুল করেছিল। ভীষণ ভুল!” তাঁর ওই স্বীকারোক্তিতে শোরগোল পড়ে যায় সিপিএম-সহ গোটা বামফ্রন্টে। বিভিন্ন স্তরে প্রশ্ন উঠেছিল, বুদ্ধবাবু কেন হঠাৎ লোকসভা নির্বাচনের মুখে তিন বছর আগে তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্বের সময়ের ওই ঘটনা নিয়ে ভুল স্বীকার করতে গেলেন? কেনই বা বিচারাধীন একটি বিষয়ে এমন মন্তব্য করে শাসক দলের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হল, যা নিয়ে তারা ফের সরব হওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়? এই বিতর্কের জেরেই দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী আলোচনা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, বুদ্ধবাবুর মন্তব্য অনভিপ্রেত। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিসাবে যে মূল্যায়ন মেনে নিয়েছেন স্বয়ং বুদ্ধবাবুও। যার কিছুটা ইঙ্গিত মিলেছিল দু’দিন আগে টিভি চ্যানেলে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের মন্তব্যে। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, বিচারাধীন বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে চান না। কারণ, তাতে বিচার প্রক্রিয়া প্রভাবিত হতে পারে। দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বামফ্রন্টের ব্রিগেড সমাবেশের আগের সন্ধেয় সেই বৃত্ত সম্পূর্ণ করলেন।
ব্রিগেডের তোড়জোড় দেখতে গেলেন বিমান বসু। পাশে রয়েছেন
সিপিএম রাজ্য কমিটির সদস্য নিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
সাম্প্রতিক কালের মধ্যে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার প্রকাশ্য সভায় করা মন্তব্যের জন্য বুদ্ধবাবুকে দলের অন্দরে বিড়ম্বনায় পড়তে হল। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বণিকসভার একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তিনি এমন একটি দল করেন, যারা বন্ধ ডাকে। তোলপাড় হচ্ছে দেখে মন্তব্যের অব্যবহিত পরেই অবশ্য শুধরে নিয়েছিলেন তিনি। তার পরে ২০১২-য় প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে বুদ্ধবাবুকে বলতে হয়েছিল, বন্ধ নিয়ে ওই মন্তব্য করে ভুল করেছিলেন। ভবিষ্যতে সে ভুল আর হবে না। তার দু’বছরের মধ্যে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে আবার ভুল কবুল করতে বাধ্য করল দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী!
তিন বছর আগের জানুয়ারিতে লালগড়ের নেতাই গ্রামে গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল ৯ জন গ্রামবাসীর। অভিযোগ ছিল, গ্রামে সিপিএম নেতা রথীন দণ্ডপাটের বাড়ির সশস্ত্র শিবির থেকে তৎকালীন শাসক দলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা গুলি চালিয়েছিল। মাওবাদী মোকাবিলায় জঙ্গলমহলে সিপিএমের সশস্ত্র শিবির নিয়ে সেই সময় কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবু। দলের অন্দরে অবশ্য তিনি সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা নেতৃত্বের ‘প্রতিরোধ লাইনে’র বিরোধী ছিলেন। সেই বিরোধের সূত্র ধরেই গত সপ্তাহে মেদিনীপুরে দাঁড়িয়ে নেতাইয়ের ভুল স্বীকার করেন বুদ্ধবাবু। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার কিন্তু তার পরেও মাওবাদী-তৃণমূল চক্রান্তের তত্ত্বেই অটল থাকেন। আপাতদৃষ্টিতে এখন জয় হল দীপকবাবুদের অবস্থানেরই।
সিপিএমের রাজ্য কমিটির এক সদস্য অবশ্য ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, “নেতাইয়ের ঘটনা ঠিক ছিল না ভুল, সেই বিতর্কের কোনও মীমাংসা কিন্তু হয়নি। বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন ভুল সংক্রান্ত মন্তব্য করে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কৌশলগত ভাবে ঠিক করেননি, এটাই দলীয় নেতৃত্ব মনে করছেন।”
আমরা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে আলোচনা করেছি।
ওই কথা না বললেই ভাল হতো

রাজ্য কমিটিতেবিমান বসু
বুদ্ধবাবুর ভুল-মন্তব্যে অসম্মতির কথা বিমানবাবু জানিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও দলে এ নিয়ে জলঘোলা এ দিনও অব্যাহত থেকেছে। রাজ্য কমিটির বৈঠকে একাধিক নেতা প্রশ্ন তুলেছেন, দলে এত দিনেও কেন নেতাই নিয়ে কোনও পর্যালোচনা হল না? কেনই বা দলের পর্যালোচনার আগে প্রকাশ্যে ভুল স্বীকার করে আইনের চোখে দলের কর্মী-সমর্থকদের নড়বড়ে করে দিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী? শাসক দল যে হাতিয়ার পেয়ে গিয়েছে, তার মোকাবিলা করা যাবে কী ভাবে? পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা নেতৃত্বকে বার্তা দিতেই দীপকবাবুকে মঞ্চে বসিয়ে বুদ্ধবাবু যে ওই মন্তব্য করেছিলেন, আক্রমণের মুখে এ দিন অবশ্য সেই ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেননি বুদ্ধ-ঘনিষ্ঠ শিবিরের কেউ।
নেতাই ছাড়াও রাজ্যসভা ভোটে তাঁর পছন্দের প্রার্থী ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়েও এ দিন পরোক্ষে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় বুদ্ধবাবুকে। সিপিএম সূত্রের খবর, বর্ধমান জেলার প্রতিনিধি এ দিনের বৈঠকে সওয়াল করেন, ঋতব্রতের চেয়ে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যেত। রাজ্য জুড়ে নারী নির্যাতনের সময়ে কোনও মহিলা মুখকে রাজ্যসভায় পাঠালে ভাল বার্তা যেত। হুগলি জেলার দুই নেতা যুক্তি দেন, দিল্লিতে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে নিগ্রহের ঘটনায় ঋতব্রতের নাম জড়িয়েছিল এবং সেই ঘটনার জেরে রাজ্য জুড়ে দেড় হাজারেরও বেশি সিপিএম কার্যালয় ভাঙচুর হয়েছিল তৃণমূলের হাতে। এমন প্রার্থীকে রাজ্যসভার জন্য বেছে নেওয়ায় দলের নিচু তলায় প্রশ্ন উঠেছে বলে ওই দুই নেতা জানান। রাজ্য সম্পাদক বিমানবাবু অবশ্য ওই যুক্তি খারিজ করে দিয়েছেন।
কার্যত এই প্রসঙ্গটি বুদ্ধবাবু এবং তাঁর কট্টর সমালোচক আব্দুর রেজ্জাক মোল্লাকে যেন এক বিন্দুতে দাঁড় করিয়ে দিল রাজ্য কমিটি! ঋতব্রতকে নিয়ে যে বিতর্কের কথা উঠেছে, সেই প্রশ্ন আগেই তুলেছিলেন রেজ্জাক। কিন্তু যে পদ্ধতিতে তিনি প্রতিবাদ জানিয়েছেন, সংবাদমাধ্যমে লিখিত বিবৃতি পাঠিয়েছেন, তার প্রবল সমালোচনা হয়েছে রাজ্য কমিটিতে। আবার নেতাইয়ের ভুল নিয়ে মন্তব্যের জন্য রেজ্জাকই কটাক্ষ করেছিলেন, “এর পরে তো কোনও দিন উনি বলবেন, মুখ্যমন্ত্রী হওয়াই ভুল হয়েছিল!” দেখা গেল, সেই প্রশ্নে বুদ্ধবাবুরও পাশে দাঁড়াল না দল!
প্রবল বিতর্কে আপাতত কোণঠাসা এই বুদ্ধবাবুরই আজ, রবিবার ব্রিগেডের মঞ্চে ওঠার কথা প্রধান বক্তা হিসেবে!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.