মন্দিরের গায়েই বাড়ি, ভাঙল প্রশাসন
বিভিন্ন মহল থেকে অনেক আগেই অভিযোগ উঠেছিল। প্রশাসন নোটিস দিয়ে সতর্কও করেছিল। তার পরেও কাজ না হওয়ায় এ বার যন্ত্র দিয়ে ভেঙে ফেলা হল অবৈধ নির্মাণ।
মন্দির নগরী বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্যাবাহী মন্দিরগুলির কাছে তৈরি করা কয়েকটি নির্মাণ শুক্রবার পুলিশ নিয়ে মহকুমা প্রশাসন ও ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের আধিকারিকরা দাঁড়িয়ে থেকে ভেঙে দিলেন। এতদিনের প্রশাসনের এই সদিচ্ছা দেখে খুশি বিষ্ণুপুরবাসীও। অভিযান চলাকালীন ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের বিষ্ণুপুর উপ-মণ্ডলের সিনিয়র কনর্জাভেশন অ্যাসিস্ট্যান্ট অর্ণব দাস বলেন, “আমাদের সংরক্ষিত কোনও মন্দিরের ৩০০ মিটারের মধ্যে কোনও নির্মাণ বৈধ নয়। এই বিধি সংরক্ষিত মন্দিরের পাশেই বোর্ডে লিখে দেওয়া গয়। অথচ এই মন্দির নগরীতে সেই নিয়ম মানা হচ্ছে না। আমরা ৫০ জনের বেশি অবৈধ নির্মাণকারীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। এ বার জেলা প্রশাসনের সাহায্যে অভিযান শুরু করা হল।”
শুক্রবার কয়েকটি এলাকায় এমনই অবৈধ নির্মাণ ভাঙা হল।
রাসমঞ্চের কাছেও নিয়ম ভেঙে বাড়ি তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ।
এ দিন সকাল ন’টা নাগাদ বিষ্ণুপুর রাজবাড়ি সংলগ্ন জোড়বাংলা মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয় অভিযান। বিধি ভেঙে ওই মন্দিরের ১০০ মিটারের মধ্যে তৈরি করা হচ্ছিল একটি পাকা ঘর। প্রথমে খোঁজ করে সেই ঘরের দাবিদার কাউকে পাওয়া যায়নি। শেষে ভাঙচুর শুরু করা হয়। তবে বাধাও দিতে কেউ আসেনি।
অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক পলাশ সেনগুপ্ত পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে দুপুরে পৌঁছন ছিন্নমস্তা রোড লাগোয়া জোড়শ্রেণির মন্দিরগুলির কাছে। সেখানে গিয়ে তাঁরা দেখেন কাছেই একটি পাকা বাড়ি তৈরির কাজ চলছে। একেবারে মন্দিরের গায়ে তালা মারা রয়েছে একটি পাকা বাড়ি। পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে ওই দু’টি বাড়ি এ দিন মেশিন দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়। এখানেও বাড়ির মালিকদের সামনে আসতে দেখা যায়নি।
পাশেই বাড়ি ভাঙা হচ্ছে ও পুলিশ-প্রশাসনের লোকজন দেখে ভয় পেয়ে যান লাগোয়া বাড়ির মহিলারা। তাঁরা কান্নাকাটি জুড়ে দেন। তাঁরা দাবি করেন, “১০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে এলাকার মানুষের কাছ থেকে আমরা এই জায়গা কিনেছি। সরকারি নিয়ম-কানুন জানতাম না। দয়া করে আমাদের বাড়ি ভাঙবেন না।” তবে ওই বাড়িগুলি এ দিন ভাঙা হয়নি।
ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের সংরক্ষিত সৌধের ৩০০ মিটারের মধ্যে নির্মাণ অবৈধ। এই বিধি
ভেঙেই বিষ্ণুপুরের টেরাকোটা মন্দিরগুলির প্রায় গা ঘেঁষে তৈরি হয়েছে ঘর-বাড়ি।
বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক পলাশ সেনগুপ্ত বলেন, “জোড়বাংলা মন্দিরের কাছে একটি অবৈধ নির্মাণ হচ্ছে বলে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের মাধ্যমে তা জানতে পাই। এরপরেই আমরা ওই কাজ বন্ধ করে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিই। জানানো হয়েছিল ১৫ দিনের মধ্যে তা না ভাঙা হলে আমরা ব্যবস্থা নেব।” তিনি জানান, ওই বাড়িটি ভাঙা হয়নি। তাই ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে ওই বাড়ি ভাঙা হয়। জোড় শ্রেণির মন্দির সংলগ্ন স্থানেও দু’টি বাড়ি অবৈধ হওয়ায় ভাঙা হয়েছে।
তিনি জানান, বিষ্ণূপুরের মন্দির লাগোয়া এলাকায় অবৈধ নির্মাণ নিয়ে একটি প্রশাসনিক বৈঠক আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ডাকা হয়েছে। সেখানে এমন আরও যে সব অবৈধ নির্মাড় রয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
বিষ্ণুপুরের বাসিন্দাদের দাবি, রাসমঞ্চ ও লালজিউ মন্দির লাগোয়া জায়গায় বহু বাড়ি এমনই বিধি ভেঙে তৈরি করা হয়েছে। দলমাদল কামান ও গড়দরজার কাছেও কয়েকটি এমন বাড়ি রয়েছে। তাঁদের দাবি, প্রশাসন না থেমে এ বার ওই নির্মাণগুলিও ভাঙতে উদ্যোগী হোক।

ছবি: শুভ্র মিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.