বছর আশি আগে এক শীতের রাতে টোকা শুনে দরজা খুলে চমকে গিয়েছিলেন মেমারির সাতগাছিয়ার কয়েক ঘর মানুষ। কনকনে শীতে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে এক বৃদ্ধ। তাঁর গলায় ছিল একটি স্কুলকে বাঁচিয়ে তোলার আকুতি।
ওই বৃদ্ধ অবিনাশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ই ১৯১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি মেমারির শ্রীধরপুরে বেণিমাধব দাসের বাগানবাড়িতে জমি কিনে অস্থায়ী ঘরে একটি স্কুল শুরু করেছিলেন। এলাকার মানুষ সাহায্য করতে এগিয়ে এলেও কয়েক বছর পরেই স্কুল চালাতে গিয়ে আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে পড়েন তিনি। বেশ কয়েক মাস মাইনে না পেয়ে অনেক শিক্ষক স্কুল ছেড়ে যান। এর পরেই বাড়ি বাড়ি ঘুরে সাহায্য চেয়ে স্কুল বাঁচান অবিনাশবাবু।
সেই স্কুলে এখন প্রায় ১৬০০ ছাত্রছাত্রী। পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জীববিদ্যা, ভূগোল ও কম্পিউটারের জন্য রয়েছে আলাদা ল্যাবরেটরি। ৩৫ জন স্থায়ী শিক্ষক-শিক্ষিকা ছাড়াও রয়েছেন কয়েক জন শিক্ষাকর্মী ও পার্শ্বশিক্ষক। কয়েকটি অস্থায়ী ঘরে শুরু হওয়া স্কুলে এখন মোট ঘরের সংখ্যা ১০২। |
এই সাতগেছিয়া শ্রীধরপুর স্কুল এ বার ১০০ বছরে পড়ল। সেই উপলক্ষে প্রকাশিত একটি স্মরণিকা থেকেই জানা গিয়েছে এই সব তথ্য। নামের মাঝে প্রতিষ্ঠাতার নাম বসে শতবর্ষে পড়া স্কুলটির বর্তমান নাম সাতগেছিয়া শ্রীধরপুর অবিনাশ ইন্সটিটিউশন। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, অবিনাশবাবুর জন্ম ১৮৬৯ সালে মেমারির শ্রীধরপুর গ্রামে। এই গ্রামেই জন্মেছিলেন ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকার সম্পাদক হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। অনটনের কারণে অবিনাশবাবু বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারেননি। পরে লোহার ব্যবসা করে আর্থিক অবস্থা ফেরে। কিন্তু রোজগারের টাকায় তিনি জমি কিনে ওই স্কুলটি তৈরি করেন। ১৯২২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এই স্কুলকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর অনুমোদন দেয়। নিজের প্রায় সব রোজগারই স্কুলে দিয়ে জীবনের শেষ সময়ে অনটনে পড়েছিলেন অবিনাশবাবু। ১৯৪২ সালে মারা যান তিনি।
প্রধান শিক্ষক সুকান্ত দাস জানান, ১৯৬২ সালে এই স্কুল উচ্চমাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হয়েছে। তিনি জানান, বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় বাসিন্দারা স্কুলের উন্নতিতে নানা ভাবে সাহায্য করেন। কেউ স্কুলে আসার রাস্তা চওড়া করার টাকা দিয়েছেন, আবার কেউ স্কুলের পাশের বেহুলা নদীর উপরে পাকা সেতু বানাতে সাহায্য করেছেন।
স্মরণিকা থেকে জানা গিয়েছে, সেই শীতের রাতে ঘোরার সময়ে অবিনাশবাবুর গায়ে চাদরও ছিল না। আজ কিন্তু তাঁর তৈরি করা স্কুলের অনেক কিছু রয়েছে। |