উত্তরবঙ্গের ছয় জেলা সব শাসন কালেই অবহেলিত। পাহাড়, সমতল, চা-বাগান, জঙ্গল, তোর্সা, তিস্তা নদী, বহু জাতি, জনজাতি, উপজাতি সমন্বয়ে গঠিত অপরূপ শোভামণ্ডিত উত্তরবঙ্গে এক বার এলে বারবার আসতে হবে এখানে। বরফ ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা, তার সোনালি চূড়ার স্বর্গীয় সৌন্দর্য জীবনের একটি বড় পাওনা। তবু কৃষিতে, শিল্পে, ট্যুরিজমে, আইটি সেক্টরে, কর্মসংস্থানে, যোগাযোগে, উচ্চশিক্ষায়, চিকিৎসায় উত্তরবঙ্গ চরম অবহেলিত। মন্ত্রীদের নজর এ দিকে কমই ছিল, কমই আছে। জাতীয় সড়ক দুটোর অবস্থা দুর্বিষহ। সঙ্কীর্ণ পথে বাস, ট্রেকার চলাই দায়। সড়ক পথে বহু কাঠের সেতু। খানাখন্দে ভরা রাস্তায় দুর্ঘটনা প্রায় লেগে থাকে। প্রাণ যায় অনেকেরই। আড়াই ঘণ্টার পথ পেরোতে লাগে ৫/৬ ঘণ্টা। মন্ত্রী হওয়ার পর তাঁরা আশ্বাসই দিয়ে যান। চোরাকারবারিরা জঙ্গলের গাছ কেটে বিক্রি করে চলেছে। তাতে অবশ্যই বন বিভাগের কর্মীদের যোগাসাজশ আছে। জঙ্গল থেকে হাতির পাল খাদ্যের জন্য বেড়িয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। ট্রেনে কাটা পড়ে হাতির মৃত্যু হচ্ছে। কিছু দিন হইচই হয়। এ ট্র্যাডিশন চলতে থাকে।
শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন পর্ষদ-এর পরিকল্পনায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে যেমন স্যুয়ারেজ প্রকল্প, নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি, শ্মশান ঘাটে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানো, শহরে নানা রাস্তায় সিসি ক্যামেরা বসানো, রাস্তায় ত্রিফলা বাতি লাগানো প্রভৃতি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য টেন্ডার ডাকায় দুর্নীতি, টেন্ডারের পর কাজ শুরু হলে মাঝপথে থেমে যাওয়া অথবা কাজ শুরু না হতেই লক্ষ কোটি টাকার সিমেন্ট দিয়ে দেওয়া ইত্যাদি বহু অনিয়মে দু’ বছরে ১০০ কোটি টাকার দুর্নীতি-জালে ফাঁসলেন তৎকালীন এস জে ডি এ-র আইএএস-সিইও গোদালা কিরণকুমার, কতিপয় বাস্তুকারও। কিছু বাস্তুকার জেলে বন্দি থাকলেও কিরণ কুমার জামিন পেয়ে যান এক দিনের মধ্যে। অন্য দিকে কিরণ কুমারকে ধরার অপরাধে সৎ, নির্ভীক, সাহসী পুলিশ কমিশনার কে জয়রামনকে সরিয়ে দেওয়া হল। অথচ জয়রামন যা করেন এ অঞ্চলের স্বার্থেই করেছেন।
এমন দুর্নীতি চলতে থাকলে এবং তার মোকাবিলায় নির্বাচিত সরকার ব্যবস্থা না নিলে উত্তরবঙ্গের মানুষদের দুর্দশা মোচন কী ভাবে সম্ভব? খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর সম্ভাবানময় উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন কোন পথে সম্ভব? এ অঞ্চলের শিক্ষিত, অশিক্ষিত বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে রুগ্ণ চা-শিল্প ছাড়া কোনও কল-কারখানা, শিল্প, আইটি, হাব নেই। বাগান কর্মীর দারিদ্র, চিকিৎসার শোচনীয় অবস্থা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। এ ছাড়া পাহাড় অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের অবস্থাও শোচনীয়। দু’বেলা তারা পেট ভরে খেতে পায় না, শীতে বস্ত্র নেই, চিকিৎসার অর্থ নেই। উত্তরবঙ্গের বহু ছাত্রছাত্রী ভাল রেজাল্ট করেও উচ্চ শিক্ষায় বঞ্চিত থেকে যায় বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাবে। পাহাড়ে জিটিএ-র নামে, সমতলে উন্নয়নের নামে উত্তরবঙ্গবাসীরই কর আদায়ের টাকা বা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা নয়ছয় হচ্ছে। মিডিয়ার দৌলতে দুর্নীতি ফাঁস হয়ে গেলে জানতে পারি।
জনপ্রতিনিধিদের প্রতি অনুরোধ, উন্নয়নে, পাহাড় থেকে সমতলে বিস্তৃত নানা অঞ্চলে, পিছিয়ে থাকা জনজাতি, উপজাতিদের কল্যাণে নানা বহুমুখী প্রকল্প গ্রহণ করুন। জনগণের অর্থের ১০০ ভাগ যথার্থ ও সুনিশ্চিত ভাবে জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কল্যাণ কাজেই লাগান। অনুন্নয়নকে হাতিয়ার করে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের শঙ্কা আরও তীব্র হয়ে উঠবে।
জ্যোতির্ময় রায়, আলিপুরদুয়ার। |
কাছিম নামে এ প্রাণীটি বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতিগুলির বিভিন্ন প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম। তাই ওই প্রাণীদের সংরক্ষণ করার জন্য ওদের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের একেবারে প্রথম তালিকায় স্থান দেওয়া হয়েছে। নদ-নদী থেকে কাছিম ধরা বা ওই প্রাণী বিক্রি করার দায়ে ধৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে কঠোরতম আইন প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে। ওই আইনের ৪০ (২) ধারা অনুযায়ী কাছিম ধরা বা বেচা-কেনা করা বন্ধ। এবং ৫১ আইন মোতাবেক এই আইন ভঙ্গকারীদের সাত বছর পর্যন্ত জেল এবং সেই সঙ্গে পঁচিশ হাজার টাকার কম নয় জরিমানায় সাজা পেতে হবে। অথচ ওই আইনকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কালিয়াগঞ্জের কুনোরহাটে, ধনকুলের হাটে কিংবা বালুরঘাটের জলঘর হাটে, কামারপাড়া হাটে মুড়ি-মুড়কির মতো বিক্রি করে চলেছে ওই নিষিদ্ধ প্রাণী বা তার কাটা মাংস। এখন অনেকের মনে প্রশ্ন, অবাধে এ ভাবে কেনাবেচা চলছে অথচ বন বিভাগের আধিকারিকেরা কেন পুলিশের সাহায্যে তাদের ধরছে না? কেন বা আইন মোতাবেক কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না কেন?
আইন অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা না নিলে এই কাছিম কেনাবেচার রমরমা কারবার চলতেই থাকবে। পুলিশ ও প্রশাসনের সাহায্যে ওই সব হাটে কঠোর ব্যবস্থা নিলে ওই প্রাণীটির কেনাবেচা অবশ্যই বন্ধ হয়ে যাবে। তাই প্রশাসনের তরফে কাজটি দ্রুত বাস্তবায়িত করা বিশেষ জরুরি।
ভীমনারায়ণ মিত্র, রায়গঞ্জ |
ভারতের মানচিত্রে জল্পেশ অন্যতম একটি তীর্থস্থান। মন্দিরবেষ্টিত এই শহরটা কিন্তু শিক্ষায় অগ্রগতি হয়েছে। জল্পেশ শহরের আশপাশে অনেক উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। কিন্তু এই পর্যন্তই। উচ্চশিক্ষার জন্য এখানকার ছাত্রছাত্রীদের ময়নাগুড়ি শহর কিংবা জলপাইগুড়ি শহরে যেতে হয়। এরই পাশাপাশি জল্পেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা তেমন উন্নত নয়। ফলে অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রী কার্যত যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে অন্যত্র স্কুল-কলেজে গিয়ে ভর্তি হতে পারে না। শহরের উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রী বের হয়। কিন্তু তাদের জন্য স্থানীয় জায়গায় একটি কলেজ নেই, এটা অত্যন্ত দুঃখের ব্যাপার। তা ছাড়া শিবতীর্থের জায়গায় একটি কলেজের স্থানীয় দাবি থাকতেই পারে। জল্পেশের নানা স্কুল থেকে অনেক কৃতী সন্তান পাশ করে গিয়েছেন যাঁরা সরকারের অনেক উচ্চ পদে আসীন। শিক্ষার আধুনিকীকরণের যুগে জল্পেশে গড়ে উঠুক এক কলেজ। কলেজ হলে শহরের উন্নতি হবে। তাই যোগাযোগ ব্যবস্থাও বাড়বে। শহরের অনেক ছাত্রছাত্রী পড়াশোনার সুযোগ পাবে। কলেজের সঙ্গে মন্দিরের শ্রীবৃদ্ধি ঘটবে। আর তাতে এই এলাকার রেল যোগাযোগেরও উন্নতি ঘটবে।
নূপুর বন্দ্যোপাধ্যায়, জলপাইগুড়ি |
কয়েক মাস হতে চলেছে বালুরঘাট থেকে সরাসরি আলিপুরদুয়ার জংশন পর্যন্ত বালুরঘাট ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস বন্ধ। বালুরঘাট, গঙ্গারামপুর ছাড়াও বুনিয়াদপুর, গাজলে বহু যাত্রী আছেন, যাদের গন্তব্য ওদলাবাড়ি, মালবাজার, চালসা, নাগরাকাটা, হাসিমারা হয়ে আলিপুরদুয়ার। বালুরঘাট থেকে এই সব রুটের যাত্রীরা ভীষণ সমস্যার সম্মুখীন হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে বালুরঘাট ইন্টারসিটি বালুরঘাট থেকে ১০-৪০ মিনিটে (যদিও সঠিক সময়ে চলে না) ছেড়ে নিউ জলপাইগুড়ির উদ্দেশে রওনা হয়। এটি যখন এনজিপি স্টেশনে পৌঁছয় তখন আর ডুয়ার্সগামী ট্রেন পাওয়া যায় না। তার একটি কারণ রাঙাপানি ও এনজিপি স্টেশনে ঢোকার মুখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা।
অন্য দিকে, আলিপুরদুয়ার জংশন থেকে বালুরঘাট যেতে একমাত্র ভরসা এনজিপি স্টেশন থেকে বালুরঘাট ইন্টারসিটি, যার সময়সূচি সকাল ১০.২০ মিনিটে। আলিপুরদুয়ার জংশন থেকে ভোর ৫টার ট্রেন ধরেও এনজিপি স্টেশন পৌঁছতে লাগে সকাল ১১টা। ততক্ষণ বালুরঘাট ইন্টারসিটি এনজিপি থেকে ছেড়ে চলে যায়। আবার রাস্তার ভয়াবহ বেহাল অবস্থার জন্য সকাল ১১টার পর কোনও সরকারি বা বে-সরকারি বাসও মেলে না। তাই রেলপ্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর কাছে অনুরোধ, বালুরঘাট থেকে সরাসরি আলিপুরদুয়ার জংশন পর্যন্ত বালুরঘাট ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস পুনরায় চালানোর ব্যবস্থা করে এই সব রুটের যাত্রীদের একটা সুরাহা করুন।
শংকর সিংহ, আলিপুরদুয়ার। |