দিদির টানেই আলোয় যাত্রামঞ্চের দিদি
প্রায় একই মুখশ্রী, গায়ের রং, উচ্চতা। একই রকম কথা বলার ধরন। একই রকম স্লোগান, “জোর করে কেউ আমাদের জমি কেড়ে নিতে পারবে না।’’
দু’জনেই দিদি। এক দিদি মঞ্চে, এক দিদি দর্শকের আসনে। মঞ্চ আলো করে দিদির ভূমিকায় যিনি, সেই দীপা ঘোষ চড়া আলোয় দেখতেই পেলেন না, নীচ থেকে তাঁর দিকে তাকিয়ে আসল দিদি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৃহস্পতিবার বারাসতের কাছারি ময়দানে ১৮তম যাত্রা উৎসবের সূচনাটা ছিল এই রকমই। নট্ট কোম্পানির ‘এ কালের দুর্গা’ যাত্রাপালায় দুর্গা খোদ মমতাই। উপল রায়ের রচনা ও নির্দেশনায় যে যাত্রার বিষয়, অর্থলগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে সাধারণ মানুষ কতটা বিপন্ন এবং ভোটে জিতে এসে কী ভাবে মমতা তা সামাল দিচ্ছেন। দর্শকদের মধ্যে ছিলেন রাজ্যের বেশ কিছ মন্ত্রীও। তাঁরা যেমন অভিনয় দেখতে-দেখতে উচ্ছ্বসিত, সাধারণ দর্শকদের সঙ্গেই বারবার হাততালি দিয়ে উঠেছেন মুখ্যমন্ত্রীও।
পালার শুরু অবশ্য এ দিনই নয়। ইতিমধ্যে গ্রামেগঞ্জে ‘২৫ নাইট’ করে সাড়া ফেলে দিয়েছে এ কালের দুর্গা। এক সময়ে যেমন ‘রামায়ণ’ সিরিয়ালের সীতাকে দেখে লোক পেন্নাম ঠুকত, এই পালা সাঙ্গ হলেও প্রায় সর্বত্র দর্শকেরা এসে প্রণাম করছেন ‘দিদি’ দীপাকে। কেউ ছবি তুলে রাখছেন। সাজঘরে দাঁড়িয়ে দীপা বলেন, ‘‘জানো ভাই, ক’দিন আগে মালদহে পালা শেষ হতে সে কী হুলুস্থুলু কাণ্ড! ১৮ বছর যাত্রা করছি। এত ভালবাসা কখনও পাইনি।’’
গনি খানের মালদহেও যদি মানুষ দিদির জন্য পাগলপারা হয়, হলদিয়া বা বারাসতে কী হতে পারে তা বলাই বাহুল্য। তাঁর এক সহকর্মী বলেই ফেলেন, “এ পালায় দিদি মঞ্চে পা রাখা থেকেই হাততালি শুরু হয়।”
যাত্রা উৎসবে মুখ্যমন্ত্রী। বারাসতে সুদীপ ঘোষের তোলা ছবি।
‘আঁধি’ ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে নাকি ইন্দিরা গাঁধীর অনেক আদব-কায়দা দিনের পর দিন পর্যবেক্ষণ করতেন সুচিত্রা সেন। বহু মহলার পরে যাত্রার মঞ্চে ইন্দিরা হয়ে উঠেছিলেন মঞ্জু দে। গত কয়েক বছর ধরেই মমতাকে নিয়ে পালা হলেই যাত্রার বক্স অফিস মাত! রুমা চক্রবর্তী, সীতা ঘোষের পর মমতা হয়ে উঠতে কতটা ‘গ্রুমিং’ করেছেন দীপা? “ওঁকে আমি কখনও সামনা-সামনি দেখিনি। ভেবেছিলাম, আজই দেখব। কিন্তু দিদি যখন এলেন, তখন মেকআপ চলছিল। যখন আমি মঞ্চে, তখন এত আলো যে দর্শকদের দেখাই যাচ্ছিল না।’’
টিভিতে দেখেননি? দীপা বলেন, “প্রায় না। এই দু’দিন আগে যখন ব্রিগেডে বক্তব্য রাখলেন, সেই ভাল করে দেখলাম।” তা হলে এমন অনুকরণ করছেন কী করে? তাঁরই এক সহশিল্পী তো বলছেন, ‘‘ও তো পুরো মমতাই হয়ে গিয়েছে!’’ ভুরু কুঁচকে প্রায় দিদির মতোই তির্যক চাহনি হেনে দীপার পাল্টা ‘‘কে বলল অনুকরণ করছি? মমতা মানে কী ভাবে চোখে চোখ রেখে স্পষ্ট কথা সামনাসামনি বলা যায়, তার মূর্ত প্রতীক। মমতা মানে আবেগে ভরা একজন মানুষ।’’
সেই আবেগের ছোঁয়া অবশ্য এ দিন যাত্রা উৎসবের সূচনাতেও রেখে যান মুখ্যমন্ত্রী। কুশীলবেরা মঞ্চ থেকে নেমে এসে তাঁকে টেনে মঞ্চে নিয়ে যান। তাঁদেরই সঙ্গে ‘তোমায় হৃদমাঝারে রাখব, ছেড়ে দেব না’ গানের সঙ্গে তাল দিতে থাকেন দিদি। মুখ্যমন্ত্রীর হাতে ঘণ্টা তুলে দিয়ে উৎসব সূচনা করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু নট্ট কোম্পানির প্রৌঢ় প্রযোজক মাখনলাল নট্টকে মঞ্চে ডেকে এনে তাঁর হাতেই ঘণ্টা দিয়ে দিলেন মমতা। রাজ্যের শিক্ষা-সংস্কৃৃতি ও যাত্রার নবজাগরণের কথা বলতে-বলতে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে বলেন, ‘‘বালু, দ্যাখ তো কাগজ হাতে ওই মহিলা কী বলছেন!’’
যাত্রার নবজাগরণ কতটা হচ্ছে?
যাত্রা অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান অরূপ বিশ্বাসের বক্তব্য, “সরকার সমস্ত কর মকুব করে দেওয়ায় এখন মাত্র ১৯৫০ টাকায় যাত্রার আয়োজন করা যাচ্ছে। যাত্রাপালার সংখ্যা চার গুণ বেড়েছে। শিল্পীদের পেনশন বাড়িয়ে ৮ হাজার টাকা করা হয়েছে।’’
দীপা বলছিলেন, “যাত্রার জন্য যিনি এতটা করছেন, তাঁর চরিত্রকে ঠিক মতো তুলে ধরব, এটাই ছিল আমার চ্যালেঞ্জ।”
আর যখন মঞ্চের আলো নিভে যায়? অনেক রাতে যখন বর্ধমানের আলিশায় বাড়ি ফেরেন? তখন তো আর তিনি দিদি নন। সঙ্গে পুলিশ নেই, কনভয়ও নয়। খারাপ লাগে না?
“মোটেই নয়। এটাই তো অভিনেতার জীবন... একটু দাঁড়া ভাই, সিনটা করে আসি।” হুবহু দিদির ঢঙেই কথা ক’টি বলে গটগট করে সিঁড়ি দিয়ে উঠে যান মঞ্চের মমতা।
 



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.