একই সুরে বাঁধা পড়েছে অতলান্তিক-বঙ্গোপসাগর
যেন অতলান্তিক মহাসাগরের বঙ্গোপসাগরীয় সংস্করণ!
গত বছরের অগস্ট থেকে নভেম্বর, একের পর এক নিম্নচাপ-ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছিল বঙ্গোপসাগরে। অতলান্তিক মহাসাগরেও গত মাস খানেক ধরে তৈরি হচ্ছে একের পর এক ঝড়।
বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড়ে বিপর্যস্ত হয়েছিল জনজীবন। অতলান্তিকে তৈরি হওয়া শীতকালের তুষারঝড়েও ব্রিটেন, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালির মতো দেশগুলির জনজীবন ব্যাহত হয়েছে। বন্যায় ডুবে রয়েছে ব্রিটেনের একাংশ। সমুদ্রগর্ভে চলে গিয়েছে সে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের একাংশ।
বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ-ঘূর্ণিঝড় অতি-সক্রিয় করে তুলেছিল মৌসুমি বায়ুকে। তার জেরেই অতি-বৃষ্টি হয়েছিল দেশের বহু রাজ্যে। আবহবিদেরা বলছেন, অতলান্তিকে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ বায়ুমণ্ডলের উপরিস্তরে থাকা জেট ফ্লো-কে (খুব কম পরিসরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া বায়ুপ্রবাহ, যার গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বা তার বেশি) টেনে নামিয়েছে। তার ফলেই ঝড়-বৃষ্টিতে কুপোকাৎ ইওরোপের একাংশ।

নানা রূপে
জায়গা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা*/ অবস্থা
নিউ ইয়র্ক -৪/ তুষারপাত
লন্ডন ৪/ বৃষ্টি
তেহরান -১১/ তুষারপাত
ধর্মশালা ৫.২/ বৃষ্টি
কলকাতা ২০/ গরম
* ডিগ্রি সেলসিয়াসে
কী ভাবে একই সুরে বেঁধে গেল বঙ্গোপসাগর ও অতলান্তিক?
আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের জলের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলেই বঙ্গোপসাগরে ঘনঘন নিম্নচাপ-ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছিল। অতলান্তিকেও জলের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে এই দুর্যোগ তৈরি করছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা, ইন্টার-গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)-এর সাম্প্রতিক রিপোর্টে একই রকমের পূর্বাভাস মিলেছিল। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছিল, বিশ্ব উষ্ণায়ণের জন্য বিশ্বের সর্বত্রই সমুদ্রে জলের তাপমাত্রা বাড়বে। ঘনঘন নিম্নচাপ-ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ায় আবহাওয়া প্রতিকূল হয়ে উঠবে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সুগত হাজরা বলছেন, “অতলান্তিকে যে এমনটা হবে, এটা আগে থেকেই আঁচ করা গিয়েছিল। গত কয়েক বছর ধরেই ওখানে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ বাড়ছিল।”
অতলান্তিকের দুর্যোগে এ বার কাবু আমেরিকাও। শীতকালে এ বার আমেরিকার কোথাও কোথাও তাপমাত্রা শূন্যের থেকে ত্রিশ-চল্লিশ ডিগ্রি নীচে নেমে গিয়েছিল। হয়েছিল তুষারঝড়-ও। তবে আমেরিকায় এই দুর্যোগের কারণটা অবশ্য ইওরোপের থেকে আলাদা।
কেন আমেরিকায় এমন অবস্থা হল?
আবহবিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, বিশ্ব উষ্ণায়ণের ফলে মেরু অঞ্চলে তাপমাত্রা বেড়েছে। সেখানে যে স্বাভাবিক ঘূর্ণাবর্ত থাকে, সেটি ভেঙেছে। উত্তর মেরু থেকে তা সরেছে উত্তর আমেরিকার দিকে। মেরু ঘূর্ণাবর্ত সরে আসার ফলেই উত্তর আমেরিকার এলাকাগুলিতে তাপমাত্রা এক লাফে শূন্যের অনেকটা নীচে নেমে গিয়েছে। প্রবল তুষারপাতও হয়েছে।
ইওরোপ-আমেরিকার এই দুর্যোগের প্রভাব ইরান ও আফগানিস্তানে পড়েছে। গত ৫০ বছরের নিরিখে ইরানের তেহরানে এ বার রেকর্ড তুষারপাত হয়েছে। আফগানিস্তানের হেলমন্দ প্রদেশেও প্রচুর তুষারপাত হয়েছে। পশ্চিমী ঝঞ্ঝা সেই তুষার-বার্তা বয়ে এনেছে কাশ্মীরে। ঝঞ্ঝার প্রভাবে কাশ্মীর ও সংলগ্ন হিমাচলপ্রদেশ-উত্তরাখণ্ডে প্রবল বৃষ্টি-তুষারপাত হচ্ছে। মৌসম ভবন সূত্রের খবর, শনিবার কাশ্মীরে একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা হাজির হয়েছে। সেটির পিছু-পিছু আরও একটি হাজির হতে পারে। তবে কলকাতা কিংবা দক্ষিণবঙ্গে এর প্রভাব পড়বে না বলেই মনে করছেন আবহবিজ্ঞানীরা।
বস্তুত, গত কয়েক দিন ধরেই কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের ছবিটাই পাল্টে গিয়েছে। শীত তো দূর অস্ত, শনিবার চড়া রোদের দাপটে কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা উঠে গিয়েছে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে ৪ ডিগ্রি বেশি! সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছে গিয়েছে ৩১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ঘটেছে হাওয়া-বদলও। উত্তুরে হাওয়ার বদলে কয়েক দিন ধরে মালুম হচ্ছে দখিনা হাওয়া। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “কাশ্মীরে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা হাজির হলেও এ দিকে তার প্রভাব পড়বে না। বরং দক্ষিণবঙ্গে তাপমাত্রা বাড়ছে। উত্তুরে হাওয়ার পথ বন্ধ। বইছে দখিনা বাতাস।”
কেন মাঘ শেষ হওয়ার আগেই উত্তুরে হাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেল?
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের এক বিজ্ঞানীর ব্যাখ্যা, এ সময় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি বা তার উপরে পৌঁছলেই হাওয়ার অভিমুখ বদলে যায়। ফলে উত্তুরে হাওয়ার বদলে দক্ষিণবঙ্গে ঢুকে পড়ে দখিনা বাতাস।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.