সম্পাদক সমীপেষু...
গল্প হলেও
শঙ্করলাল ভট্টাচার্য (‘অস্তাচলের বারো মাস’, ১৪-১২) পণ্ডিত রবিশঙ্কর ও সত্যজিত্‌ রায়ের পারস্পরিক সম্পর্কের আলোচনায় একটি কড়ি-কোমল শব্দবন্ধ সমীহের ঈর্ষা ব্যবহার করেছেন। এই প্রসঙ্গে প্রায় অজ্ঞাত একটি ঘটনার উল্লেখ করি, যেখানে অন্য এক মনোভঙ্গি প্রচ্ছন্ন আছে।
তখন পশ্চিমবঙ্গ চলচ্চিত্র কেন্দ্র নন্দনের নির্মাণ কাজ সমাপ্তপ্রায়। কেন্দ্র পরিচালন সংক্রান্ত নানা চিন্তাভাবনায় ব্যস্ত তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের চলচ্চিত্র শাখা। পারিষদদের পরামর্শে বিভাগীয় মন্ত্রী নন্দনের জন্য একটি স্থায়ী দৃশ্য ও সংগীত সংবলিত সিগনেচার টিউন তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিলেন। স্থির হল, সম্মতিসাপেক্ষে দুই মহান শিল্পীর মনীষাকে এই কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত করা হবে।
সত্যজিত্‌ রায় সাগ্রহে প্রস্তাবে সম্মতি জানালেন। পরে পণ্ডিত রবিশঙ্কর কলকাতায় এলে মন্ত্রী মহোদয় স্বয়ং তাঁর দ্বারস্থ হলেন। প্রস্তাবটি পণ্ডিতজির তাত্‌ক্ষণিক সম্মতি পেল। তবে একটি শর্তে। সত্যজিতের প্রতিভাকে গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েও তিনি জানালেন, সংগীতাংশ সৃষ্টির দায়িত্ব অবশ্যই তাঁর। তবে দৃশ্যাংশ মুম্বইয়ের এক প্রখ্যাত অ্যানিমেশন শিল্পীকে দিয়ে তৈরি করার পক্ষপাতী তিনি। আলোচনা কালে এক প্রখ্যাত সংগীত ব্যবস্থাপক তথা সুরকার সেখানে উপস্থিত। পণ্ডিতজি তাঁকে অবিলম্বে সংগীত রেকর্ডিংয়ের সব ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিলেন। সরকারি অনুদানের কথা ভাবাই হল না। অচিরেই পণ্ডিতজির হাতে এক অপরূপ সংগীতের জন্ম হল। টেপে গৃহীত সেই সংগীত সরকারকে হস্তান্তর করলেন তিনি।
সমস্যায় পড়লেন বিভাগীয় মন্ত্রী তথা তাঁর সহযোগীরা। সত্যজিত্‌ পূর্বেই যৌথ সৃষ্টির প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছিলেন। এই বিকল্প ব্যবস্থার কথা তাঁকে জানাবার অবস্থা কারও ছিল না। ফলে, মূল প্রকল্পটির জন্ম হল না। রসিকজন একটি বিরল ঐতিহাসিক সৃষ্টি থেকে বঞ্চিত হলেন। পরে অবশ্য পণ্ডিতজি কৃত অন্য একটি সংগীত নন্দনে বাজতে শুনেছি।
নিতান্ত নান্দনিক ঐতিহাসিকতার স্বার্থে এই অকথিত কাহিনি সবিনয়ে নিবেদিত হল।
আরও তিন জন
শঙ্করলাল ভট্টাচার্য (হারানো সুর ১১-১) যে সব যন্ত্রশিল্পীর নাম করেছেন, তাঁরা ছাড়াও এমন কিছু শিল্পী ছিলেন যাঁদের এই এই ধরনের বাজনায় অনেক অবদান।
পঞ্চাশ থেকে নব্বই অবধি তিন জন শিল্পী বাঙালিকে গিটারকে তাঁদের সবচেয়ে কাছের যন্ত্র হিসেবে দেখতে বাধ্য করেছিলেন। কারণ, পিয়ানো বা পিয়ানো অ্যাকরডিয়ান-এর চেয়ে গিটার অনেক আয়ত্তের মধ্যে ছিল। এখনও আছে। তাঁদের নাম: কাজী অনিরুদ্ধ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এবং বটুক নন্দী।
শেষোক্ত জনের পুত্র ও সহযোগী হওয়ার সুবাদে আমি দেখেছি আমার বাবা, নিনিকাকু (কাজী অনিরুদ্ধ) ও সুনীলবাবুকে ঘিরে যন্ত্রসংগীত অনুরাগীদের মধ্যে কী পরিমাণ উন্মাদনা ছিল। কলকাতা শহরে মাসে তখন ১০০টা প্রোগ্রাম হলে অন্তত ৯০টায় এঁদের অনুষ্ঠান থাকত।
ষাট এবং সত্তরের দশকে আমার বাবাকে ৩০ দিনের একটা মাসে ৪৫টা অবধি অনুুষ্ঠান করতে দেখেছি। আমার বাবার ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের রেকর্ড ও পরবর্তী কালে ওঁদের ক্যাসেট ও সিডি রেকর্ড সময়ে বিক্রি হয়ে যেত। আজও যন্ত্রসংগীতের বিক্রি নেহাত মন্দ নয়। আমিই আমার বাবার উত্তরসূরি হিসেবে বছরে একটা, কখনও বা দুটো করে সিডি করে থাকি। যদিও প্রোগ্রামে লাইভ অর্কেস্ট্রা বা এ রকম কোনও আইটেম এখন আর থাকে না। সেটা বড়ই দুঃখের।
এই তিন জন মহারথী ছাড়াও আরও অনেক অসাধারণ সহযোগী মানুষ ছিলেন এই সব যন্ত্রসংগীতের জগতে। যেমন খোকন মুখার্জি, সমীর খাসনবিশ, ওয়াই এস মুলকী, হিমাংশু বিশ্বাস, মিলন গুপ্ত, নির্মল বিশ্বাস, অ্যান্টনি মেনেজেস, সুনীল দাস, দিলীপ রায় ইত্যাদি। এঁদের যন্ত্র তালিকায় ছিল: মাউথ অর্গ্যান, পিয়ানো, অ্যাকরডিয়ান, তারসানাই, ভায়োলিন, স্প্যানিশ গিটার, বাঁশি ও সন্তুর। এঁদেরও প্রত্যেকের নিজস্ব যন্ত্রসংগীতের ঘরানা ছিল। এঁরা স্বাধীন ভাবে অ্যালবাম ও রেকর্ড করেছেন। আকাশবাণী ও দূরদর্শনে এঁরা নিয়মিত এঁদের বাজনা দিয়ে মানুষদের মাতিয়েছেন। এঁদের ভুলে যাওয়া ঠিক নয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.