জেলার বিভিন্ন ব্লকে সুসংহত শিশুবিকাশ কেন্দ্রগুলি (আইসিডিএস) পরিদর্শনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যায় সুপারভাইজার নেই দীর্ঘদিন ধরে। ফলে কেন্দ্রগুলির কাজকর্ম সময়মতো পরিদর্শন হচ্ছে না। এই অবস্থায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার অধিকাংশ আইসিডিএস কেন্দ্রগুলির পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সমস্যাটি জেলা প্রশাসনের নজরে আনা হলেও এখনও তার কোনও সুরাহা হয়নি। |
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগে ওই আইসিডিএস কেন্দ্রগুলি চলে। সেখানে মূলত ৬ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের পঠনপাঠন, উপযুক্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে দেওয়া এবং প্রসূতিদের পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের স্বাস্থ্য সচেতনার বিষয়ে নজর রাখা হয়। ওই সব কাজের দায়িত্বে থাকেন কেন্দ্রের একজন কর্মী এবং একজন সহায়িকা। আর এই সব কর্মী, সহায়িকাদের কাজকর্ম দেখভালের দায়িত্বে থাকেন একজন সুপার ভাইজার। সরকারি নিদের্শ অনুযায়ী প্রতি ২০টি কেন্দ্রের জন্য একজন করে সুপারভাইজার থাকবেন। তিনি প্রতিনিয়ত কেন্দ্রগুলিতে গিয়ে খোঁজ নেবেন শিশু ও প্রসূতিরা ঠিকঠাক পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছেন কি না, স্বাস্থ্য নিয়ে তাঁদে সচেতন করা হচ্ছে কি না। পাশাপাশি অন্যান্য সমস্যাও খতিয়ে দেখবেন ওই সুপারভাইজাররা।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, এক হাজার জন বাসিন্দা পিছু একটি করে আইসিডিএস কেন্দ্র থাকবে। এমনকী কোথাও যদি পৃথক ভাবে ৩০০ জন বাসিন্দাকে নিয়ে বসতি গড়ে ওঠে সেই এলাকাতেও আইসিডিএস কেন্দ্র চালু করতে হবে। এর ফলে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে আইসিডিএস কেন্দ্রের সংখ্যাও। কিন্তু কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়লে গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে নিয়োগ করা হয়নি সুপারভাইজার। এমনিতেই বছরের পর বছর ধরে বেহাল পরিকাঠামোর মধ্যেই চলছে অধিকাংশ আইসিডিএস কেন্দ্র। নিজস্ব বা স্থায়ী ঘরের অভাবে বেশিরভাগ কেন্দ্রের পরিষেবা চলছে বিভিন্ন ক্লাবের ধরে, কোথাও গোয়ালঘরে। কোথাও বা খোলা আকাশের নীচেই চলে এই সব কেন্দ্র। আবার এমনও দেখা গিয়েছে, চাকরির পাওয়ার প্রতিশ্রুতিতে নিজের জমিতে কেন্দ্রের ঘর তৈরি করে দেওয়ার পর চাকরি না পাওয়ায় সেই ভবন ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে না। ঘরের সমস্যা ছাড়াও রয়েছে শৌচাগার, রান্নার জন্য পানীয় জলের সমস্যা। বহু কেন্দ্রেই পানীয় জলের ব্যবস্থা না থাকায় রান্নার জলের জন্য অন্যত্র যেতে হয়। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, জেলায় বর্তমানে আইসিডিএস কেন্দ্রের সংখ্যা ১০ হাজার ৫৮০। আরও ১১ হাজার ১৬টি কেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নিজস্ব ঘর রয়েছে মাত্র দেড় হাজারের মতো। আইসিডিএস-এর জেলার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক তুষার চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আইসিডিএস-এর এই সমস্যা গোটা রাজ্য জুড়েই রয়েছে। এই জেলায় কর্মী নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা চলছে। কর্মী নিয়োগ-সহ অন্যান্য সমস্যাও যাতে মেটানো যায় তার চেষ্টা হচ্ছে।”
পরিকাঠামোর সমস্যা রয়েছে এমন বেশ কিছু কেন্দ্র রয়েছে মন্দিরবাজার ব্লকে। এই ব্লকের কেচারকুড় পঞ্চায়েতের পূর্ব কৃষ্ণদেবপুরের আইসিডিএস কেন্দ্রটি ২০০৭ সালে সরকারি অনুমোদন পায়। চলছে এক গ্রামবাসীর ঘরের বারান্দায়। কেন্দ্রে রয়েছে ৪৬ জন শিশু ও প্রসূতি ১৫ জন। কেন্দ্রের কর্মী ভগবতী হালদার ও সহায়িকা অনিতা রায় বলেন, “নির্দিষ্ট ঘর না থাকায় খাতা-পত্তর, ওজন মাপার যন্ত্র রাখার অসুবিধা হচ্ছে। অথচ এর মধ্যেই শিশু, প্রসূতিদের সময়মত টিকার ব্যবস্থা করা, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া সবই করতে হচ্ছে। জমি না পাওয়ায় ঘর তৈরি করা যায়নি।”
মন্দিরবাজার ব্লকে আইসিডিএস কেন্দ্র ২৯০টি। ২০টি কেন্দ্র প্রতি একজন করে সুপারভাইজার হিসাবে প্রয়োজন ১৪ জনের। আছেন মাত্র ৫ জন। একই অবস্থা মগরাহাট-২ ব্লকেও। এই ব্লকে কেন্দ্রের সংখ্যা ৩৯৯টি। সুপারভাইজার আছেন মাত্র ৭ জন। যেখানে দরকার ১৭ জন। জেলার অন্যান্য ব্লকেও কমবেশি একই ছবি। |