অশোক সেনগুপ্তের ‘খাবারে চুটিয়ে বিষের মিশেল, পুরসভা দর্শক’ (২১-১) শীর্ষক খবরটি পড়লাম। সত্যি কথা বলতে কী, আজকাল খাবারদাবারকে রঙিন করতে জাফরান, ক্লোরোফিল বা হলুদের মতো প্রাকৃতিক রং আর ব্যবহার হয় কতটুকু? বিট, গাজর, ক্যাপসিকাম বা কমলালেবু থেকে প্রাপ্ত জৈব রং খাবারে ব্যবহার করলে অপকারের বদলে উপকারই বেড়ে যায়। অথচ কার্যক্ষেত্রে বেশির ভাগ খাবারদাবারই এখন রাঙানো হয় এমন সমস্ত ‘অননুমোদিত রং’ ব্যবহার করে, বাচ্চা থেকে বড়, সকলের শরীর-স্বাস্থ্যের পক্ষে যেগুলো অত্যন্ত ক্ষতিকর।
দশকর্ম ভাণ্ডার বা মুদির দোকান থেকে প্রাপ্ত ‘কামধেনু’ রং দিয়ে জিলিপি, লাড্ডু, ঘুুগনি, পোলাও আকছার রং করা হয়। এটা আসলে মেটালিক ইয়েলো। একটু লক্ষ করলেই দেখা যাবে, প্যাকেটের গায়ে লেখা আছে ‘Poisonous Non-edible, for Industrial use only’ কেশর বরফিতে স্যাফ্রন খুব কমই ব্যবহৃত হয়। মিষ্টিকে সাজাতে যে সিলভার ফয়েল ব্যবহৃত হয় তা আসলে লেড ও প্লাস্টিকের toxicderivative। |
কাঁচা শাকসব্জি, ফল থেকে শুরু করে লজেন্স, চকোলেট, আইসক্রিম, ঠান্ডা পানীয়, মিষ্টি, চপ, ঘুগনি, সস, জ্যাম, জেলি, গুঁড়ো মশলা এমনকী ওষুধেও বিষাক্ত রংয়ের ব্যবহার আজ অত্যন্ত উদ্বেগজনক জায়গায় পৌঁছে গেছে। সম্প্রতি খবরে প্রকাশ যে, তরমুজের ভিতরের রং লাল করতে ক্ষতিকর হরমোন ইনজেক্ট করা হচ্ছে। এটাও স্বস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। এ ছাড়া বাজারে ফলের দোকানে করমচাকে বিষ রংয়ে ডুবিয়ে ‘চেরি’ ফল বলে হামেশোই চালানো হয়। আমাদের রোজকার অনেক মুখরোচক সুস্বাদু রঙিন খাবারের সঙ্গে আমরা নীলকণ্ঠের মতো গিলে ফেলছি এই রং-বেরংয়ের বিষ।
খাদ্যে মেশানো অননুমোদিত রঙের ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি। প্যাকেট বা বোতলজাত রঙিন খাবার কেনার আগে সেখানে কী রং কী মাত্রায় ব্যবহৃত হয়েছে সেটা অবশ্যই দেখে নিতে হবে। কর্পোরেশন, মিউনিসিপ্যালিটি, পঞ্চায়েত ইত্যাদি স্তরে স্থানীয় বাজারে মাঝে মাঝেই অভিযান চালানো উচিত। এর জন্য আরও ল্যাবেরটরি ও অন্যান্য পরিকাঠামো দরকার।
আর দরকার ছোটবেলা থেকে বাচ্চাদের রং না-মেশানো খাবারে অভ্যস্ত করে তোলা।
সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। শিক্ষক, বিষ্ণুপুর স্যার রমেশ ইনস্টিটিউশন, রাজারহাট-বিষ্ণুপুর, উঃ ২৪ পরগনা |