সম্পাদকীয় ১...
বিজ্ঞান: শিক্ষা ও মন
সোমবার জম্মুতে ১০১তম ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের উদ্বোধনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এই কারণে খেদ প্রকাশ করিয়াছেন যে, গত দশ বছরে তাঁহার সরকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রসারে বিস্তর খরচ করিয়াছে, অনেক চেষ্টা করিয়াছে, পঠনপাঠনে ও গবেষণায় তাহার সুফলও মিলিয়াছে, কিন্তু দেশে বিজ্ঞানমনস্কতার যথেষ্ট প্রসার ঘটে নাই। বিজ্ঞানশিক্ষার উন্নতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের অবদান লইয়া তর্ক চলিতে পারে। সরকারের সমালোচকরা হয়তো বলিবেন, প্রধানমন্ত্রী সাফল্যের ফানুস উড়াইতেছেন। তাঁহার বিরুদ্ধে বিজ্ঞান কংগ্রেসের মঞ্চটিকে সুকৌশলে নির্বাচনী প্রচারের কাজে অপব্যবহারের অভিযোগও উঠিবে। কিন্তু সে-সকল প্রশ্ন এখানে অপ্রাসঙ্গিক। প্রধানমন্ত্রীর সাফল্য-শ্লাঘাকে অন্তত তর্কের খাতিরে মানিয়া লওয়া চলে। কিন্তু তাঁহার কথা শুনিয়া মনে হইতে পারে, বিজ্ঞানশিক্ষার ‘সাফল্য’ সত্ত্বেও বিজ্ঞানসম্মত মানসিকতার যথেষ্ট প্রসার না হওয়ায় তিনি যেন বিস্মিত। এই বিস্ময়ের কিন্তু কোনও কারণ নাই। প্রশ্ন হইল, বিজ্ঞানচর্চা এবং বিজ্ঞানমনস্কতা কি এক জিনিস? কথাটি শুনিয়া সুকুমার রায়ের অবাক জলপান মনে পড়িলে দোষ নাই। জল এবং জলপাইয়ের মধ্যে যে সম্পর্ক, বিজ্ঞান পড়া এবং বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তাধারার মধ্যে সম্পর্ক অনেক সময়েই তাহার অধিক নহে। রাজশেখর বসুর প্রবন্ধে এই বিচ্ছেদের উৎকৃষ্ট আলোচনা আছে। বিজ্ঞানে সুপণ্ডিত, কিন্তু বিবিধ অপ্রমাণিত এবং ক্ষতিকর বিশ্বাসে পরম আস্থাশীল, এমন মানুষ সে কালেও বিরল ছিলেন না, আজও বিরল নহেন।
তাহার অর্থ এই নয় যে, বিজ্ঞানমনস্কতার প্রসারে বিজ্ঞানচর্চার কোনও ভূমিকা নাই। অবশ্যই আছে। সেই ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবং তাহা কেবল বিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার ব্যাপার নয়। শিক্ষার প্রাথমিক স্তর হইতে বিজ্ঞানের শিক্ষা জরুরি। এ দেশে পশ্চিমবঙ্গও ব্যতিক্রম নয় স্কুল স্তরে বিজ্ঞানশিক্ষার গুণমান আদৌ সন্তোষজনক নহে। বিজ্ঞানের বিবিধ ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষানিরীক্ষা এবং যুক্তিপ্রয়োগের যে মৌলিক আদর্শ ও পদ্ধতিগুলি কাজ করে, তাহার অনুশীলনের মধ্য দিয়া শিক্ষার্থীর মনে যে বিচারশীলতা পুষ্টি লাভ করে, তাহাই বিজ্ঞানমনস্কতার যথার্থ ভিত্তি। অথচ এ দেশে শুরু হইতেই ছাত্রছাত্রীদের হাতে কতকগুলি মামুলি এবং বহুলাংশে কুলিখিত বিজ্ঞানের বই ধরাইয়া দেওয়া হয় ও পরীক্ষা নামক বমন-ক্ষমতা প্রদর্শনীর প্রতি মনপ্রাণ নিবিষ্ট রাখিয়া তোতাকাহিনী রচনা চলিতে থাকে। বস্তুত, শিশুর মনে যে সহজাত ও স্বাভাবিক জিজ্ঞাসা এবং অনুসন্ধিৎসা থাকে, তাহাকে নিরন্তর উৎসাহ দিলে এবং তাহা মিটাইবার সুস্থ আয়োজন করিলেই বিজ্ঞানমনস্কতার স্ফূর্তি ঘটিতে পারে। কিন্তু প্রচলিত শিক্ষা প্রথম হইতে সেই জিজ্ঞাসাকে দমন করিয়া শিশুকে পড়া মুখস্থ করিয়া নম্বর তুলিবার যন্ত্রে পরিণত করে। বিজ্ঞানমনস্কতার শিকড়টিকে হত্যা করিয়াই শিক্ষার ইমারত গড়িয়া উঠে।
চিন্তার বিজ্ঞান-সম্মতিকে যদি প্রসারিত করিতে হয়, তবে সমস্যার এই মূলটি আগে সংস্কার করা জরুরি। সে জন্য বিজ্ঞান কংগ্রেসে সুভাষিত বিতরণ করিলে চলিবে না, শিক্ষার পাঠক্রম এবং শিক্ষণপদ্ধতির মৌলিক সংস্কার করিতে হইবে। সেই কাজ রাষ্ট্রের নয়, বিদ্বৎসমাজের। কিন্তু বিদ্বৎসমাজকে সেই কাজের যথোপযুক্ত স্বাধীনতা ও পরিবেশ সরবরাহ করিবার দায়িত্ব রাষ্ট্রযন্ত্রীদেরই। এ দেশে সরকার শিক্ষার পরিসরে অযথা বিবিধ ভাবে হস্তক্ষেপ করিয়া থাকে, এমনকী কী পড়ানো হইবে, কী ভাবে পড়ানো হইবে, তাহাও সরকারি কর্তা বা আমলারা নির্ধারণ করিতে সতত তৎপর। মনমোহন সিংহ সরকারের দশ বছরে সেই প্রবণতা কমে নাই, বাড়িয়াছে। বিজ্ঞানমনস্কতার জন্য বিলাপ করিয়া এই অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্ত হয় না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.