খেত দাপিয়ে হায়না পাকড়ে শুরু চিকিৎসা
শিকারিদের পাতা ফাঁদে আটকে পড়ে ছটফট করতে গিয়ে গুরুতর আহত হল একটি হায়না। ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় ফাঁদের মোটা দড়ি ছিঁড়ে জঙ্গল থেকে কাকভোরে লোকালয়ের কাছে চলে আসে সেই হায়না। স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে সেই হায়নাকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলেন বনকর্মীরা। শুরু হল তার চিকিৎসা।
শুক্রবার সকালে কোটশিলা থানার চৈতনডি গ্রামের কাছে এই ঘটনাটি ঘটে। বন দফতর সূত্রে জান গিয়েছে, হায়না বিরল প্রজাতির (সিডিউল ৪ পযার্য়ভুক্ত) প্রাণী। পুরুলিয়ার সুরুলিয়া মিনি চিড়িয়াখানায় হায়নাটির প্রাথমিক চিকিৎসা চলে। পরে ঝাড়গ্রামের মিনি চিড়িয়াখানায় তাকে পাঠানো হয়।
প্রায় সাড়ে চার ফুট লম্বা ও ফুট তিনেক উচ্চতার খয়েরি ও কালো ডোরাকাটা প্রাণীটিকে উদ্ধার করতে রীতিমতো নাটক জমে ওঠে কোটশিলা রেঞ্জের ওই গ্রামে। এ দিন ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ কোটশিলা বন দফতরে খবর আসে চৈতনডি গ্রামের কাছে বাঘের মতো একটা জন্তুকে এলাকায় দেখা গিয়েছে।
পুরুলিয়ায় চিকিৎসা করতে আনা হয় হায়নাটিকে। ছবি: প্রদীপ মাহাতো।
হায়না এলাকার মানুষজনের কাছে ‘আধবাঘা’ বলে পরিচিত। তার উপরে প্রমাণ আকারের খয়েরি ও কালো ডোরাকাটা জন্তুটিকে কাকভোরে এলাকায় দেখে বাঘ বলে রটে যায়। কোটশিলা থেকে বনকর্মীরা যখন ওই এলাকায় পৌঁছন তখন ওই প্রাণীটিকে ঘিরে কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়ে গিয়েছেন। অবস্থা বেগতিক দেখে ঝালদা থেকেও আসেন বনকর্মীরা। বনকর্মীরা এলাকায় পৌঁছে দেখেন একটি সর্ষে খেতের মধ্যে যে প্রাণীটি সেঁধিয়ে রয়েছে, সেটি একটি হায়না।
ঝালদার রেঞ্জ অফিসার সমীর বসু বলেন, “হায়না বাঘের মুখ থেকে খাবার কেড়ে খায়। সাহসীও। কিন্তু এত লোকজন দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিল।” এ দিকে বেলা বাড়তেই লোকের মুখে মুখে আধবাঘার খবর ছড়িয়ে পড়ে। লাঠিসোটা হাতে বেশকিছু লোকজন সেখানে জড়ো হন। ক্রমশই ভিড় বাড়তে থাকে। বনকর্মীরা তো এসেছেন। কিন্তু হায়না ধরা যাবে কী দিয়ে তা ভেবে পাচ্ছেন না তাঁরা। সঙ্গে জাল নিয়ে এসেছেন বটে। কিন্তু সেই জাল ছুঁড়ে প্রাণীটিকে পাকড়াও করতে গিয়ে তাঁরা দেখেন জাল গিয়ে পড়ছে সর্ষে খেতের উপরে। কিন্তু খেতের মধ্যে সেঁধিয়ে থাকা হায়নার নাগালে জাল পড়ছে না।
উপস্থিত জনতার চিৎকার বাড়তে থাকায় কয়েকবার তাঁদের দিকে লাঠি নিয়ে তেড়ে যান পুলিশকর্মীরা। বেগতিক বুঝে হায়নাটি পাশের একটি ধানের গাদায় ঢুকে পড়ে। সেখান থেকে খোঁড়াতে খোঁড়াতে আশ্রয় নেয় একটি বাঁশবনে। তখন বনকর্মীদের চোখে পড়ে হায়নাটির সামনের বাঁ পায়ে লোহার একটি ফাঁদ আটকে রয়েছে। কয়েকজন বনকর্মী বুদ্ধি খাটিয়ে হাতের কাছে থাকা একটি শতরঞ্জি নিয়ে হায়নাটিকে চেপে ধরেন। তোলা হয় গাড়িতে।
তাতেও শেষ হয়নি। মাঝ রাস্তায় গাড়ির মধ্যেই বাঁধন ছিঁড়ে ফেলে হায়নাটি। ওই গাড়িতে ছিলেন ঝালদা রেঞ্জের কর্মী সঞ্জীবকুমার দাস। তিনি বলেন, “আমি মাঝের সিটে বসেছিলাম। হায়নাটি পিছনে ছিল। আচমকা অনুভব করি ঘাড়ে কার শ্বাস পড়ছে। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি হায়নাটি বাঁধন ছিঁড়ে পিছনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তারপর কাঠ দিয়ে অন্য কর্মীরা হায়নাটিকে ঠেসে ধরে পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে সুরুলিয়ায় নিয়ে আসেন।
কোটশিলা রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার ললিতমোহন মাহাতো বলেন, “লোহার ফাঁদটি হায়নাটির পায়ে চেপে থাকায় অনেকটা কেটে গিয়েছিল। তাই ওকে সুরুলিয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়।” সমীরবাবু বলেন, “যন্ত্রণায় হায়নাটি অনেকটাই কাতর হয়ে পড়েছিল।” প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের চিকিৎসক তপনকুমার বসাক বলেন, “লোহার ফাঁদ পায়ে আটকে পা টা অনেকটাই কেটে গিয়েছিল। চারটে সেলাই দিতে হয়েছে।” পুরুলিয়ার এডিএফও সমীরণ মজুমদার বলেন, “যে ভাবে হায়নাটিকে লোকজন ঘিরে ফেলেছিল এবং যেরকম রটে গিয়েছিল, তাতে বনকর্মীরা সময়মতো না পৌঁছলে ওকে হয়তো মেরেই ফেলত। হায়নাটিকে বাঁচানো গিয়েছে। পরে হায়নাটিকে ঝাড়গ্রাম মিনি জু-তে পাঠানো হয়েছে। সেখানে হায়নাটি ভালো পরিবেশ পাবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.