জোড়া বাউন্সার। এতে অবশ্য ভারতীয় ক্রিকেট দলের মতো শুয়ে পড়েনি ভারতীয় অর্থনীতি তথা দেশের দুই প্রধান শেয়ার সূচক।
মঙ্গলবার প্রথম বাউন্সারটি এসেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কর্ণধার রঘুরাম রাজনের কাছ থেকে। বাজারকে অবাক করে তিনি এ বার সুদ বাড়ানোর পথে হাঁটলেন, যখন পণ্যমূল্য একটু একটু করে কমতে শুরু করেছিল। রাজন রেপো রেট বাড়িয়েছেন ২৫ বেসিস পয়েন্ট। ফলে তা দাঁড়াল ৮ শতাংশ। রেপো রেট হল সেই সুদের হার, যাতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে টাকা ধার দেয়। অভিজ্ঞ মহলের মতে, পণ্যমূল্য পাকাপাকি ভাবে না-কমলে সুদ কমানোর পথে রাজন হাঁটবেন না। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্ট অনুযায়ী আর্থিক বছরের প্রথম ৯ মাসে গড় খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার (ভোগ্যপণ্যের মূল্য সূচকের ভিত্তিতে) ছিল ৯.৯ শতাংশ। আশা করা হচ্ছে, মার্চের শেষ নাগাদ ভোগ্যপণ্যমূল্য বৃদ্ধির হার ৯ শতাংশে নেমে আসতে পারে। এই কথা মাথায় রেখে রাজনের মন্তব্য, সুদ আর বাড়ার সম্ভাবনা এখন নেই। কিন্তু কবে সুদ কমতে পারে তারও কোনও ইঙ্গিত এখনও তিনি দেননি। ফলে ভাল রকম হতাশ শিল্প-বাণিজ্য মহল।
দ্বিতীয় বাউন্সারটি এসেছে মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ কর্ণধার বেন বার্নানকে-র তরফ থেকে। বৃহস্পতিবার আর এক দফা আর্থিক ত্রাণ কমানোর কথা ঘোষণা করেন তিনি। মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক সিদ্ধান্ত নেয়, মাসিক বন্ড ক্রয়ের মাত্রা আরও ১,০০০ কোটি ডলার কমিয়ে ৬,৫০০ কোটি ডলারে নামিয়ে আনা হবে। এতে ত্রাসের সৃষ্টি হয় বিশ্ব বাজারে। বাজার থেকে সরকার বন্ড কেনা কমালে কমবে সে দেশে ডলার প্রবাহ। আশঙ্কা, এতে লগ্নি কমবে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে। এই আশঙ্কায় বাজার পড়ে প্রায় সর্বত্র।
দু’টি বাউন্সারই ভাল রকম খেলেছে ভারত। সুদ বাড়ার দিনে সেনসেক্স পড়েছে মাত্র ২৪ পয়েন্ট। নিফ্টি ১০। বার্নানকে-র ঘোষণার পরে সেনসেক্স নেমেছে ১৪৯ অঙ্ক। নিফ্টি ৪৭ পয়েন্ট। ভারতীয় মুদ্রার তেমন কোনও বড় পতন হয়নি। শুক্রবার ডলারের দাম ছিল ৬২.৬৮ টাকা। মনে রাখতে হবে, গত ২৮ অগস্ট ডলারের দাম উঠেছিল ৬৮.৮৫ টাকায়। ত্রাহি ত্রাহি রব পড়ে গিয়েছিল দেশ জুড়ে। এ বার কিন্তু তা হয়নি। চলতি খাতে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন ঘাটতি (ক্যাড্) বা বৈদেশিক মুদ্রা আয়-ব্যয়ের ফারাক অনেকটা নেমে আসাই এর মূল কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
মোক্ষম দুটি শক্তিশেলের ধাক্কায় বাজার যতটা পড়ার কথা ছিল, তা কিন্তু হয়নি। সামান্য বাড়লেও শুক্রবার বাজার আবার সবুজে ফিরেছে। সুদ বাড়ার কারণে দাম কমেছে বেশির ভাগ ব্যাঙ্ক এবং গাড়ি শেয়ারের। নেমেছে অনেক মাঝারি এবং ছোট শেয়ারও। কোম্পানি ফলাফলেরও প্রভাব দেখা যাচ্ছে বাজারে। গত সপ্তাহে বেশ কয়েকটি খারাপ ফলাফল বাজার পেয়েছে। এর মধ্যে আছে পিএনবি, ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, হিরো মোটোকর্প ইত্যাদির মতো নামী সংস্থা। চলতি বছরে ভারতের জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ স্পর্শ করবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। সুদ কমতে শুরু করলে তবেই উৎপাদন বৃদ্ধির আশা করা যেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে যে বাজার বেশ গরম হয়ে উঠবে, তা কিন্তু মনে করা হচ্ছে না। গ্যাস সিলিন্ডারে ভর্তুকি বাড়ানোর মতো ভোটের আগে কেন্দ্রীয় সরকারের জনমোহিনী পদক্ষেপ বাজারের পছন্দ হয়নি। নির্বাচন শেষে নতুন সরকারের গদিতে না-বসা পর্যন্ত বাজারে ডামাডোল চলবে বলে ধরে নেওয়া যায়।
সুদ বৃদ্ধি আবার ক্ষতের সৃষ্টি করেছে বন্ড বাজারে। শেয়ার ও বন্ডের দাম নামায় আবার কালো মেঘ দেখা দিয়েছে মিউচুয়াল ফান্ডের আকাশে। অন্য দিকে, চড়া সুদে নতুন বন্ড ইস্যু মোটা টাকা শুষে নিচ্ছে বাজার থেকে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রেপো রেট বাড়ানোর পর বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি জমা এবং ঋণের উপর সুদের হার বাড়ায় কি না তা-ই এখন দেখার। |