কয়েক দিন আগেই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন বর্ধমানের কালনা পুরসভার উপপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগ। তাঁকেই লিখিত ভাবে পদ থেকে ‘অব্যাহতি’ নেওয়ার নির্দেশ দিলেন পুরপ্রধান তথা কালনার তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু।
শনিবার বিকেলেই পুরপ্রধানের সই করা ওই চিঠিটি দেবপ্রসাদবাবুর বাড়িতে পৌঁছয়। পরে তিনি বলেন, “বিষয়টি দুভার্গ্যজনক। পুরপ্রধান হঠাৎ এই চিঠি দিয়ে ৩ ফেব্রুয়ারি পদ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বোর্ড অব কাউন্সিলরের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হলে ভাল হত। আমি চক্রান্তের শিকার।” বারবার চেষ্টা করা হলেও বিশ্বজিৎবাবু ফোন ধরেননি। রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের বর্ধমান জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ বলেন, “বিষয়টি আমার অজানা। খোঁজ নিয়ে দেখছি, ঠিক কী হয়েছে।”
তৃণমূল সূত্রের খবর, শনিবার কংগ্রেস এবং তৃণমূল কাউন্সিলরদের বৈঠকে ডেকেছিলেন বিশ্বজিৎবাবু। তা শুরু হয় সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ। পুরসভা সূত্রের খবর, বিশ্বজিৎবাবুই উপ-পুরপ্রধানকে অপসারণের প্রস্তাব আনেন। বৈঠকে তিনি জানান, তাঁর পক্ষে আর দেবপ্রসাদবাবুকে নিয়ে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি ওই পদে বদল চান। উপস্থিত আট জন কাউন্সিলর এই সিদ্ধান্তের পক্ষে সই করেন। তবে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর কল্পনা বসু সই করেননি। পরবর্তী উপ-পুরপ্রধান হিসেবে কংগ্রেস কাউন্সিলর বিশ্বজিৎ সেনের নাম প্রস্তাব করা হয়। বিশ্বজিৎ কুণ্ডুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত কাউন্সিলর সুনীল চৌধুরী অবশ্য বলেন, “বৈঠকে উপ-পুরপ্রধানের অপসারণ নিয়ে কথা হয়েছে ঠিকই। তবে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে সোমবারের বৈঠকে।”
বিশ্বজিৎ-দেবপ্রসাদ বিরোধ অবশ্য নতুন নয়। ২০১০ সালে কালনা পুর নির্বাচনে জোট করে জিতেছিল কংগ্রেস ও তৃণমূল। কিছু দিন পর থেকেই পুরপ্রধান ও উপ-পুরপ্রধানের মনোমালিন্য শুরু হয়। দেবপ্রসাদবাবু তৃণমূলে যোগ দিলেও সেই তিক্ততা কমেনি। বরং কালনা শহরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আরও বাড়ে। সম্প্রতি ‘টেট’ পরীক্ষায় বিশ্বজিৎবাবুর পরিবারের কয়েক জন উত্তীর্ণ হওয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তৃণমূলেরই একাংশ শহরে মিছিল করে। বিশ্বজিৎবাবুর ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ, দেবপ্রসাদবাবুর অনুগামীরাই এর পিছনে রয়েছেন। বিশ্বজিৎবাবুর বাড়িতে বোমাবাজিও হয়। তার জন্য তৃণমূল প্রকাশ্যে সিপিএমকে দায়ী করলেও দলের অন্দরে দেবপ্রসাদ-অনুগামীদের দিকেই আঙুল তুলছিলেন বিশ্বজিৎ-ঘনিষ্ঠেরা। দু’টি ক্ষেত্রেই অবশ্য দেবপ্রসাদবাবু অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।
পদচ্যুত হওয়ার যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার জেরে কি কংগ্রেসে ফিরবেন?
দেবপ্রসাদবাবুর বক্তব্য, “দলে থেকেই আমি এর বিরুদ্ধে লড়াব।” স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের একাংশ মনে করছেন, এই ধরনের কাজিয়া আখেরে দলকে দুর্বল করবে। কালনা শহরের তৃণমূল নেতা মলয় পোদ্দারের কথায়, “আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে এই ঘটনা দলের অস্বস্তিই বাড়াবে।” |