স্ববিরোধ সত্ত্বেও আপাতত জোটবদ্ধ ১১ দল
ত বারে লোকসভা ভোটের আগেও তৃতীয় ফ্রন্ট গড়েছিল বামেরা। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা মুখ থুবড়ে পড়ে। এ বারেও সেই প্রচেষ্টায় ১১ দলের নেতারা আজ আলোচনায় বসলেন। যার মূল অনুঘটক সেই বামেরাই। দলগুলির মধ্যে কেউ এখনও ইউপিএ-র সমর্থক। কেউ সদ্য এনডিএ ছেড়েছেন। কেউ আবার লোকসভা ভোটের আগে বা পরে কংগ্রেস বা বিজেপির হাত ধরার রাস্তা খোলা রেখেছেন।
এত স্ববিরোধ সত্ত্বেও নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে আপাতত জোটবদ্ধ হল দলগুলি।
এ দিনের বৈঠকের পরে ১১ দলের নেতারা এ-ও বুঝিয়ে দিলেন, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বারে তাঁরা মেপে পদক্ষেপ করতে চাইছেন। তাই বৈঠকের পর সীতারাম ইয়েচুরি-শরদ যাদব-এইচ ডি দেবগৌড়াদের ঘোষণা, আপাতত সংসদে তাঁরা একটি অভিন্ন গোষ্ঠী হিসেবে কাজ করবেন। দুর্নীতি দমনে আধ ডজন বিল পাশ করিয়ে সংসদের চলতি অধিবেশনকে কংগ্রেস যদি রাহুল গাঁধীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য ব্যবহার করতে চায়, তা হলে তাতে বাধ সাধবেন তাঁরা। তার পর এই জোটকে কী ভাবে সংসদের বাইরে ভোটের মাঠে নিয়ে যাওয়া যায়, তা-ও ঠিক করা হবে। আজকের সিদ্ধান্তকে বিকল্প জোট তৈরির পথে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ঘোষণা করে জেডি(ইউ) নেতা শরদ যাদব মেপে পা ফেলার ইঙ্গিতই দিয়ে রাখলেন।
দিল্লিতে বৈঠক সেরে যখন সাংবাদিক সম্মেলন করছেন ইয়েচুরিরা, কলকাতায় তখন শুরু হয়ে গিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর ব্রিগেড। সেখানে তৃতীয় ফ্রন্টকে কড়া সমালোচনা করলেন দলের সভাপতি রাজনাথ সিংহ এবং প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী মোদী। রাজনাথ বললেন, “যারা সব জায়গায় তিন নম্বর দল, তারাই তৃতীয় ফ্রন্ট গড়ছে।” আর মোদী বলেন, “পশ্চিম এবং পুবের তফাত কী জানেন? পশ্চিমে কখনও তৃতীয় ফ্রন্টের কোনও দল ক্ষমতায় আসেনি। পুবে কোনও না কোনও রাজ্যে কখনও না কখনও এরা ক্ষমতায় থেকেছে। তাই উন্নয়নে পিছিয়ে পড়েছে পূর্ব ভারত।” দিল্লিতে বিজেপির আর এক নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদের গলাতেও ছিল কটাক্ষের সুর। বললেন, “এই সব ক’টি দলেরই নৌকা ডুবছে। তাই একে অন্যের হাত ধরে বাঁচার চেষ্টা করছেন
তাঁরা।” আজকের বৈঠকে চার বাম দল, সপা, জেডি(ইউ) ছাড়াও এডিএমকে, বিজু জনতা দল, অসম গণ পরিষদ, জেডি(এস), ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চার নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বিজেপি নেতাদের যুক্তি, এদের মধ্যে একমাত্র জয়ললিতা ছাড়া বাকি সকলেরই আসন কমবে।
বিজেপি নেতাদের আরও অভিযোগ, তাঁদের রুখতে কংগ্রেসই এই জোটকে ঢাল হিসেবে খাড়া করার চেষ্টা করছে। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, সপা এখনও ইউপিএ সরকারের সমর্থক। অতীতেও মুলায়মের দল বামেদের সঙ্গে হাত মিলিয়েও শেষ মুহূর্তে ডিগবাজি খেয়েছে। এমনকী, পরমাণু চুক্তিতে বামেরা সমর্থন প্রত্যাহারের পর মুলায়মই মনমোহন সিংহের সরকারকে বাঁচিয়েছিলেন। এ বারও যে তেমন কিছু হবে না, সেটা কে বলতে পারে! সপা নেতা রামগোপাল যাদব এই নিয়ে এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে মুখ খুলতে চাননি। অস্বস্তি ঢাকতে ইয়েচুরি বলেন, “এটা ওই
দলগুলির নিজস্ব বিষয়। পৃথিবীটা চলছে আশার উপর। আমরাও আশাবাদী।” সিপিআইয়ের গুরুদাস দাশগুপ্ত বলেন, “ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি বারবার হয় না।”
অন্য দিকে, বিজেপি যতই তাঁদের ঘাড়ে দায় চাপাতে চাক, কংগ্রেস নেতারাও মনে করছেন, এই বিকল্প জোট কোনও ভাবেই সরকার গঠনের জায়গায় পৌঁছবে না। এই জোট বা তাদের শরিক দলগুলিকে কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যেই কাউকে বেছে নিতে হবে। কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, “লোকসভা ভোটের আগে এই জোটের কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই। ভোটের পরেই ঠিক হবে, কে কার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধবে।”
বামেদের মতোই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েকটি আঞ্চলিক দলকে নিয়ে ‘ফেডেরাল ব্লক’ গঠনের কথা বলছেন। তৃণমূল নেতৃত্বও নীতীশ কুমার, বিজু জনতা দলের সঙ্গে কথা বলছেন। ইয়েচুরির যুক্তি, “আমরা সবাই এখানে একসঙ্গে সশরীরে বসে আছি। কেউ কারও সঙ্গে যোগাযোগের দাবি করলে সেটা স্রেফ দাবিই।” তৃণমূল নেতৃত্ব আবার বামেদের এই বিকল্প জোট খাড়া করার চেষ্টাকে গুরুত্ব দিতে রাজি নন। দলের নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “সিপিএমের পশ্চিমবঙ্গে বা জাতীয় রাজনীতিতে কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই। যে জোটে সিপিএম আছে, তারও কোনও গুরুত্ব নেই।” একই সঙ্গে তাঁর দাবি, নবীনের দলের নেতা জয় পণ্ডা তাঁকে জানিয়েছেন, এই জোট শুধু আসন্ন সংসদ অধিবেশনের জন্য।
পাঁচ বছর আগে প্রকাশ কারাট যখন এমন জোট গড়েছিলেন, ভোটে বিপর্যয়ের পরে তার প্রবল সমালোচনা করেন ইয়েচুরি। এ বারে সেই ইয়েচুরিই মূল উদ্যোক্তা। সিপিএমও ধাপে ধাপে এগোনোর পক্ষপাতী। ঠিক হয়েছে, প্রাথমিক ভাবে রাজ্যভিত্তিক আসন সমঝোতা হবে। তার পর ন্যূনতম অভিন্ন কর্মসূচি তৈরির চেষ্টা হবে। তার আগে ৯ ও ১০ তারিখ দলগুলির নেতারা বসবেন আসন্ন অধিবেশনের পরবর্তী রণকৌশল ঠিক করতে।
সেটাই ফ্রন্ট গঠনের দ্বিতীয় ধাপ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.