ডোমকল বিডিও অফিসের সভাঘর ভরা শ্রোতা। মঞ্চের ছোট্ট মাইক্রোফোন থেকে ভেসে আসছে—‘‘হালাল রোজগারের মতোই হালাল বিদ্যুৎ ব্যবহার করা ইমানদারের কাজ...।’’ বক্তা স্থানীয় মধুপুর মসজিদের ইমাম আবু আসাদ মণ্ডল। ঘরভর্তি লোকজন একমনে শুনছে তাঁর বক্তব্য। আর শ্রোতাদের প্রতিক্রিয়া দেখতে দেখতে বিদ্যুৎ দফতরের কর্তাদের কপালের ভাঁজগুলোও যেন ক্রমশ মিলিয়ে যাচ্ছে।
নাবালিকার বিয়ে প্রতিরোধ কিংবা পোলিও খাওয়াতে উৎসাহ দিতে মুশির্র্দাবাদের বেশ কিছু জায়গায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন মসজিদের ইমামরা। এ বার বিদ্যুতের চুরি রুখতে সেই ইমামদেরই দ্বারস্থা হয়েছেন মুর্শিদাবাদের বিদ্যুৎ দফতরের কর্তারা। বৃহস্পতিবার ডোমকল বিডিও অফিসের সভাঘরে বিদ্যুৎ চুরি কমাতে স্থানীয় মানুষদের মধ্যে প্রচার করলেন বেশ কয়েকজন ইমাম।
ডোমকল মহকুমায় বিদ্যুৎ চুরি একটি মস্ত সমস্যা। বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্তার কথায়, জেলার মধ্যে সব চাইতে বেশি হুকিং হয় ডোমকলে। সচেতনতা শিবির, লিফলেট বিলি, পুলিশের ভয়এ সব করেও কাজের কাজ কিছু হচ্ছিল না। তাই শেষমেশ এমন পদক্ষেপ। |
বিদ্যুৎ দফতরের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার (বহরমপুর) পামির সর্বাধিকারী বলেন, “ডোমকলে বিদ্যুৎ দফতরের ক্ষতির পরিমাণ জেলায় সর্বাধিক, প্রায় ৬৮ শতাংশ। এর মধ্য ১০-১৫ শতাংশ ক্ষতি হয় কারিগরি ত্রুটির জন্য। বাকিটার জন্য দায়ী বিদ্যুৎ চুরি।” তিনি জানান, এতদিন নানাভাবে প্রচার করা হয়েছে। কোনও কাজ হয়নি। তাই ইমামদের নিয়ে সভা করা হচ্ছে। ইমামরা এ দিন যা বললেন তাতে আশার আলো দেখছে বিদ্যুৎ দফতর।
মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ আব্দুর রহমান সেখ বলছেন, “এর আগে সরকারি বেশ কিছু প্রকল্পে ইমামদের সহযোগিতা পেয়েছিল প্রশাসন। নাবালিকার বিয়ে বন্ধ, পোলিও কিংবা নির্বাচনে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ইমামরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। এক্ষেত্রেও আমরা ভাল ফল পাব।”
এ দিন আবু আসাদ মণ্ডল বলেন, “বিদ্যুৎ আমাদের জাতীয় সম্পদ। সেটা চুরি করা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। ইসলাম ধর্মে চুরির জন্য বড় সাজার কথা বলা হয়েছে। ফলে চুরি থেকে আমাদের সকলকেই দূরে থাকতে হবে।”
গরিবপুর মসজিদের ইমাম মেহেরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমাদের সামনে যতই বাধা আসুক, সত্যি কথাটা সকলকে জানাতেই হবে। প্রথমে আমাদের মানুষকে বোঝাতে হবে, জাতীয় সম্পদ রক্ষা করা আমাদের সকলেরই দায়িত্ব। মসজিদে নমাজের শেষে সে কথা আমরা প্রচারও করব।”
ডোমকলের বিডিও রবীন্দ্রনাথ মিশ্র বলেন, “ইমামরা যখন প্রচার শুরু করেছেন তখন ফলও মিলবে হাতেনাতে। এর আগেও আমরা ওঁদের কাছে নানা বিষয়ে উপকার পেয়েছি।”
কিন্তু কিছু মসজিদেই তো হুকিং করে আলো-পাখা চলে। সেখানে কী হবে? মেহেরুল ইসলাম বলেন, “সে সব জায়গায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া হবে।” বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্তাও বলেন, আমাদের কাছে আবেদন করলেই দ্রুত সংযোগের ব্যবস্থা করে দেব। |