বাংলা সম্মান দিতেও জানে, নিতেও জানে। শনিবার কলকাতায় নব কলেবরে টেকনিশিয়ান্স স্টুডিও উদ্বোধন করে এমনই মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলাকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে তিনি যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, এ দিন তা-ও জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আপনারা বলতেই পারেন আমার প্রত্যাশা, উদ্দীপনা একটু বেশি। আসলে আমি স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি। বাংলা গড়ার স্বপ্ন। সেই লক্ষ্যেই বিশ্ব বাংলা ব্র্যান্ড চালু করেছি।” শুধু টেকনিশিয়ান্স স্টুডিওই নয়, এর পরে টেকনিশিয়ান্স (২) স্টুডিও গড়ার কাজে হাত দিতে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের সচিবকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে জানান, খুব শীঘ্রই রাধা স্টুডিও খুলে যাবে। মুখ্যমন্ত্রী ওই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানান প্রবীণ ও নবীন এক ঝাঁক শিল্পী। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “নতুন এই স্টুডিও পাল্লা দেবে চেন্নাই, মুম্বইয়ের সঙ্গে। আমার বিশ্বাস, এমন দিন আসছে যখন হলিউড-বলিউড বাংলায় আসবে।”
নব কলেবরে টেকনিশিয়ান্স স্টুডিও চালু হওয়ায় উচ্ছ্বসিত সিনেমা জগতের শিল্পী ও কলাকুশলীরা। অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “আগে এর নাম ছিল কালী স্টুডিও। পরে টেকনিশিয়ানরা তা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। নাম হয় টেকনিশিয়ান্স স্টুডিও।” এক সময়ে সরকার তা অধিগ্রহণও করে। কিন্তু সরকারের অধীনে থাকলেও স্টুডিওর পুনরুদ্ধারে কাজ হয়নি। রীতিমতো ঝোপঝাড় আর জঙ্গলে ভরে গিয়েছিল স্টুডিও চত্বর। অভিনেত্রীদের বসার ভাল জায়গাও ছিল না বলে জানান সাবিত্রীদেবী। তাঁর কথায়, “জীর্ণ সেই স্টুডিও ফের মাথা তুলে দাঁড়াল। পুরনোকে ধ্বংস না করে, নতুনকে তার সঙ্গে মিলিয়ে ওই স্টুডিওকেই আকর্ষণীয় করে তুলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।” |
নতুন সাজে টেকনিশিয়ান্স স্টুডিও। প্রদীপ জ্বেলে উদ্বোধন করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সঙ্গে রয়েছেন (বাঁ দিক থেকে) দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, মাধবী মুখোপাধ্যায়, মুনমুন সেন, দীপঙ্কর দে,
সন্ধ্যা রায়,
রঞ্জিত মল্লিক, মনোময় ভট্টাচার্য, তাপস পাল, প্রসেনজিৎ, চিরঞ্জিত প্রমুখ। শনিবার। ছবি: প্রদীপ আদক। |
অনুষ্ঠান মঞ্চে রঞ্জিত মল্লিক মনে করিয়ে দেন, এক সময়ে ওই স্টুডিও বেচে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল পূর্বতন সরকার। তখন শিল্পী ও কলাকুশলীরা একযোগে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিলেন।
মমতা বলেন, “সরকারি সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অরূপকে (মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস) সে সময়ে শিল্পীদের পাশে দাঁড়াতে বলি। আমি নিজেও মিছিল করেছিলাম।” শিল্পীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতেই সরকার সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটে। দীপঙ্কর দে বলেন, “ক্ষমতায় বসেই টেকনিশিয়ান্স স্টুডিও সংস্কারের কাজকে অগ্রাধিকার দেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রায় প্রতিদিনই দ্রুত গতিতে কাজ হওয়ায় ফের মাথা তুলে দাঁড়াল এই স্টুডিও।” প্রসেনজিতের কথায়, “বহু আন্দোলন করেছি। এক সময়ে মনে হয়েছিল স্বপ্ন আর বোধহয় পূরণ হবে না। কিন্তু দিদির (মুখ্যমন্ত্রী) ছোঁয়ায় আমাদের সেই মন্দিরের দরজা আজ ফের খুলে গেল।”
নতুন ভাবে গড়ে ওঠা ওই স্টুডিওয় ৬টি ফ্লোর করা হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। সেগুলি সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন, তপন সিংহ ও ঋতুপর্ণ ঘোষের নামে করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে বক্তৃতার মধ্যেই একাধিক শিল্পী ইন্দ্রপুরী স্টুডিওর কথাও তোলেন। সেটি অবশ্য বেসরকারি পরিচালনাধীন। তবে সেই স্টুডিওর সংস্কারের ব্যাপারেও সরকার যে যথেষ্ট আগ্রহী, তা-ও এ দিন জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত তথ্য-সংস্কৃতি সচিব অত্রি ভট্টাচার্যকে নির্দেশ দেন, “ওই স্টুডিও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলুন। ওটা ডেভেলপ করা দরকার। ওঁরা রাজি হলে ভাল, না হলে আমার কাছে অস্ত্র আছে।” তিনি চান ইন্দ্রপুরী স্টুডিও ভাল ভাবে গড়ে উঠুক। শিল্পীদের কথায়, এক সময়ে সেখানে ১৩টি ফ্লোর ছিল। এখন তার অনেকগুলিতেই কাজ হয় না।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাধা স্টুডিও প্রায় তৈরি। এ দিন তারও উদ্বোধন হতে পারত। কিন্তু কেন হল না, সে কথা জানতে চান তথ্য-সংস্কৃতি সচিবের কাছে। সচিব জানান, দমকল দফতর থেকে অনুমোদনের চিঠি না আসায় আটকে রয়েছে। শুনেই মমতা হাসতে হাসতে বলেন, ‘‘আমায় বিষয়টি জানাতে পারতেন, তবেই হয়ে যেত।” আগামী সাত দিনে ওই কাজ শেষ করে রাধা স্টুডিও খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেন অত্রিবাবুকে। আর মাত্র ২৪ মাসে টেকনিশিয়ান্স স্টুডিওর কাজ সমাপ্ত করার জন্য পূর্ত দফতর ও টালিগঞ্জের বিধায়ক তথা মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠান শেষে শিল্পীদের সঙ্গে পুরো স্টুডিওর ফ্লোরগুলি ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। অরূপবাবু জানান, স্টুডিও দেখে রীতিমতো খুশি মুখ্যমন্ত্রী। |