ভূত বোধহয় এ ভাবেই ভবিষ্যতের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়।
সালটা ছিল ১৯৮৯। এক ম্যাগাজিনে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গবেষক ইওইচি মাসুজো বলে বসলেন “ঋতুস্রাবের সময় মহিলারা মোটেও স্বাভাবিক থাকেন না...ফলে দেশের কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব তাঁদের দেওয়া সম্ভব নয়।”
সে সময় বিষয়টি নিয়ে হইচই না হলেও চব্বিশ বছর বাদে সেই মন্তব্যের ভূত ‘আসিয়াছে ফিরিয়া।’ যার জেরে বেশ সমস্যায় পড়ে গিয়েছেন খোদ মাসুজো।
আসলে, আসন্ন গভর্নর নির্বাচনে অন্যতম প্রার্থী তিনি। রবিবার অর্থাৎ আগামিকালই সেই ভোট। কিন্তু তার আগে চলতি সপ্তাহেই টুইটারে এক দল মহিলা জিগির তুলেছেন, যে পুরুষ মাসুজোকে ভোট দেবেন, তাঁদের সঙ্গে কোনও রকম যৌন সম্পর্ক তৈরি করবেন না মহিলারা।
ইতিমধ্যেই টুইটারে ব্যাপক সাড়া পেয়েছে এই উদ্যোগ। সপ্তাহ না পেরোতেই প্রায় তিন হাজার ‘অনুগামী’ তৈরি হয়েছে ‘দ্য অ্যাসোসিয়েশন অব উইমেন হু উইল নট হ্যাভ সেক্স উইথ মেন হু ভোট ফর মাসুজো’ নামে ওই ‘ভার্চুয়াল’ সংগঠনের। তাদের স্পষ্ট দাবি, “মাসুজোর মতো মানুষ যে কি না মেয়েদের বিরুদ্ধে এমন অপমানজনক কথা বলে, তাঁকে থামাতেই আমরা একজোট হয়েছি।” আর তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন আরও এক দল মহিলা। মাসুজোর বিরোধিতা করে তাঁরাও গত বুধবার একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেন। তাতে ইতিমধ্যেই ৭৫ হাজার ‘হিট’ পড়েছে। প্রায় আঠাশশো মানুষ সেই মাসুজো বিরোধিতাকে প্রকাশ্যে সমর্থনও করেছেন।
কিন্তু স্রেফ মাসুজার মন্তব্যের বিরোধিতা করে জাপানি সমাজের সামগ্রিক ধ্যান-ধারণা কি বদলানো যাবে?
এ মুহূর্তে অন্তত সে রকম আশার ইঙ্গিত নেই। তথ্য বলছে, টোকিওর গভর্নর নির্বাচনে যে ষোলো জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই পুরুষ। শুধু তা-ই নয়, প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ক্যাবিনেটে যে ১৯ জন মন্ত্রী রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে মাত্র দু’জন মহিলা। বেসরকারি ক্ষেত্রেও উঁচু পদে কর্মরত মহিলাদের সংখ্যা বেশ কম। কিন্তু কেন এমন? পাশ্চাত্যের ধাঁচে গড়ে ওঠা জাপান মহিলাদের এগিয়ে যাওয়া নিয়ে উদাসীন কেন?
বাসিন্দাদের একাংশ এর পিছনে অবশ্য জাপানের পারিবারিক গঠনকেই দায়ী করেছেন। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত মহিলাদের বেশির ভাগই পরিবার, সন্তান ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় নিজেদের পেশাদার জীবনে কম বয়সেই ইতি টানেন।
ফলে সরকারি বা বেসরকারি দু’ক্ষেত্রেই তাঁদের এগিয়ে যাওয়া থমকে যায়। আসলে আজও পরিবারের দেখভালে মহিলাদের ভূমিকাটা অতীতের মতোই। সেই টানেই থমকে যায় ভবিষ্যৎ।
কিন্তু তা বলে এমন মন্তব্য? চুপচাপ মেনে নিতে মোটেও রাজি নন জাপানি মহিলারা। হোক না সে মন্তব্যের বয়স চব্বিশ বছর, তাতে তো আর তার ধার কমে না। অতএব বিরোধিতা। যা-তা নয়, সটান যৌন সম্পর্ক বয়কট।
এর পরিণাম কী হবে, তা জানে একমাত্র ভবিষ্যৎ। তবে সেই পুরনো মন্তব্যের ভূত যে মাসুজার ভবিষ্যৎকে তাড়া করে বেড়াবেই, তা মোটামুটি নিশ্চিত। |