|
|
|
|
বিশেষ নম্বর প্লেট নিয়ে নোটিস ৮ রাজ্য, কেন্দ্রকে |
প্রেমাংশু চৌধুরী • নয়াদিল্লি
২ ফেব্রুয়ারি |
আমদাবাদ বিস্ফোরণ। গুয়াহাটির ধারাবাহিক বিস্ফোরণ। মালেগাঁও বিস্ফোরণ।
দেশের তিন প্রান্তে এই তিন ঘটনার মধ্যে মিল একটাই। সব জায়গাতেই নাশকতা ঘটাতে সন্ত্রাসবাদীরা চুরি করা গাড়ি ব্যবহার করেছিল। গাড়ি চুরি করে তার নম্বর প্লেট পাল্টে সেই গাড়ি নাশকতার কাজে লাগানো হয়।
গাড়ির নম্বর প্লেট পাল্টে ফেলে নাশকতা বন্ধ করতেই সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, গোটা দেশের সমস্ত গাড়িতে বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থা সমৃদ্ধ (হাই-সিকিউরিটি রেজিস্ট্রেশন প্লেট) নম্বর প্লেট লাগাতে হবে। তা সে বাণিজ্যিক গাড়ি হোক বা ব্যক্তিগত। কিন্তু এখনও সারা দেশে সেই নির্দেশ পালন হয়নি। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ-সহ আটটি রাজ্যের কাছে জবাবদিহি চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ওই তালিকায় রয়েছে দিল্লি, বিহার, হরিয়ানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, হিমাচলপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশও।
কেন্দ্র ও রাজ্যগুলি নির্দেশ না মানায় অল-ইন্ডিয়া অ্যান্টি-টেররিস্ট ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এম এস বিট্টা আদালত অবমাননার মামলা করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টে। তাঁর অভিযোগ, ২০০৪ সালেই নম্বর প্লেট নিয়ে এই নির্দেশ দিয়ে আসছে শীর্ষ আদালত। চূড়ান্ত নির্দেশ দেওয়া হয় ২০১২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি। ওই নির্দেশে বলা হয়, কেন্দ্রীয় মোটর ভেহিকল নিয়মাবলি ৫০ নম্বর সংশোধিত বিধি মেনে, যে সব নতুন গাড়ি রাস্তায় নামছে, তাতে তো বটেই, পুরনো গাড়িতেও এই ধরনের নম্বর প্লেট লাগাতে হবে। কিন্তু সারা দেশে এখনও সেই কাজ শেষ হয়নি। কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রক এবং কয়েকটি রাজ্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অবমাননা করেছে। যে সব আধিকারিক এ জন্য দায়ী, তাদের শাস্তিরও আবেদন জানিয়েছেন বিট্টা। অভিযোগ উঠেছে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতিরও। |
|
১৭ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় পরিবহণ সচিব ছাড়াও ওই রাজ্যগুলির পরিবহণ সচিবদের নোটিস পাঠায় বিচারপতি এ কে পট্টনায়ক ও বিচারপতি জে এস খেহরের ডিভিশন বেঞ্চ। প্রথমে এক মাসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছিল। চাপের মুখে জবাব তৈরির জন্য কেন্দ্র ও রাজ্যগুলি সুপ্রিম কোর্টের কাছে আরও এক মাস সময় চেয়ে নিয়েছে।
কী এই হাই-সিকিউরিটি নম্বর প্লেট? গাড়ি চুরি করে যাতে তার নম্বর প্লেট পাল্টে না ফেলা যায়, তা নিশ্চিত করতেই এই ধরনের প্লেট বসানোর নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। এই নম্বর প্লেটে ক্রোমিয়াম হলোগ্রামের পাশাপাশি ভারতীয় গাড়ি বলে ‘আইএনডি’ ছাপ এবং প্রতিটি লাইসেন্স প্লেটের জন্য নির্দিষ্ট একটি ন’অঙ্কের সংখ্যা থাকে। গাড়ির পিছন দিকে নম্বর প্লেট লাগানোর জন্য বিশেষ ধরনের তালা থাকে। যা নম্বর প্লেট খোলার চেষ্টা করলেই ভেঙে যায়। যাতে সহজেই বোঝা যায় গাড়ির নম্বর প্লেট বদলানো হয়েছে। পথ-দুর্ঘটনা রুখতে ২০০ মিটার দূর থেকে দেখা যাবে এমন চকচকে প্লেট ব্যবহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সহজেই গাড়ির নম্বর পড়ার সুবিধার জন্য ত্রিমাত্রিক খোদাই করা নম্বর বসানো থাকে। যাতে রং দিয়ে নম্বর বদলে না দেওয়া যায়, তার জন্য গাড়ির নম্বরের উপর ছোট হরফে ইন্ডিয়া লেখা থাকে। গাড়ির উইন্ড স্ক্রিনে সমস্ত তথ্য সংবলিত স্টিকার থাকে। যা ওঠানোর চেষ্টা করলে নষ্ট হয়ে যাবে।
বিট্টার অভিযোগ, হাই-সিকিউরিটি নম্বর প্লেট নিয়ে যে বেআইনি কাজ কারবার চলছে, তাতে লাগাম পরানো না হলে এটা জাল নোট বা জাল স্ট্যাম্প পেপারের মতো দুর্নীতির চেহারা নেবে। সুপ্রিম কোর্ট যে ধরনের হাই-সিকিউরিটি নম্বর প্লেট লাগানোর নির্দেশ দিয়েছিল, তা মেনে নম্বর প্লেট সরবরাহ হয়নি। কম দামে নিম্ন মানের নম্বর প্লেট গাড়িতে লাগানো হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বলা ছিল, যারা বরাত পাবে, তারাই নম্বর প্লেট তৈরি করে গাড়িতে লাগানোর কাজ করবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে, ওই সব সংস্থা আবার অন্য সংস্থার থেকে নম্বর প্লেট কিনে সরবরাহ করেছে। নম্বর প্লেট যে মানের হওয়ার কথা ছিল, সেই মানের হচ্ছে না। নম্বর প্লেট সরবরাহের জন্য দিল্লি, অন্ধ্রপ্রদেশ, হিমাচলপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, হরিয়ানা, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে যাদের বরাত দেওয়া হয়েছিল, তারা নিয়মবিরুদ্ধ কাজ করেছে। বিট্টার বক্তব্য, এই সব রাজ্যে দু’টি বেসরকারি সংস্থা মিলে নতুন সংস্থা গড়ে বরাত পেয়েছিল। তারা আবার অন্য সংস্থার থেকে প্লেট কিনে সরবরাহ করেছে। এই তৃতীয় সংস্থাটির নম্বর প্লেট তৈরির জন্য যে শংসাপত্র প্রয়োজন, তা জানুয়ারি মাসে বাতিল করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা সেন্ট্রাল রোড রিসার্চ ইনস্টিটিউট।
শুধু নিম্ন মানের প্লেটই লাগানো হচ্ছে না। তার জন্য এক এক রাজ্যে এক এক রকমের দাম হাঁকা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় আইন অনুযায়ী, মোটর ভেহিকল্স দফতরের চত্বরেই গাড়িতে নম্বর প্লেট লাগানোর কথা। কিন্তু আদতে সেই কাজ দফতরের বাইরে হচ্ছে। যেখানে রাজ্য সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। হাই সিকিউরিটি নম্বর প্লেট লাগানোর পিছনে যে মূল উদ্দেশ্য ছিল, সেই গাড়ি চুরি ও নাশকতা রোখার কাজ সফল হচ্ছে না। বিট্টার বক্তব্য, পরিবহণ মন্ত্রক, রাজ্য সরকার ও প্লেট পরীক্ষা করে শংসাপত্র দেওয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলির আধিকারিকদের মধ্যে যোগসাজশ রয়েছে।
বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন বলে এ নিয়ে কেন্দ্রীয় পরিবহণ মন্ত্রকের কর্তারা মুখ খুলতে নারাজ। ঘরোয়া আলোচনায় তাঁদের বক্তব্য, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার মধ্যে খেয়োখেয়িতেই জলঘোলা শুরু হয়েছে। কী বলছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার? রাজ্য সরকার সূত্রের বক্তব্য, অন্যান্য রাজ্যের থেকে হাই-সিকিউরিটি নম্বর প্লেট লাগানোর পশ্চিমবঙ্গ অনেক এগিয়ে। নতুন গাড়িতে এই নম্বর প্লেটই লাগানো হচ্ছে। যেখানে বরাত দেওয়া নিয়ে আদালতে মামলা চলছে, সেখানে পুরনো গাড়িগুলির ক্ষেত্রে ওই নম্বর প্লেট লাগানোর বরাত দেওয়ার কাজ শুরু করা উচিত কি না, তা নিয়ে আইনি মতামত নেওয়া হচ্ছে।
|
পুরনো খবর: আড়ম্বরেই আটকে রইল ‘উচ্চ সুরক্ষা’র নম্বর প্লেট |
|
|
|
|
|