পুরু বালি আর আবর্জনার স্তূপের মধ্যে ঢাকা পড়েছিল একটি সৌধ। এলাকার লোকজন সেটিকে স্থানীয় এক পিরের কবরস্থান বলেই জানত। জঞ্জালের জঙ্গলে যে বিশ্বের সব চেয়ে প্রাচীন পিরামিডটি ঢাকা পড়ে আছে, তা এত দিন নজরে আসেনি কারও। ২০১০ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ববিদদের একটি দল দক্ষিণ মিশরের এডফুতে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শুরু করে। অতি সম্প্রতি বোঝা যায়, এটি আসলে বিশ্বের সর্বাধিক প্রাচীন ধাপ পিরামিড। যায় বয়স গিজার পিরামিডের থেকেও বেশি।
চার হাজার ছ’শো বছর পুরনো গিজার পিরামিডটিই (যা আবার খুফুর পিরামিড নামেও পরিচিত) এত দিন বিশ্বের সব চেয়ে পুরনো পিরামিড বলে পরিচিত ছিল। কিন্তু এডফুতে সাম্প্রতিক খননকার্যের ফলে গবেষকদের হাতে এসেছে নতুন তথ্য। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই পুরাতাত্ত্বিকদের দলে রয়েছেন গ্রেগরি মারুয়ার্ড। তিনিই জানাচ্ছেন, গিজার পিরামিডের থেকেও কয়েক দশক আগে তৈরি হয়েছিল এডফুর এই পিরামিড। সম্ভবত ফারাও হুনি বা ফারাও স্নেফ্রুয়ের আমলেই সেটি তৈরি হয়। গ্রেগরি আরও জানিয়েছেন, মিশরের বিখ্যাত সাতটি প্রাদেশিক পিরামিডের মধ্যে নব্য আবিষ্কৃত এই পিরামিডটি অন্যতম। তাঁর কথায়, “ওই সাতটি পিরামিডের গঠনশৈলিরও যথেষ্ট মিল রয়েছে। সম্ভবত পরিকল্পনামাফিক একই সঙ্গে এই পিরামিডগুলি বানানো হয়েছিল।”
তবে এত দিন লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা এই পিরামিডের অবস্থা অতি করুণ বলে জানাচ্ছেন পুরাতত্ত্ববিদেরা। তিনটি ধাপে তৈরি এই পিরামিডের পাথরের ব্লকগুলির অধিকাংশই চুরি হয়ে গিয়েছে। মরু-ঝড় আর প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য পিরামিডের উচ্চতাও অনেকখানি কমে গিয়েছে।
তবে এই পিরামিড তৈরির উদ্দেশ্য নিয়ে এখনও ধন্দে রয়েছেন পুরাতত্ত্ববিদেরা। কোনও ফারাওর মমি সংরক্ষণের জন্য এডফুর পিরামিডটি বানানো হয়নি বলে একপ্রকার নিশ্চিত বিশেষজ্ঞেরা।
তবে পিরামিডের তলদেশে মিলেছে বেশ কিছু শিশুকে কবর দেওয়ার চিহ্ন। পিরামিডের গায়ে হায়রোগ্লিফিক ভাষায় লেখা কিছু চিহ্নের খোঁজও মিলেছে। শিশুগুলির কবর মিলেছে তার নীচেই।
পুরাতত্ত্ববিদরা জানিয়েছেন, এডফুর এই পিরামিডটি অসমাপ্ত। কেন? তাঁদের ব্যাখ্যা, সম্ভবত গিজায় খুফুর পিরামিড তৈরির কাজ শুরু হওয়ার পর পরই এই প্রাচীনতম পিরামিড তৈরির কাজ তড়িঘড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়। |