সম্পাদকীয় ১...
সংরক্ষণের ফাঁদ
নির‌্বাচনের ঢাক বাজিল বলিয়া, এই মরসুমে এমনিতেই বিড়ম্বনার শেষ নাই, তাহার মধ্যে আর এক ফ্যাসাদে পড়িয়াছেন সনিয়া গাঁধী। সাততাড়াতাড়ি তাঁহাকে পরিস্থিতি সামলাইতে ছুটিতে হইয়াছে। জোরগলায় বলিতে হইয়াছে: না, কংগ্রেস জাতভিত্তিক সংরক্ষণ রদ করিবার পক্ষে নহে, বরং নীতিগত ভাবেই ইহার সমর্থক। এই সংকটের কারণ সর্বভারতীয় কংগ্রেসের জেনারেল সেক্রেটারি জনার্দন দ্বিবেদী। কয়েক দিন আগে তিনি ‘বেফাঁস’ মন্তব্য করিয়া বসিয়াছিলেন যে জাতভিত্তিক সংরক্ষণ অযৌক্তিক, কংগ্রেসের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ‘ভাবী’ নেতা রাহুল গাঁধী এই অযৌক্তিক নীতি রদ করিয়া আর্থিক ভাবে অনগ্রসর বর্গের জন্য সংরক্ষণ চালু করিতে উদ্যোগী হউন। সেই প্রেক্ষিতেই কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট সনিয়া গাঁধীর এই সামাল সামাল দৌড়। একে অতি সংবেদনশীল বিষয়, তাহাতে দ্বিবেদীর পরিচিতি সনিয়া গাঁধীর ঘনিষ্ঠ হিসাবেই। স্বভাবতই জল্পনা শুরু হয়, দ্বিবেদীর অবস্থান কি তবে হাইকম্যান্ডেরই অবস্থান, কংগ্রেস কি তবে জাত-রাজনীতির অন্য কারবারিদের বিষয়ে কোনও বার্তা দিতে চাহিতেছে ইত্যাদি। সংশয়-বিরক্তি ছড়াইতে শুরু করে সমাজবাদী পার্টি এবং বহুজন সমাজ পার্টির অন্দরে, যাহারা নির্বাচনের পর কংগ্রেসের জরুরি শরিক হইলেও হইতে পারে। সনিয়া গাঁধীর পক্ষে সত্বর আসরে নামা ও দ্বিবেদীর বক্তব্যের সঙ্গে দলগত অবস্থানের দূরত্ব ঘোষণা করা ছাড়া গত্যন্তর ছিল না।
আকারে ছোট হইলেও ঘটনাটি প্রকারে ছোট নহে, বরং ইহার মধ্যে ইতিহাসের এক আশ্চর্য পরিহাস রহিয়াছে। কী বলিয়াছিলেন দ্বিবেদী? বলিয়াছিলেন, জাতভিত্তিক সংরক্ষণ কত কাল চলিতে পারে? ইহাতে তো তথাকথিত ‘পিছড়ে বর্গ’ জনতার সত্যকারের উন্নয়ন হইতেছে না, মাঝখান হইতে লাভের গুড় খাইয়া যাইতেছে দলিত নামাঙ্কিত সমাজের উচ্চ-গোষ্ঠীগুলি। বরং অর্থনৈতিক ভাবে পিছাইয়া পড়া জনসাধারণের জন্য আলাদা ভাবে কোনও সংরক্ষণ করা যায় কি না, তাহা ভাবা দরকার। সংরক্ষণের পক্ষে-বিপক্ষে অজস্র যুক্তির জটাজালে না ঢুকিয়াও বলা যায় যে, দ্বিবেদীর মন্তব্য ব্যতিক্রমী উচ্চারণ নহে, সামাজিক প্রগতি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পন্থী বহু নেতা ও চিন্তাবিদ এমন মনে করিয়া থাকেন। স্বয়ং কংগ্রেসও এক দিন এই মতেই বিশ্বাস করিত। এক শত বৎসরও পুরে নাই, এক বরেণ্য কংগ্রেস নেতা জাত-সংরক্ষণের বিরুদ্ধে বারংবার অনশনে বসিয়া প্রতিবাদ জানাইয়াছিলেন। এমনকী গত নব্বই-এর দশকে যখন মণ্ডল কমিশন প্রস্তাবগুলি সামনে আসিল, মূলস্রোতের দলগুলির বিরূপতা ছিল অত্যন্ত প্রকাশ্য। বিজেপি তো বটেই, কংগ্রেসের অভ্যন্তরেও তখন সংরক্ষণবিরোধী প্রতিবাদের ঝড় ছিল তীব্র।
তিন দশকও কাটে নাই, সংরক্ষণের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দ তোলা ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক ‘মহাপাপ’ হইয়া বসিয়াছে। কালের কপোলতলে ভারতীয় রাজনীতির হাল-হকিকত ভোল পাল্টাইয়া সংরক্ষণকে এখন রাজনৈতিক দলগুলির একটি অবশ্যমান্য নীতি করিয়া ছাড়িয়াছে। কিছু কিছু ‘পরিবর্তন’ এক বার ঘটিলে আর তাহাকে ফেরানো যায় না। জাত-রাজনীতি অধ্যুষিত ভারতের ‘পরিচিতির রাজনীতি’র প্রবল ঝড়ে আজ সংরক্ষণ লইয়া সংশয়, দ্বিধা বা উপেক্ষা প্রকাশ করিয়া ভোট-গণতন্ত্রে কোনও দলই নিজের অস্তিত্ব টিঁকাইয়া রাখিতে পারিবে না। দেশের অধিকাংশ জনসমাজের মধ্যে আইডেন্টিটির ধারণা যে ভাবে সংজ্ঞায়িত, তাহার মধ্যে জাত-চিহ্নকের দাপট যেমন প্রবলতম, রাজনৈতিক স্বার্থপূরণেও তাহা অতি কার্যকরী। উচ্চবর্ণীয়/উচ্চবর্গীয় স্বার্থতাড়না কিংবা অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্যের আদর্শ: কোনও কিছু দিয়াই সংরক্ষণকে অমান্য করা আজ অ-সম্ভব।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.