সাইকেলে দেশ ঘুরছেন পরিবেশ-বন্ধু |
বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক, এম বিএ, এগারো বছর চাকরি, বাড়ির প্রিয়জনদের টানসব কিছু পিছনে ফেলে এসেছেন তিনি। তিনি উজ্জ্বল পাল। ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ যে জার্নি শুরু হয়েছে, তার পোশাকি নাম ‘গ্রিন অন হুইল’। তা এখন উত্তর-পূর্ব ভারতের পথে। একটা কথা বলতে ‘গাছ লাগাও গাছ বাঁচাও’
সম্প্রতি বালুরঘাটের কাছে এস জি উচ্চ বিদ্যালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উজ্জ্বল ছড়িয়ে দিলেন পরিবেশ রক্ষার সেই বার্তা। ফেসবুকের মাধ্যমে দীর্ঘ ১৩ বছর পর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অভিজিত দত্তের সঙ্গে যোগাযোগ। সে সূত্রেই বিদ্যালয়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশ নিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রী। ছিলেন গোবরা, সামপুরের মানুষ।
বিশ্ব উষ্ণায়ন, অনিয়মিত জলবায়ুর পরিবর্তন, হিমবাহ গলন, খরা, বন্যা, পরিবেশ বিপর্যয় অনুভব করেছেন তিনি। তিনি বুঝেছেন গাছ কমে যাওয়া এর অন্যতম কারণ। তাই বেরিয়ে পড়েছেন ‘সারভাইভার অফ হিউম্যান রেস’-এর জন্য একটি সাইকেল, একটি ল্যাপটপ আর মাত্র ৯২৭ টাকা নিয়ে।
১৯টি রাজ্য ঘুরেছেন সাইকেল নিয়ে। কেন? উজ্জ্বলের সপ্রতিভ উত্তর, ভূগর্ভস্থ খনিজ তেল কমছে। সাইকেল পরিবেশ বান্ধবও। আর হ্যাঁ, সাইকেলে এসেছি বলেই এত মানুষের আকর্ষণ পাচ্ছি। অন্য ভাবে হত না। যখন গিয়েছিলেন কন্যাকুমারী, মুম্বই, দিল্লি, মানুষ শুনতে চাননি কখনও। কখনওবা জোর করেই গাছ নিয়ে দু’চার কথা শুনিয়েছেন মানুষকে। আবার কখনওবা কোনও বিদ্যালয়ে, কোনও কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পেয়েছেন মনোযোগী আকর্ষণ। রাত কাটিয়েছেন সহৃদয়ের বাড়ি, আশ্রম বা সেনা ছাউনিতে। কিন্তু সম্পূর্ণ হওয়া ১৯,৫০০ কিলোমিটারের অভিজ্ঞতা কম দুঃসহনীয় নয়। কিন্তু পর্বতারোহণের কোর্স করা, হিমালয়ান এক্সপেডিশনের অভিজ্ঞতা যার মজ্জায় তিনি যে পিছোবেন না আশ্চর্যের কী!
যে অক্সিজেনের জোগান কমছে, অথচ অক্সিজেন না পেলে একটি মানুষ তিন মিনিটও বাঁচে না। তার প্রতিকার করতে হবে না। তাই উজ্জ্বলের কথায়, নিজের জন্মদিনে, বিয়ের দিনে, কোনও মহাপুরুষের জন্মদিনে ‘ক্যারিয়ার অন হুইল’-এ বেরিয়ে পড়ার আগে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে নিয়ে সাড়ে তিন হাজার গাছ লাগিয়েছেন। তাকে বাঁচিয়ে রাখার বন্দোবস্ত করেছেন। ভারত ঘোরা শেষ হলে পাড়ি দেবেন পৃথিবীর মধ্যে। তার ই-মেল আই ডি-তে গ্লোব ট্রটার-তো আর এমনি এমনি নেই! এর পরেও আমরা পরিবেশ সচেতন হব না?
তুহিনশুভ্র মণ্ডল, বালুরঘাট
|
ছিপ-ফাতনা দিয়ে মাছ ধরার দৃশ্য দেখতে আমরা অভ্যস্ত, জাল দিয়েও তাই। কিন্তু বর্ষাকালে ডুয়ার্সে এলে মাছ ধরার অন্য আর এক অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয়। স্থানীয় আদিবাসী জনজাতি মানুষেরা ওই এলাকার নদীতে মাছ ধরে এক বিশেষ উপকরণ দিয়ে। বাঁশের তৈরি এই উপকরণকে আদিবাসীরা ‘কুমনি’ বলে থাকে। এই ‘কুমনি’ আদিবাসী জনজাতির মানুষের শিল্পমনস্কতার পরিচয় বহন করে। মাছ ধরার আধুনিক যন্ত্রগুলিও এখনও গ্রাস করতে পারেনি ‘কুমনি’কে। ‘কুমনি’ বেঁচে আছে তার আদিবাসী সমাজের সংস্কৃতির মৌলিক নিদর্শন হয়ে।
আশিসকুমার রায়। জলপাইগুড়ি
|
কোথায় সুদূর মার্কিন মুলুকে সানড্যান্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, কোথায় ভারতের কোচবিহারে দিনহাটা এলাকার অজগাঁ ভুতকুড়া। তবে দূরত্ব বেড়ি পরাতে পারেনি স্বাধীনতার উড়ানকে। গাঁয়ের কিশোরী মনিকা বর্মনের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার অর্জনের লড়াই স্বীকৃতি পেল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। ‘সবলা’ প্রকল্পে সব্জি চাষ করে মনিকার স্বনির্ভর হওয়ার কাহিনি জেনেছিলেন ‘স্মাইল পিঙ্কি’ খ্যাত অস্কারজয়ী পরিচালক মেগান মাইলান। তা নিয়েই তিনি বানিয়ে ফেলেছেন তথ্যচিত্র ‘আফটার মাই গার্ডেন গ্রোজ’। গত বছর নভেম্বরে, কোচবিহারে এসে ছবির শু্যটিং করে যান মেগান। দেখে যান, ‘সবলা’ প্রকল্পে মনিকা-সহ কয়েক হাজার কিশোরী কেমন চাষ করছে। জমির আয়ই তাদের স্বনির্ভরতা আর আত্মপ্রত্যয় দিচ্ছে। আখেরে নাবালিকাদের বিয়েতেও যা দাঁড়ি টানতে পারে। স্কুলছুট মনিকা যে দিন তার নিজের ফলানো কুমড়ো বিক্রি করল, আর তার বাবা মেয়ের ভাগের কুড়ি টাকা তুলে দিলেন মনিকার হাতে, সাক্ষী ছিলেন মেগান। মুহূর্তটা ধরে রেখেছিলেন ক্যামেরায়। এমনই মুঠো মুহূর্ত গেঁথে তৈরি ‘আফটার মাই গার্ডেন গ্রোজ’। সদ্য সেই ছবির প্রিমিয়র হল সান ড্যান্সে। মেগান বললেন, “মনিকার গল্প সকলকে জানাতে পেরে আমি সম্মানিত।”
|