নিজেদের প্রেমের উদ্যাপনেই বসছে ভালবাসার মেলা
পাশেই বর্ডার। কিন্তু দু’জনের মধ্যে কোনও বর্ডার নেই। অন্তত তিন ঘণ্টা, সীমান্ত ঘেঁষা এই প্রান্তরে।
পারিবারিক আপত্তির বর্ডারে এক দিন আটকে গিয়েছিল স্মরজিৎ আর রুপাইয়ের প্রেম। দুই বাড়ির কেউ মানতে চাননি। যেন একটা অপরাধ করে ফেলেছেন তাঁরা।
অনেক লড়াই করে সরস্বতী পুজোর দিনে বিয়ে করেন স্মরজিৎ বিশ্বাস আর তাঁর ভালবাসার রুপাই। সেটা ১৯৯০। নিজেদের সেই প্রেমকে সম্মান জানাতে, উদ্যাপন করতেই গত দশ বছর ধরে সরস্বতী পুজোর দিন মেলা বসিয়ে আসছেন তাঁরা।
বনগাঁর সুটিয়া সীমান্ত লাগোয়া বর্ডার রোডে সেই মেলায় কারও চোখ রাঙানোর হক নেই। গুরুজনদের নাক গলানো, শাসন, পরামর্শ, নিদেনপক্ষে তিরস্কার মেশানো অপাঙ্গ দৃষ্টিটুকুও নেই। হাতে হাত দিয়ে, রোদে পিঠ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার আশ্চর্য দুপুর। শুধু প্রেমিকদের জন্য। সমাজের রক্তচক্ষু এড়িয়ে দু’টো প্রাণকে একটু নিভৃতি দেওয়ার জন্য।
ধরা রইল এই মুহূর্ত। মঙ্গলবার মেলায় নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি।
বনগাঁ-সুটিয়ার সীমান্ত ছেড়ে এই মেলার খবর ছড়িয়ে পড়েছে অনেক প্রেমিক-প্রেমিকার কাছেই। অনেকেই আসছেন কয়েক বছর ধরে। গ্রামের প্রান্তে বাঁশঘাটা সেতু অবধি প্রায় এক কিলোমিটার রঙবাহারি পসরা নিয়ে অস্থায়ী দোকান। চেনা ফুচকাওয়ালার ঠোঁটের কোণে আলগা হাসি, প্রশ্রয়-মাখা। জলপাই উর্দি গায়ে বদলিতে আসা বিএসএফ জওয়ানের চোখে বিস্ময়। খানিক আহ্লাদও।
যারা কয়েক বছর ধরে আসছেন, তাঁদের এ দিন মনে পড়েছে পুরানো সেই দিনের কথা। পাটশিমুলিয়ার মেয়েটি এই মেলাতেই চোখ রেখেছিল বনগাঁর ছেলেটির চোখে। লাজুক হেসে যুবক বলেন, “আগেও দু’এক বার প্রেম করিনি, তা নয়। কিন্তু এখানে এসেই সত্যিকারের প্রেম খুঁজে পেলাম।” নিজের থেকে বয়সে বড় প্রেমিকাকেও এই মেলাতেই খুঁজে পেয়েছেন হেলেঞ্চার এক যুবক। কিন্তু চেনা ছকে অভ্যস্ত অভিভাবকেরা রাজি হননি। শেষ পর্যন্ত প্রেমিকাকে নিয়ে পালান তিনি।
স্মরজিৎ-রুপাই মেলা করেছেন বটে। কিন্তু ভ্যালেন্টাইনস ডে-র বহু আগে থেকেই বাসন্তী শাড়িতে ঢেউ তোলা সরস্বতী পুজো এ বঙ্গের প্রেম-দিবস। কুণ্ঠাহীন বাসন্তী গিয়ে মেশে, দোল খায়, হারায় মেলার পাশে সর্ষে খেতের নরম হলুদে।
শুধু তো ছেলেরা নয়, মেয়েরাও মেলায় আসে দল বেঁধে। নজর এড়িয়ে হয়তো চোখ যায় দূরের ছেলেটির প্রতি। কিন্তু ছুট্টে গিয়ে কি সে কথা বলা যায়? সব সময়ে? আর যে যুবকটি বহুদিন ধরে ভাবছে প্রেমপ্রস্তাব দেবে, তার সাইকেল হয়তো এ দিনও ‘ডবল কেরিয়ার’ করার লোক পায়নি। কেউ খুঁজে ফিরেছে মনের মানুষ, কেউ পেয়েও মনের কথা বলতে পারেনি।
বিকেল গড়িয়ে যখন সাইকেল ঘরে ফেরে একা, তখনও মন বলে, পরের বার ঠিক দেখা হবে। আর যাঁরা ফেরেন এক সঙ্গে, তাঁদের অনেকেরই কপালে সিঁদুর। ঘর বেঁধেছেন তাঁরা। এ মেলা বেশি করে তাঁদেরই।
সরস্বতী পুজোর দিনটা স্মরজিৎ-রুপাইয়ের প্রেমবার্ষিকী তো নয় শুধু, বিবাহবার্ষিকীও যে!





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.