সম্পাদকীয় ২...
ধর্ম নহে
যান-চলাচলের রাস্তা হউক কিংবা বিমানবন্দরের রানওয়ে, এ দেশে পথ জুড়িয়া ধর্মস্থান গজাইয়া ওঠার বিরাম নাই। আর, এক বার কোথাও কোনও ধর্মস্থান গজাইয়া গেলে তাহার অপসারণ প্রায় অসম্ভব হইয়া ওঠে। ফলে রাস্তা কিংবা রানওয়ে, কোনওটিরই সম্প্রসারণ আর সম্ভব হয় না। কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ পূর্ত দফতর কিংবা পুরসভা ‘ধর্মীয় আবেগে আঘাত লাগা’র শঙ্কায় ধর্মস্থান সরাইবার পরিকল্পনা গ্রহণে অগ্রসর হয় না। ফলে বিভিন্ন ধর্মের বিভিন্ন স্থান অটুট থাকে, বস্তুত নিত্য সেগুলির শ্রীবৃদ্ধি হয়, কলেবর বাড়িতে থাকে, তাহার সহিত তাল মিলাইয়া বাড়িতে থাকে তাহাদের মাহাত্ম্যও। সেই মহিমার তাড়নায় পথ এবং যানবাহন ঘুরাইয়া দেওয়া হইতে থাকে। বিমান অবতরণের পরিসরও স্থানান্তরিত হয়। তথাকথিত ধর্মীয় আবেগে আঘাত না-করার নামে এ ধরনের অনাচার চলিতে থাকে। অতীতেও চলিয়াছে, এখনও চলিতেছে।
প্রগতিশীল, সচেতন পশ্চিমবঙ্গে এমন অন্ধ কুসংস্কারপ্রিয়তা আপাতদৃষ্টিতে বেমানান, কিন্তু ইহাই এ রাজ্যের ধারা। ঝাড়খণ্ড এবং বিহার ইতিপূর্বে উন্নয়নের বাধাস্বরূপ একাধিক ধর্মস্থানকে বুলডোজার দিয়া বিদায় করিয়াছে। এ ব্যাপারে ধর্মের বাছবিচার করা হয় নাই। এমনকী যে গুজরাত ‘হিন্দুহৃদয়সম্রাট’ নরেন্দ্র মোদীর ঘাঁটি, সেখানেও এক সময় অমদাবাদ-গাঁধীনগরে ৮০টি মন্দির পথ জুড়িয়া থাকায় সেগুলি গুঁড়াইয়া দেওয়া হয়। হিন্দুত্ববাদীরা প্রতিবাদে আন্দোলনে নামেন, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ অবরোধ করে। মোদী কিন্তু ধর্মবিশ্বাসের নামে উন্নয়নের অশ্বগতি রুদ্ধ করিতে সম্মত হন নাই। সত্য ইহাই যে, দেবতাদের তত মন্দিরের প্রয়োজন নাই, যতটা মানুষের, বিশেষত ধর্মব্যবসায়ী মানুষের আছে। তবে কেন বেচারা মানুষকে, পথচারীকে, নিত্যযাত্রীকে, যানবাহনের সওয়ারিকে তাঁহাদের জন্য পথের অধিকার ছাড়িতে হইবে? যদি এই যুক্তিতে পথজোড়া ধর্মস্থানে বুলডোজার প্রয়োগ করিয়া মনুষ্যের জন্য নির্দিষ্ট পথ ও পরিসরের বাধা দূর করা হয়, তবে তাহা যুক্তির কাজ।
পশ্চিমবঙ্গের সচেতন সমাজ কবে এই যুক্তি শিরোধার্য করিবে? অন্য যে কোনও ইমারতের মতোই ধর্মস্থানও বেআইনি ভাবে, বিনা অনুমতিতে, জনসাধারণের অসুবিধা করিয়া তৈয়ার করা হইলে অথবা জনস্বার্থে তাহার অপসারণ জরুরি হইলে তাহা অপসারণ করা উচিত এই সজ্ঞান সিদ্ধান্তে বঙ্গবাসী কবে উপনীত হইবে? এ ধরনের ধর্মস্থান সরাইয়া দিলে যে ধর্ম বিপন্ন হয় না, এই সত্যটি কবে উপলব্ধ হইবে? এক এক সময় সন্দেহ হয়, রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ (যাহার নেপথ্যে আসলে রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের অঙ্গুলিহেলন রহিয়াছে) ধর্মীয় আবেগের নামে ইচ্ছাকৃত ভাবেই ধর্মব্যবসায়ীদের তোষণ করিয়া চলেন এই আশায় যে, নির্বাচনের সময় ভোটারদের সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ ঘটাইয়া তাহারা কর্তৃপক্ষের সুবিধা করিয়া দিবে। অন্যথায় এই ধরনের বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রথমাবধি কর্তৃপক্ষ কড়া ব্যবস্থা লয় না কেন? কেন চোখের সামনে একটু-একটু করিয়া বেআইনি দেবালয় গড়িয়া উঠিতে দেখিয়াও প্রশাসন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ অন্য দিকে মুখ ফিরাইয়া থাকেন? অঙ্কুরেই যে অনাচার বিনাশ করা দরকার, তাহাকে বাড়িতে, পল্লবিত ও বিকশিত হইতে দিয়া পরে তাহার উচ্ছেদে অসহায়তার ভান করা এখন দস্তুর। বামফ্রন্ট আমলেও এই রীতি ক্রমাগত অনুসৃত হইয়াছে, বর্তমান জমানাতেও তাহার কোনও পরিবর্তন দৃশ্যমান নয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.