কুবের উবাচ |
সুরেশ (৩৩) • স্ত্রী (২৭) • মেয়ে (১)
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক • থাকেন পরিবারের সঙ্গে জেলা শহরে • আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত
• মেয়ের পড়াশোনা ও বিয়ের জন্য এখন থেকেই সঞ্চয়ে আগ্রহী • বছরে এক বার বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছে
• কলকাতায় ১০ বছরের মধ্যে বাড়ি কিনতে চান • স্বপ্ন, সচ্ছল ভবিষ্যৎ |
|
মাসে নিট আয় |
• সুরেশ ৩৯,৭৮৮ |
সম্পদ |
|
খরচ (মাসে) |
• সংসার চালাতে
২১,০০০ |
• উৎসব অনুষ্ঠানে ২,০৮৩ |
• ব্যক্তিগত ঋণের কিস্তি
৩,০০০
(তিন মাস বাকি) |
• স্বাস্থ্যবিমা
২৭৫
(তিন জনের, বিমা মূল্য ১.৫০ লক্ষ) |
• ব্যক্তিগত ঋণের কিস্তি
৫,০০০
(এক বছর বাকি) |
|
সঞ্চয় (মাসে) |
• পিএফ ২,২১২ |
• পিপিএফ ৮৩৩ |
• জীবনবিমা
৩,৪৬২ (৭টি বিমা, মোট বিমা মূল্য ১১.১৫ লক্ষ)
• রেকারিং ডিপোজিট ৮,০৫০
|
সঞ্চয় |
• স্থায়ী আমানত (মেয়ের নামে)
৬০,০০০
(৭ বছর ৭ মাসের) |
|
|
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
শৈবাল বিশ্বাস |
|
আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। সুরেশের প্রোফাইল দেখতে বসে ঠিক এই জিনিসটাই সবচেয়ে আগে চোখে পড়ল। অর্থাৎ মাসে তাঁর রোজগারের তুলনায় সংসার খরচ ও বর্তমান লগ্নি মিলিয়ে বেশি টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে। ফলে মাসের শেষে তাঁর হাতে যে শুধু টাকা থাকছে না তা-ই নয়, দৈনন্দিন খরচ জোগাতে ভাঙতে হচ্ছে পুরনো সঞ্চয়। সব হিসাবের পর তাঁর ঘাটতি হচ্ছে ৩,৯১৬ টাকা।
সংসার খরচ হঠাৎ করে মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে অথবা কেউ নিজের সঞ্চয়ের ক্ষমতা বুঝতে না-পেরে দীর্ঘ সময়ের জন্য লগ্নি করে বসলে এই অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। সুরেশের ক্ষেত্রে এই দু’টিই এক সঙ্গে ঘটেছে। আর এর ফলেই তৈরি হয়েছে সমস্যা। |
লক্ষ্য পূরণের পথে |
• প্রতি মাসে সংসার, উৎসব-অনুষ্ঠানের খরচ ও ঋণের কিস্তি মিলিয়ে সুরেশের আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশই ব্যয় হচ্ছে। বাবা-মার দায়িত্ব দাদার সঙ্গে ভাগ করে নিতে হলেও বলতে পারি, এই অঙ্ক যথেষ্ট বেশি। ফলে যে- সিদ্ধান্তই নিন না কেন, প্রথমে সংসার খরচ কমাতে হবে। এ জন্য খাতায় প্রতিদিনের জমা-খরচের হিসাব লিখুন। দেখে নিন কোথায় বেশি টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে। সেখানে রাশ টানুন। এ ভাবে ব্যয় অনেকটাই আয়ত্তে আসবে।
• বর্তমানে তাঁকে মোট ৮ হাজার টাকা দিয়ে ঋণের কিস্তি মেটাতে হয়। আমার মতে তিন মাস যে-ঋণটি বাকি, সেটি চালান। কিন্তু রেকারিং ভেঙে এক বছরের ঋণটি দ্রুত শেষ করুন। ঋণের পুরো টাকা মেটানোর পর প্রতি মাসে সুরেশের হাতে প্রায় ৪,০০০ টাকা থাকবে। তখন নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে অন্যান্য লগ্নির পথে হাঁটুন। |
বসুন নোটবই নিয়ে |
এর পর আমি বলব সুরেশকে প্রতিটি প্রকল্পের বিভিন্ন দিক বিচার করে সিদ্ধান্ত নিতে। খাতায় লিখে নিন, কোন প্রকল্পে লগ্নি আছে ও কোথায় নতুন করে টাকা ঢালবেন। পুরো তালিকায় যেন নিম্নোক্ত বিষয়গুলি থাকে • কোন প্রকল্পে লগ্নি করবেন।
• কত টাকা রাখবেন।
• কত দিন ধরে সঞ্চয় করবেন।
• রিটার্ন কত হতে পারে।
• আয়কর ও মূলধনী লাভকর এবং মূল্যবৃদ্ধি বাদ দিয়ে সম্ভাব্য মোট ফেরতযোগ্য টাকা। |
জীবনবিমার সমস্যা |
সুরেশ ক্ষমতা না-বুঝে ও পরিকল্পনা না-করে এমনিতেই দীর্ঘ মেয়াদে বেশ কিছু জীবনবিমা করেছেন। দেখে অবাক লাগল, টাকা পয়সার টানাটানির মধ্যেও তিনি ফের একটি বিমা করেছেন। হতে পারে এই বিমা মেয়ের জন্য। কিন্তু তাঁর চাহিদা প্রকল্পটি আদৌ পূরণ করবে কি না, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
তাঁর মোট সাতটি জীবনবিমা প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে একটি তিনি বন্ধ করে দিয়েছেন। সব মিলিয়ে বিমা মূল্য ১১.১৫ লক্ষ টাকা। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটাই কম ও এর রিটার্নও মূল্যবৃদ্ধিকে ছাপিয়ে যেতে পারবে না। ফলে আদতে এই বিমা তাঁর কাজে আসবে না। সে ক্ষেত্রে আমার মত, আপনি কোন পলিসি রাখবেন, কোনটা ছাড়বেন— তা নিয়ে প্রথমে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করুন।
ঋণ শেষ হলে টার্ম পলিসি করুন। সে ক্ষেত্রে নিজের জন্য ন্যূনতম ২৫ লক্ষ টাকার বিমা করতে হবে। এখনকার সবক’টি বিমা চালিয়ে গেলে ১১.১৫ লক্ষের বিমা থাকবে। সে ক্ষেত্রে বাকি ১৩.৮৫ লক্ষ টাকার টার্ম পলিসি করতে হবে। না হলে বিমা বন্ধের পর যে-ঘাটতি হবে, সেই অঙ্কের টার্ম পলিসি করান। যার অঙ্ক ভবিষ্যতে বাড়াতে হবে। |
পিপিএফ |
সুরেশের ইচ্ছা অনুযায়ী, প্রতি বছর পিপিএফে ১ লক্ষ টাকা জমা দিতে হলে মাসে ৮ হাজার টাকার একটি রেকারিং করতে হবে। ৮.৭৫% সুদ ধরে এই খাতে প্রায় ১,০০,৬৪০ টাকা জমবে। সেই টাকা পিপিএফে রাখুন। তবে এ জন্য ঋণ শেষের পর পুরো রেকারিং ঢেলে সাজতে হবে। |
সেভিংস অ্যাকাউন্ট |
এই খাতে ন্যূনতম ৫০ হাজার টাকা রাখতে চান সুরেশ। কিন্তু আপাতত সেই টাকা তাঁর হাতে নেই। সে ক্ষেত্রে একমাত্র উপায় খরচ কমানো। |
মেয়ের জন্য সঞ্চয় |
সুরেশের মেয়ের বয়স ১ বছর। অর্থাৎ তাঁর হাতে মেয়ের উচ্চশিক্ষার জন্য ১৭ বছর রয়েছে। এ জন্য ব্যালান্সড ফান্ডে সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (এস আই পি) পদ্ধতিতে ১,০০০ টাকা করে রাখুন। ১৭ বছর পর প্রায় ৫.৩৬ লক্ষ টাকা জমবে (১০% রিটার্ন ধরে)।
এ ছাড়া ধরা যাক মেয়ের বিয়ের জন্য ২৪ বছর সময় রয়েছে হাতে। সেই লক্ষ্যে সমপরিমাণ অর্থের অন্য একটি এসআইপি করুন। ১০% রিটার্ন ধরে এই খাতে জমবে প্রায় ১২ লক্ষ টাকা। |
স্বাস্থ্যবিমা |
এই সব লগ্নির পরেও যে-টাকা থাকবে, তা দিয়ে স্বাস্থ্যবিমার অঙ্ক বাড়ান। |
অবসর পরিকল্পনা |
পিএফ, পিপএফ ও বিমার টাকা ছাড়া এই মুহূর্তে অবসরের জন্য সুরেশের কোনও সঞ্চয় নেই। আগামী দিনে কিন্তু তাঁকে অন্যান্য লগ্নি করতে হবে এবং বর্তমান লগ্নির অঙ্ক বাড়াতে হবে। বেতন বাড়লে প্রথমেই রেকারিং ও এসআইপি-তে আরও টাকা রাখার কথা ভাবুন।
ফ্ল্যাট কেনা বা প্রতি বছর বেড়াতে যাওয়ার টাকা এখন তাঁর হাতে নেই। কিন্তু তা বলে হতাশ হওয়ারও কারণ নেই। বেতন বাড়লে পরিকল্পনা বদলাতে পারবেন। মনে রাখবেন, সঞ্চয় করুন, কিন্তু আগে তার ভাল-মন্দ বিচার করে। |
(অনুরোধ মেনে নাম পরিবর্তিত) |
|