জুরাসিক ‘বড়াপা’কে ৯ মিনিটের ফিরে দেখা
লকাতায় জুরাসিক-ফিল্ম!
স্পিলবার্গের মতো কাহিনিচিত্র নয় অবশ্য, তথ্যচিত্র। ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিকাল ইনস্টিটিউটের (আইএসআই) সৌজন্যে!
এ দেশে এখনও অবধি জুরাসিক যুগের পূর্ণাঙ্গ ডাইনোসর-ফসিল রয়েছে মাত্র দু’টি। একটি হায়দরাবাদে, তার নাম কোটাসরাস। অন্যটি বড়াপাসরাস টেগোরাই, সে রয়েছে কলকাতায়। আইএসআই-এর সংগ্রহশালায়। তাকে নিয়েই ছবি। ১৯৭৭ সালে যখন ফসিলটি প্রথম পূর্ণাঙ্গ চেহারায় দাঁড় করানো হয় (বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় যাকে বলে ‘মাউন্ট’ করা), তখন সে ছিল এশিয়ার প্রথম ‘মাউন্ট’ করা জুরাসিক সদস্য।
জুরাসিক যুগ মানে, আনুমানিক ২০ কোটি ১০ লক্ষ থেকে ১৪ কোটি ৫০ লক্ষ বছর আগের কথা। তারও পিছনের সময়টাকে বলা হয় ট্রায়াসিক যুগ। আনুমানিক ২৫ কোটি ১০ লক্ষ থেকে ২০ কোটি ১০ লক্ষ বছর আগের। এবং জুরাসিকের ঠিক পরের যুগটির নাম ক্রিটেশিয়াস যুগ। আনুমানিক ১৪ কোটি ৫০ লক্ষ থেকে ৬ কোটি ৫০ লক্ষ বছর আগের।
কলকাতার জুরাসিক ডাইনোসর। ছবি: সাগ্নিক চট্টোপাধ্যায়ের সৌজন্যে।
ভারতে পাওয়া প্রাচীনতম ট্রায়াসিক ডাইনোসরটির নাম, অ্যালওয়াকারিয়া। তার দেহাংশও আইএসআই-তেই রয়েছে। এ ছাড়া আইএসআই-এর সংগ্রহে আছে ট্রায়াসিক যুগের আরও দুই ডাইনোসর, নাম্বালিয়া ও জাকলাপাল্লিসরাস। ক্রিটেশিয়াস যুগের টাইটানোসরাস, রাহিওলিসরাস। জুরাসিক যুগের আরও দুই সদস্য প্রধানিয়া এবং ল্যাম্পলুসরাসের নিবাসও এখানেই। তবে এরা কেউই ‘মাউন্ট’ করা পূর্ণাঙ্গ চেহারায় নেই। কিছু হাড়গোড় রয়েছে। এ ছাড়া এ দেশে পাওয়া সর্বপ্রাচীন সরীসৃপের জীবাশ্মও এখানে রয়েছে।
তবে সাগ্নিক চট্টোপাধ্যায়ের বানানো ৯ মিনিটের তথ্যচিত্রটা কেবল বড়াপাসরাস টেগোরাইকে নিয়েই। এই নামের পিছনে একটা ইতিহাস আছে। মাটি খুঁড়ে বের করার সময় আইএসআই টিমের এক গাড়িচালক এই ‘বড়া পা-ওয়ালা জানবর’কে দেখে খুবই অবাক হয়েছিলেন। তাঁর সেই বিস্ময়বাক্যের সূত্র ধরেই এর নাম রাখা হয় বড়াপাসরাস। আর ১৯৬১ সালে আবিষ্কার বলে তার ‘পদবী’ হয় টেগোরাই। অন্ধ্র-মহারাষ্ট্র সীমানার প্রাণহিতা-গোদাবরী বেসিন অঞ্চলে এই খননের নেতৃত্ব দেন ব্রিটিশ ভূতত্ত্ববিদ পামেলা রবিনসন। মূলত প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশের আমন্ত্রণেই তিনি এ দেশে এসেছিলেন। তার পর আইএসআই থেকে পামেলার সঙ্গে প্রস্তুতি-পর্বেই যোগ দেন সোহনলাল জৈন ও তপন রায়চৌধুরী (পরবর্তী কালে আইএসআই-তে পুরাজীববিদ্যার চর্চাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পিছনে তপনবাবুর উদ্যোগই ছিল সবচেয়ে বেশি)। তার পর খনন শুরু হলে আসেন টি এস কুট্টি, ধীরাজ রুদ্ররা।
১৯৬১-র এই কর্মকাণ্ডই স্বাধীন ভারতে পুরাজীববিদ্যায় প্রথম বড় মাপের আবিষ্কার। একেবারে স্থানীয় গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে শাবল, গাঁইতির সাহায্যেই বের করা হয়েছিল বড়াপা-কে। সেই সঙ্গে পাওয়া গিয়েছিল প্রাগৈতিহাসিক গাছের বিরাট সব গুঁড়ি। তাদের সঙ্গেই আটকে ছিল অন্তত ছ’টি ডাইনোসরের হাড়গোড়। পরে ধীরে ধীরে তার মধ্যে থেকে বেছে বেছে হাড়ের সঙ্গে হাড় মিলিয়ে একটি পূর্ণাবয়ব শরীর তৈরি করা সম্ভব হয়। সেটিই এখন লোহার ফ্রেমে সগর্বে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। উচ্চতায় প্রায় ১২-১৩ ফুট, লম্বায় প্রায় ৫০ ফুট তো বটেই।
তবে আইএসআই-এর ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক শাশ্বতী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ধূর্জটিপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলছিলেন, জুরাসিক ডাইনোসরের আকার তুলনায় ছোটই হত। ডাইনোসরেরা আরও অতিকায় চেহারা পেয়েছিল জুরাসিকের পরবর্তী ক্রিটেশিয়াস যুগে। ‘‘নাম ‘জুরাসিক পার্ক’ হলেও স্পিলবার্গের ছবিতে প্রধানত যে জাতীয় ডাইনোসর দেখানো হয়েছে, তার সঙ্গে ক্রিটেশিয়াস ডাইনোসরেরই মিল আছে, জুরাসিকের নয়।’’ সুতরাং কলকাতায় বসে সত্যিকার জুরাসিক ডাইনোসর দেখতে গেলে আইএসআই সংগ্রহশালাই একমাত্র গন্তব্য। শুধু জুরাসিকই বা কেন, কলকাতার বুকে একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ডাইনোসর এই বড়াপা-ই। তথ্যচিত্রটি তৈরি হওয়ার পরে এ বার আরও বেশি মানুষ বড়াপা-কে দেখতে পাবেন বলে আশা করাই যায়।
তথ্যচিত্রটি তৈরি করানোর উদ্দেশ্যও কি সেটাই? সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দেশবিদেশের গবেষকদের কাছে বড়াপাসরাসের জীবনকথা সহজে পৌঁছে দেওয়া একটা অন্যতম লক্ষ্য তো বটেই, মানছেন শাশ্বতী। ইতিমধ্যেই কামারহাটি বইমেলায় ছবিটা দেখানো হয়েছে। এমনিতে ১৬ মিলিমিটার ক্যামেরায় ১৯৬১-র সেই খননকাজের কিছু লাইভ ফুটেজও তুলে রাখা ছিল। কিন্তু সেই পুরনো ফিল্ম পুনরুদ্ধার (রেসটোর) না করে দেখানোর মতো অবস্থায় নেই। ফলে আপাতত এই নতুন তথ্যচিত্রই ভরসা। আরও একটা পরিকল্পনা আছে। ধূর্জটিবাবু বলছিলেন, “আমাদের সংগ্রহশালায় আলাদা করে কোনও কর্মচারী নেই। ফলে যখনই কেউ বড়াপাকে দেখতে আসেন আমরাই গিয়ে তাঁদের সব তথ্য বুঝিয়ে বলি।” ভবিষ্যতে সংগ্রহশালার মধ্যেই টিভি বসানো থাকবে। দর্শক রিমোট টিপে তথ্যচিত্রটি দেখে নিলেই অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.