জুটি-বিদায়
ক ছাতার তলায় ভিজে সপসপে রাজ কপূর-নার্গিস... অথবা নেদারল্যান্ডসের কিউকেনহফ টিউলিপ বাগানে ‘সিলসিলা’র সেই অমিতাভ বচ্চন-রেখার ‘ইয়ে কহাঁ আ গয়ে হম’... কিংবা ‘ধক ধক করনে লগা’-র লাস্যময়ী মাধুরীর সঙ্গে অনিল কপূরের সেই দৃশ্য...
আরও অনেক তারকাই জুটির লিস্টে আছেন। গুরু দত্ত-ওয়াহিদা রহমান, দিলীপকুমার-বৈজয়ন্তীমালা, রাজেশ খন্না-শর্মিলা ঠাকুর, ধর্মেন্দ্র-হেমা মালিনী থেকে শুরু করে সলমন খান-করিশ্মা কপূর, আমির খান-জুহি চাওলা আর শাহরুখ-কাজল পর্যন্ত। শেষ যে ছবিতে শাহরুখ-কাজল একসঙ্গে কাজ করেছেন, তা ছিল ‘মাই নেম ইজ খান’। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ২০১০-য়ে।
তার পর?
শাহরুখের এর পরেও অনেক হিট রয়েছে। কিন্তু কাজল ঘরকন্না নিয়েই ব্যস্ত থেকেছেন। শাহরুখের সঙ্গে কাজ করে ১০০ কোটি ক্লাব-য়ে নাম লিখিয়েছেন দীপিকা পাড়ুকোন থেকে অনুষ্কা শর্মার মতো হিরোইনরা।

রাজ কপূর-নার্গিস
‘কয়ামত সে কয়ামত তক’-য়ের আমির-জুহি জুটি এখন ইতিহাস। এ দিকে ক্যাটরিনা কইফ থেকে করিনা কপূর সবার সঙ্গেই আমিরকে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। অক্ষয়কুমার সেই কবে রবিনা টন্ডন আর শিল্পা শেট্টিকে ছেড়ে এগিয়ে গিয়েছেন নতুন হিরোইনদের খোঁজে। ছবি করেছেন প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার সঙ্গে। তার পর সোনাক্ষী সিংহ। তবে জুটি নয়। সোনাক্ষী তো আবার সলমনের সঙ্গেও হিট।
তা হলে কি জুটির অপমৃত্যু হয়েছে ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে? তা সে বলিউডেই হোক কি টলিউডে?
এক সময় প্রসেনজিৎকে দেখা গিয়েছে ঋতুপর্ণার সঙ্গে জুটি বেঁধে কাজ করতে। রচনার সঙ্গেও প্রচুর সিনেমা করেছেন তিনি। কিন্তু সে সব কিছুই আজকাল আর্কাইভে তুলে রাখা আছে।
ঋতুপর্ণার ক্ষেত্রেও তাই। সিনেমার সংখ্যা প্রচুর। কিন্তু কোনও নির্দিষ্ট জুটি নেই। এক সময় হেমা মালিনী আর ধর্মেন্দ্র মিলে নাকি ৪০টি সিনেমা করেছিলেন জুটি বেঁধে। আজ? সে রেকর্ড আজ মনে হবে অলীক কল্পনা।
রোম্যান্টিক সিনেমার আকাল তো পড়েনি ফিল্ম দুনিয়ায়। সম্পর্ক নিয়ে সিনেমা করাতে পরিচালকদের উৎসাহের শেষ নেই। তবে জুটিতে এত অনীহা কেন? প্রেম তো আর সিনেমা থেকে মুছে যায়নি।
তা হলে রাজকন্যা, থুড়ি অভিনেত্রী, কি কম পড়িয়াছে?
নাকি নতুন জুটি সৃষ্টি করার চমকের আকর্ষণটাই বেশি?
যার জন্য দায়ী সিনেমার নতুন ঘরানা?
মানতে নারাজ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। বললেন “কমার্শিয়াল ছবি তো একই রকম আছে। আসলে যাঁরা অনেক দিন কাজ করেন, একটা সময় তাঁরা নতুন হিরোইন চান। কিন্তু নতুনরা জুটি বাঁধছে না,” যুক্তি তাঁর।

সুচিত্রা-উত্তম
বলিউডে অবশ্য হিট জুটি বছরের পর বছর ধরে রাখার একটা অন্য সমস্যা আছে। হিরোদের বয়স সেখানে যত বেশিই হোক না কেন, জুটির হিরোইনরা কিন্তু বিয়ের পর সিনেমা করাই ছেড়ে দেন। ‘এক দো তিন’য়ের মাধুরী দীক্ষিত বিয়ের পর ফিরে এসে যখন ‘আ যা নাচলে’ করলেন, তখন তাঁর বিপরীতে অনিল কপূর নেই। সম্প্রতি করলেন ‘দেড় ইশকিয়া’। সেখানে তাঁর বিপরীতে নাসিরুদ্দিন শাহ্। সামনেই মুক্তি পাবে তাঁর ‘গুলাব গ্যাং’। সেখানে তাঁর সঙ্গে আছেন জুহি চাওলা!
আর সেখানে মাধুরীর ‘হম আপকে হ্যায় কৌন’য়ের নায়ক, সেই সলমন খান এখনও হাঁটুর বয়সি নায়িকাদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।
বিয়ের পরে যে অভিনেত্রীরা সিনেমা থেকে ছুটি নেননি, তাঁদেরও জুটি তৈরি নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই। ইমরান হাসমি থেকে ফারহান আখতার সবার সঙ্গে কাজ করছেন বিদ্যা বালন। করিনা কপূরের ঝুলিতে তো রয়েছে মামা-ভাগ্নে আমির-ইমরানের সঙ্গে কাজ করার বিরল অভিজ্ঞতা।
এ সবের পেছনে নাকি একটা অন্য কারণ কাজ করছে। সব তারকাই আজকাল চান নিজের একটা ব্র্যান্ড তৈরি করতে। আর সেই ব্র্যান্ডটা ভীষণ ‘ইন্ডিভিজুয়াল স্পেস’কে কেন্দ্র করে তৈরি করাই তাঁদের লক্ষ্য। এমন একটা জায়গা তাঁরা করে নিতে চান, যেখানে অন্য কারও উপর তাঁদের নির্ভরশীল না হতে হয়। যেখানে যে-কোনও সহ-অভিনেতা বা অভিনেত্রীর সঙ্গে কাজ করলেও দর্শক তাঁর সিনেমা দেখার ইচ্ছেতে কার্পণ্য করবেন না। এই দর্শনে যাঁরা বিশ্বাসী তাঁরা এমনিতেই যে জুটি গড়তে উৎসাহী হবেন না সেটাই স্বাভাবিক।
কমবয়সি নায়কদেরও একই কথা। তা সে রণবীর কপূর হোন বা রণবীর সিংহ। দীপিকা, প্রিয়ঙ্কা থেকে ক্যাটরিনা, নার্গিস সবার সঙ্গেই কাজ করেছেন রণবীর। এ দিকে অনুষ্কা, সোনাক্ষী, প্রিয়ঙ্কা থেকে দীপিকা কেরিয়ারের আপাতত সই করা ৮-টি ফিল্মে রণবীর এঁদের সবাইকেই সহ-অভিনেত্রী হিসেবে পেয়েছেন।

কোয়েল, শুভশ্রী, শ্রাবন্তী, পায়েল— সবার সঙ্গে আমার হিট ছবি রয়েছে। আজকাল কনসেপ্টে জোর দেওয়া হয়। জুটি নিশ্চয়ই ইম্পর্ট্যান্ট। কিন্তু হয়তো সেটা থার্ড ক্রাইটেরিয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে
দেব
এক সময় শুনতাম জিৎ-প্রিয়ঙ্কার জুটি। তার পর ‘জিকো জিকো’ শুনতাম। ‘বস’ হিট হওয়ার পর শুভশ্রী আর আমার জুটি নিয়েও কথা হচ্ছে। আমি খোলা মনে সবার সঙ্গে কাজ করতে চাই
জিৎ

টলিউডে জুটি সে অর্থে লাস্ট আমিই ক্রিয়েট করেছি। প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা, প্রসেনজিৎ-রচনা,
প্রসেনজিৎ-অর্পিতা...তার পর কোনও হিট জুটি একসঙ্গে ১০টা ছবি করেনি।
যাঁরা অনেক দিন কাজ করেন, একটা সময় তাঁরা নতুন হিরোইন চান
প্রসেনজিৎ
হিন্দি ছবির শেষ জুটি ছিল শাহরুখ-কাজল। তার পর আর কোনও তারকা জুটি বেঁধে টাইপকাস্ট হতে চাননি। নতুন কনসেপ্ট, নতুন পেয়ারিং — এটাই বলিউডের সাম্প্রতিক ট্রেন্ড
তরণ আদর্শ
শাহরুখ-দীপিকা তো তিনটে ছবি করছে। রণবীর-ক্যাটরিনাও একসঙ্গে ছবি করছে। তবে জুটি ব্যবহারের হার কমেছে। কারণ দর্শক দ্রুত মনোযোগ হারিয়ে ফেলে। তারা নতুন কিছু চায়
মধুর ভান্ডারকর

টলিউডে এক সময় জিৎ আর কোয়েল প্রচুর কাজ করেছেন একসঙ্গে। তবে এখন জিৎ-শুভশ্রী জুটিও দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছে। ‘বচ্চন’য়ে জিতের বিপরীতে রয়েছেন ঐন্দ্রিতা রায়। জিতের বিপরীতে ‘দ্য রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার’য়ে তো কোনও হিরোইনই নেই। যদিও গত বছর মুক্তি পেয়েছিল দেব-কোয়েলের ‘রংবাজ’। এ বছরে দেব-য়ের প্রথম মুক্তি পাওয়া ছবি ‘বুনো হাঁস’য়ে তাঁর বিপরীতে থাকছেন তনুশ্রী চক্রবর্তী। কোয়েলের পরপর তিনটে ছবিতে তাঁর বিপরীতে আছেন ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত (‘অরুন্ধতী’), পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় (‘হাইওয়ে’) আর আবির চট্টোপাধ্যায় (‘চার’)।
পরিচালকরা বলছেন পুরনো জুটি ভেঙে নতুন-নতুন জুটি করার পিছনে নাকি দর্শকের চাহিদারও একটা ভূমিকা রয়েছে। সিনেমার বিষয়বস্তু পাল্টেছে। “গল্প বলার ধারাটাও পাল্টাচ্ছে। তাই প্রয়োজন হচ্ছে রিয়্যালিস্টিক আর আনকনভেনশনাল কাস্টিং। সেই জন্যই এক্সপেরিমেন্ট হচ্ছে,” বলছেন ‘বুনো হাঁস’য়ের পরিচালক অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী।
তবে এ সবের বাইরেও একটা যুক্তি অগ্রাহ্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। সত্যি যদি ইন্ডাস্ট্রিতে রাজ কপূর-নার্গিস বা সুচিত্রা-উত্তমের মতো সুপারহিট জুটি তৈরি হত, তা হলে কি আর প্রযোজকরা তা রিপিট করতেন না? ‘গাইড’-য়ের দেব আনন্দ-ওয়াহিদা রহমানের সেই অনস্ক্রিন কেমিস্ট্রি আজও পুরনো হয়নি দর্শকদের মনে। কিন্তু সেই ম্যাজিক তৈরি করার ক্ষমতা কি রাখেন আজকালকার নায়ক-নায়িকারা?
অনিরুদ্ধ অবশ্য বলছেন, “আমি বা আমার বন্ধু পরিচালকেরা কেউই কিন্তু জুটি তৈরি করার পেছনে ছুটিনি। যে সময় জুটি তৈরি হত, তখন সিনেমাই ছিল বিনোদনের একমাত্র উপায়। কিন্তু আজ আর তা নয়। এখন গতির যুগ। দর্শকের অ্যাটেনশন স্প্যান-টাও কম। তাই সব সময় নতুন কিছু ভাবতে হবে। ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’তে দীপিকাকেই দেখুন! রণবীরের সঙ্গে জুটি বেঁধে এই সিনেমাতে দীপিকা থাকলেও ওর লুক-টা কিন্তু একদম আলাদা। চোখে চশমা। নার্ডি লুক।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.