কথার লড়াইয়ে প্রার্থী-পদ যাচাই প্রেসিডেন্সিতে
গোলাগুলি, লাঠালাঠি নয়। কথা। শুধু কথা দিয়েই প্রার্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে নিজের দক্ষতা। ক্যাম্পাস-রাজনীতির নামে রাজ্যের নানা প্রান্তের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যখন হিংসা ও প্রতিহিংসার দাপট চলছে, সেই সময়েই নিজেদের প্রথম নির্বাচনে এ ভাবে বাক্শক্তির চ্যালেঞ্জ ছুড়ে ভোট-যুদ্ধের নজির গড়ল প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়।
পোশাকি নাম ‘ক্যান্ডিডেচার এস্টাব্লিশমেন্ট ডিসকাশন’ বা প্রার্থী-পদ যাচাই বিতর্ক। আসলে এটা মূল যুদ্ধের ভূমিকা। রণক্ষেত্রে নামার উপযুক্ত কি না, তার প্রমাণ দেওয়ার পালা। ভোটে জিততে কথার লড়াইকেই হাতিয়ার করে তুলে ধরা হল ছাত্রছাত্রীদের কাছে। বুধবার প্রেসিডেন্সির উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, ডিন অব স্টুডেন্টস, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং হল-ভর্তি সহপাঠীদের উপস্থিতিতে প্রত্যেক প্রার্থীকে স্রেফ বাগ্যুদ্ধের মাধ্যমেই বিভিন্ন পদের জন্য নিজেদের যোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করতে হল। অনেকটা বিতর্কসভার ধাঁচেই। রাজ্যে এমন প্রচেষ্টা এই প্রথম।
ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচনে লড়াই হবে মোট পাঁচটি পদের জন্য। সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহকারী সাধারণ সম্পাদক এবং মেয়েদের কমন রুমের সম্পাদক। প্রার্থী-সংখ্যা সব মিলিয়ে ১১। তাঁদের মধ্যে এসএফআই, ইন্ডিপেন্ডেন্ট কনসলিডেশন (আইসি)-এর সমর্থকদের পাশাপাশি রয়েছেন তিন নির্দল প্রার্থীও।
প্রথমে প্রত্যেক প্রার্থী পাঁচ মিনিটের বক্তব্যে জানান তাঁর কাজের পরিকল্পনা। ক্যাম্পাসের পরিচ্ছন্নতা, গ্রন্থাগারের উন্নয়ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠনের উন্নতি ও পরীক্ষা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনার দাবির সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতির নামে ক্যাম্পাসের ভিতরে হিংসা রোধের ব্যবস্থা, উন্নত ক্যাম্পাসিং এ দিন নির্বাচনের প্রার্থীদের আলোচনায় উঠে এসেছে সবই। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডিতে বক্তব্য সীমাবদ্ধ থাকেনি। সচেতন নাগরিক হিসেবে নানান সামাজিক সমস্যার সমাধানে কী কাজ করবেন তাঁরা, তোলা হয়েছে সেই প্রসঙ্গও।
নিজের বক্তব্যের পরে প্রত্যেক প্রার্থীকে শ্রোতার আসনে বসে থাকা ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে। সহপাঠীদের প্রশ্নবাণে কার্যত জর্জরিত হন সব প্রার্থীই। ‘কেন তোমাকে ভোট দেব?’ ‘ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্নতার কথা বলছ। তা হলে নিজের প্রচারের পোস্টারে চার দিক ছয়লাপ করে দিয়েছ কেন?’ ‘সামাজিক সচেতনতার কথা বলছ। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন লিঙ্গসচেতনতা সপ্তাহ পালন করা হল, তখন তোমাকে দেখা যায়নি কেন?’ ‘রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তোমার যোগ নেই, শুধু এই কারণে তোমাকে ভোট দেব! কেন?’ শানানো ভাষায় সহপাঠীদের এমন সব প্রশ্নের মুখে পড়েন প্রার্থীরা। জবাবও মিলেছে সমান সাবলীলতায়। প্রত্যেক প্রার্থীকে চারটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে।
অভিনবত্ব ছিল যুদ্ধের নিয়মেও। এ দিনের সভায় কোনও রাজনৈতিক দলের নাম উল্লেখ করা যাবে না বলে প্রথমেই জানিয়ে দিয়েছিলেন সঞ্চালকেরা। প্রেসিডেন্সির দুই প্রবীণ অধ্যাপক প্রশান্ত রায় ও নন্দলাল চক্রবর্তী ছিলেন এই ভূমিকায়। তাঁরা বলে দেন, কারও বয়স, সংস্কৃতি, লিঙ্গ, ধর্ম, পারিবারিক পরিচয় ইত্যাদির ভিত্তিতে কোনও প্রার্থী তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীকে আক্রমণ করতে পারবেন না। নিয়মের নিগড়ে থেকেই কিন্তু পরস্পরকে আক্রমণ করেন প্রার্থীরা।
কে বেশি যোগ্য? এসএফআই না আইসি? রাজনৈতিক দলের ছাতার তলায় থাকলে কাজের কাজ বেশি হয়, নাকি স্বাধীন সংগঠনের নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিই বেশি দরকার? কোনও দলের নাম না-করেই এই নিয়ে তর্ক চলে। কার যুক্তি-তক্কো-গপ্পো সহপাঠীদের মনে কতটা দাগ কাটল, তার উত্তর মিলবে কাল, শুক্রবার প্রেসিডেন্সির নির্বাচনে।
তবে বাগ্যুদ্ধের মাধ্যমে প্রার্থী হিসেবে নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠা করার পদ্ধতিটিকে স্বাগত জানাচ্ছেন নবীন প্রজন্মের প্রায় সব পড়ুয়াই।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রভোটের ফলাফল
—নিজস্ব চিত্র।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের ছাত্র সংসদ দখল করল এসএফআই। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছিল। বুধবার ফল বেরোয়। কলা বিভাগের চেয়ারপার্সন, সাধারণ সম্পাদক এবং দিবা ও সান্ধ্য বিভাগের সহকারী সম্পাদক পদে জিতেছে এসএফআই। চলছে এসএফআই ছাত্রছাত্রীদের আবির খেলা। এর আগে এই সংসদ ফোরাম ফর আর্টস স্টুডেন্টস-এর দখলে ছিল। ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে জিতেছে ডেমোক্র্যাটিক স্টুডেন্টস ফ্রন্ট এবং বিজ্ঞান বিভাগে জিতেছে উই দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট নামে একটি ছাত্র সংগঠন।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.