বুধবার দিনহাটায় ফরওয়ার্ড ব্লকের শহিদ দিবস পালন। বক্তৃতা করছেন দলের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ। ছবি তুলেছেন হিমাংশুরঞ্জন দেব।
বামেদের ডাকা ব্রিগেড সভায় সিপিএম নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে দিনহাটা-কাণ্ড নিয়ে ‘দুঃখপ্রকাশ’ করার আর্জি জানাবেন ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্ব। ফ্রন্ট সূত্রের খবর, ৯ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেডের সভায় ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ সরাসরি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেববাবুর কাছে ওই আর্জি জানাবেন। বুধবার দিনহাটা মহকুমা শাসকের দফতরের সামনে মূল রাস্তার ওপর অস্থায়ী মঞ্চ করে পুলিশের গুলিতে নিহত দলীয় কর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শহিদ দিবস পালন করে ফরওয়ার্ড ব্লক।
দিনহাটার ঘটনার নৈতিক দায় স্বীকার করে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দুঃখপ্রকাশ করলে তাঁকে অভিবাদন জানাবার কথাও অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে জানিয়ে দেন উদয়নবাবু। তিনি বলেন, “বুদ্ধদেববাবু নেতাই নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেছেন। বামপন্থীরা ভুল থেকে শিক্ষা নিতে পারেন। উনি নন্দীগ্রামেরও নিন্দা করেছেন। দিনহাটা-কাণ্ডের ব্যাপারেও তা করুন। সেটা হলে আমরাও আর একবার ওঁকে অভিবাদন জানাব।”
তিনি জানান, ব্রিগেডে বক্তব্য রাখব না। তবে সেখানে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেখা হলে দিনহাটার ওই ঘটনা নিয়ে তাঁকে যত দ্রুত সম্ভব দুঃখ প্রকাশ করার আর্জি জানাব। ওই আর্জি পূরণ না হলে ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্বের অবস্থান কী হবে জানতে চাওয়া হলে উদয়নবাবুর জবাব, “আর্জি জানানোর পর কিছুদিন দেখা হবে। তার পরের কথা পরে।” |
ফরওয়ার্ড ব্লক নেতারা এ দিনের সভা থেকে ২০০৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির ওই ঘটনা নিয়ে গঠিত শীল কমিশনের রিপোর্টের সমালোচনা করেন। নতুন করে তদন্ত কমিশন গঠনের ব্যাপারেও সরব হন ওই নেতারা। রাজ্যের নতুন সরকারের কাছে লিখিতভাবে দাবি জানান হলেও কোনও সিদ্ধান্ত জানান হচ্ছে না বলে অভিযোগ করে ক্ষোভ উগরে দেন দিনহাটার বিধায়ক উদয়নবাবু। তাঁর সম্পাদকের কথায়, “নন্দীগ্রামের সিবিআইয়ের রিপোর্ট নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন। কিন্তু শীল কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে তিনি কিছুই বলছেন না। আমাদের দলের রাজ্য নেতৃত্ব লিখিতভাবে প্রতিবাদ করে নতুন তদন্তের ব্যাপারে গত বছর আর্জি জানালেও কোনও উচ্চবাচ্য করা হচ্ছে না।”
নতুন কমিশন গড়ার পক্ষে দলের বিধায়ক অক্ষয় ঠাকুর বলেন, “শীল কমিশনের রিপোর্ট আমাদের দাবিতেই প্রকাশ হয়েছে। তবে ওই ঘটনার দিন আইসি, এসপি, ম্যাজিস্ট্রেট না বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য গুলি চালনার নির্দেশ দেন, তার উল্লেখ নেই। পুনরায় তদন্ত কমিশন করে প্রকৃত ঘটনা জানানো হোক।”
কোচবিহারের সাংসদ নৃপেন রায়ও সভায় বুদ্ধদেববাবুর ভুল স্বীকারের পাশাপাশি নতুন তদন্ত কমিশনের সওয়াল করেন সভায় দেবাশিস বণিক, হীরালাল দাস প্রমুখরা উপস্থিত ছিলেন। সভাস্থলে উপস্থিত মৃত পাঁচ কর্মীর পরিজনদের হাতে এ দিন দলের তরফে পরিবার পিছু পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হয়। সভায় লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে কর্মীদের মনোবল বাড়াতে নানা পরামর্শ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ফব-র আইন অমান্য আন্দোলন ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দিনহাটা। পুলিশ ও সিআরপিএফের গুলি চালায় গুলিবিদ্ধ হয়ে দলের ৫ কর্মী নিহত হন। এ দিন ওই ‘শহিদ’দের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সভা করে ফব সকাল থেকে গ্রামগঞ্জ থেকে সমর্থকরা দিনহাটায় জমায়েত হতে শুরু করেন। দুপুরে কোচবিহার-দিনহাটা মূল রাস্তা আটকে সভা হয়। ফলে ওই রুটে প্রায় তিন ঘণ্টা স্বাভাবিক যান চলাচল ব্যাহত হয়। ভোগান্তি হয় নিত্যযাত্রীদের। |