নির্বাহী আধিকারিক পদ থেকে বিডিও-কে সরানোর প্রস্তাব
ন্নয়নমূলক কাজ না করে প্রায় ১৯ কোটি টাকা সরকারি তহবিলে ফেলে রাখার অভিযোগে নির্বাহী আধিকারিক পদ থেকে বিডিও-কে সরানোর প্রস্তাব নিল লালগোলা পঞ্চায়েত সমিতি। এমন ঘটনা আগে ঘটেছে বলে মনে করতে পারছেন না পঞ্চায়েত দফতরের কর্তারা।
গত ৩০ জানুয়ারি পঞ্চায়েত সমিতির সাধারণ সভার বিশেষ অধিবেশনে ওই সিদ্ধান্ত হয়। ওই বিষয়ে জেলাশাসকের মতামত-সহ পঞ্চায়েত সমিতির লিখিত সিদ্ধান্ত রাজ্য পঞ্চায়েত দফতরে জানাচ্ছে জেলা প্রশাসন। মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক রত্নাকর রাও বলেন, “পঞ্চায়েত দফতরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।” অভিযোগ প্রসঙ্গে বিশদে মুখ না খুললেও লালগোলার বিডিও স্বপ্নজিৎ সাহা বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যা সিদ্ধান্ত নেবেন, মেনে নেব।” রাজ্যের পঞ্চায়েত সচিব সৌরভ দাস বলেন, “এমন আগে হয়েছে বলে জানা নেই। কাজে দিল্লিতে রয়েছি। কলকাতায় ফিরে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে আগে ব্যাপারটা জানি। তার পরে কী করা যায়, দেখা হবে।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, গত ২৯ অগস্ট লালগোলার বিডিও-র দায়িত্ব নেন স্বপ্নজিৎবাবু। পদাধিকার বলে তিনি লালগোলা পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাহী আধিকারিক (এগজিকিউটিভ অফিসার)। তবে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কংগ্রেসের দীপশিখা হালদারের বক্তব্য, “দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই লালগোলার উন্নয়ন স্তব্ধ করে দিয়েছেন বিডিও। সে জন্যই বিশেষ অধিবেশন ডেকে ওঁকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
ওই পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সংখ্যা ৩৫। কংগ্রেসের ২৭, সাত জন সিপিএমের এবং এক জন আরএসপি-র। পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ছাড়াও পদাধিকার বলে বিশেষ অধিশেনের সদস্যেরা হলেন স্থানীয় সাংসদ, দু’জন বিধায়ক, তিন জন জেলা পরিষদের সদস্য এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ১২ জন প্রধান। সব মিলিয়ে ভোটাধিকার থাকা সদস্য সংখ্যা ৫৩। বিশেষ অধিবেশনে হাজির ছিলেন ৪৪ জন। সেখানেই নির্বাহী আধিকারিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে কথা হয়।
অভিযোগ নানাবিধ। যেমন লালগোলা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সুজাউদ্দিনের দাবি, ১৭৩টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ঘর গড়ার জন্য ১২ কোটি ১১ লক্ষ টাকা চার মাস ধরে সরকারি কোষাগারে পড়ে আছে। বিডিও তথা নির্বাহী আধিকারিক উদ্যোগী না হওয়ায় ঘর গড়া হয়নি। ঘরের অভাবে রোদ-বৃষ্টিতে শিশুরা খোলা আকাশের নীচে বসতে বাধ্য হয়, তাদের খিচুড়ি রান্না হয় আ-ঢাকা জায়গায়। বিডিও অবশ্য বলছেন, “জায়গার অভাবে ঘর গড়া যায়নি।” আর এক অভিযোগ, মানিকচক হাইমাদ্রাসা ও জুনিয়ার হাইমাদ্রাসার জন্য বরাদ্দ ১৬ লক্ষ টাকা ছ’মাস ধরে পড়ে থাকলেও ঘর তৈরি করা হয়নি। বিডিও-র দাবি, সেখানেও জমি-সঙ্কট রয়েছে। তা ছাড়া, সংস্কার ও নতুন রাস্তা গড়ার জন্য বিভিন্ন প্রকল্পে প্রায় ২ কোটি টাকা বরাদ্দ মাস ছয়েক ধরে পড়ে থাকা, মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র ও শিশু শিক্ষাকেন্দ্র মিলে ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঘর তৈরির প্রায় এক কোটি টাকা কয়েক মাস পড়ে থাকা, বার্ধক্যভাতা, বিধবাভাতা, প্রতিবন্ধী-ভাতা বাবদ প্রায় ৭৭ লক্ষ টাকা ছ’মাস পড়ে থাকা, শৌচালয় প্রকল্পের ৫২ লক্ষ টাকা পড়ে থাকা, লস্করপুর হাইস্কুলের পড়ুয়াদের জন্য বেঞ্চ কেনার টাকা (১ লক্ষ) অগস্টে মঞ্জুর হওয়ার পরেও এবং ৪০ দিনের মধ্যে ওই স্কুলকে বেঞ্চ সরবরাহ করার জন্য জেলাশাসক বিডিও-কে লিখিত নির্দেশ দিলেও, এ পর্যন্ত তা না হওয়ার মতো নানা অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগগুলি সম্পর্কে বিডিও-র বক্তব্য, “ওই সব ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছে, তা মনে নেই।”
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দীপশিখা হালদারের দাবি, “ওই সব প্রকল্পের টাকা পড়ে থাকার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বহু অনুরোধ করা হলেও বিডিও-র হেলদোল নেই। তিনি লাগাতার অসহযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছেন। চলতি অর্থবর্ষ শেষ হতে আর দু’মাসও সময় নেই। উন্নয়ন আটকে রেখে বরাদ্দ টাকা ফেরত পাঠানোর ফন্দি এঁটেছেন তিনি। তাই বাধ্য হয়েই পঞ্চায়েত আইনের ১১৯ ধারা অনুসারে তাঁকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।” পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সুজাউদ্দিন বলেন, “পঞ্চায়েত আইন অনুসারে বিশেষ অধিবেশনে উপস্থিত সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সম্মতিতে ওই সিদ্ধান্ত নিতে হত। লালগোলার ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ২৭ জনের ভোট লাগত। এখানে ওই বিশেষ অধিবেশনে উপস্থিত ৪৪ জন সদস্যই নির্বাহী আধিকারিক তথা বিডিও-কে তাঁর পদ থেকে অপসারণের সিদ্ধান্তে সম্মতি দিয়েছেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.