রাজনৈতিক অস্থিরতা রাজ্যে থাকতেই পারে। কিন্তু উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তুলতে পারলে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে অনিশ্চিয়তা তৈরি হয় না। রাজ্যের প্রথম গাড়ি কারখানার লগ্নি পেয়ে এই দাবি অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন কিরণ রেড্ডির।
রাজ্য সরকারের সঙ্গে মউ সই করার মাস ন’য়েকের মধ্যেই অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীসিটি-র শিল্প তালুকে সম্প্রতি প্রস্তাবিত কারখানার শিলান্যাস করল জাপানের গাড়ি সংস্থা ইসুজু মোটরস ও মিৎসুবিশির যৌথ উদ্যোগ ইসুজু মোটরস ইন্ডিয়া। ওই কারখানায় তারা লগ্নি করছে ৩,০০০ কোটি টাকা।
বিশ্বে ‘স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকল’ (এসইউভি) ও বাণিজ্যিক গাড়ি প্রস্তুতকারক হিসেবে পরিচিত ইসুজু মোটরস। গত ডিসেম্বরে ভারতের বাজারে তাদের প্রথম এসইউভি ‘এমইউ-৭’ গাড়িটি এনেছে সংস্থা। এটি অবশ্য এখনই এখানে পুরোদস্তুর তৈরি হচ্ছে না। বিদেশ থেকে যন্ত্রাংশ এনে চুক্তির ভিত্তিতে হিন্দুস্তান মোটরস-এর চেন্নাই কারখানায় সেগুলি জুড়ে গাড়িটি তৈরি করছে তারা। ২০১৬-য় অন্ধ্রপ্রদেশে নিজেদের কারখানাটি চালু হলে সেখানেই ওই গাড়ির সঙ্গে তৈরি হবে একটি বাণিজ্যিক গাড়িও (পিক-আপ ট্রাক)। বাণিজ্যিক গাড়িটিও এখন চেন্নাইতেই তৈরি হবে। চলতি মাসে দিল্লির অটো-এক্সপোয় সেটি আনুষ্ঠানিক ভাবে বাজারে আনবে তারা।
হায়দরাবাদে কারখানাটির শিলান্যাস অনুষ্ঠানে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সুসুনু হোসোই, তাকাশি কিকুচির মতো সংস্থার শীর্ষ কর্তারা। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, রাজ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে কী করে এই লগ্নি এল? তামিলনাড়ু গাড়ি শিল্পের দৌড়ে অনেক এগিয়ে থাকলেও অন্ধ্রে প্রথম গাড়ি কারখানার লগ্নি পেয়ে দৃশ্যতই খুশি কিরণ রেড্ডি বলেন, “রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকতেই পারে। কিন্তু তার মানেই যে শিল্প বা ব্যবসাতেও অস্থিরতা থাকবে, তা নয়। আমরা লগ্নির জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ও পরিবেশ গড়েছি। সেটাই লগ্নিকারীদের আকর্ষণ করে।” তাঁর দাবি, মউ স্বাক্ষর করার পরে অন্য রাজ্যের চেয়ে তাঁরা অনেক দ্রুততার সঙ্গে বাকি কাজ সেরেছেন। কিছুটা হালকা সুরেই এরপর তিনি ইসুজু কর্তাদের উদ্দেশে বললেন, “কবে এই কারখানা থেকে গাড়ি তৈরি হবে? আমি সেই গাড়িই কিনব। আমদানি করা গাড়ি নয়। দ্রুত কারখানা চালু করুন।”
সংস্থার কর্তারা জানান, হায়দরাবাদে ২০১৬-য় নতুন কারখানা চালু হলে সেখানে গোড়ায় ৫০ হাজার গাড়ি তৈরি হবে। এর পর তা ধাপে ধাপে বেড়ে ১ লক্ষ ২০ হাজারে পৌঁছবে। গোড়ায় ভারতের বাজারই তাঁদের মূল লক্ষ্য হলেও ভবিষ্যতে ভারতের কারখানাটিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবেই গড়তে চান তাঁরা।
ভারতের বাজারে এখন গাড়ি শিল্প কিছুটা ধাক্কা খেলেও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী সংস্থাটি। কর্তাদের বক্তব্য, আগামী দিনে এসইউভি ও বাণিজ্যিক গাড়ির চাহিদা বাড়বে। তাই এখনকার সাময়িক ধাক্কাকে তেমন আমল না-দিয়ে বরং ভবিষ্যতের উপরেই বাজি ধরছেন তাঁরা। |