শেয়ার কেনার অ-আ-ক-খ
বাড়ি বা গাড়ি কী ভাবে কেনেন? ষোলো আনা খোঁজখবর নিয়ে, ভাল-খারাপ বুঝে নিয়ে, তার পর। তাই তো? ভেবে দেখুন, যে-কোনও মোটা লগ্নির আগেই এই একই পথে হাঁটেন আপনি। তা হলে শেয়ারই বা ব্যতিক্রম হবে কেন? ধরুন শেয়ার কিনতে গেলেন। শেয়ার মানে অংশীদারি। আর অংশীদারি কেনা মানে, আস্ত একটা সংস্থার কিছুটা অংশের মালিক হওয়া। সেই অংশ যতই ছোট হোক না কেন। তাই যে-কোনও শেয়ারে বিনিয়োগই সম্পত্তি কেনার মতো। সুতরাং না জেনে-বুঝে বা অন্যের কথার ঝাল খেয়ে সেটা কিনে ফেলা কি উচিত হবে? নিশ্চয়ই নয়। অথচ কোনও উড়ো খবরে, স্রেফ কারও এসএমএসে ভরসা করে, টিভির পর্দায় হঠাৎ একদিন নাম শুনে বা মোটা মুনাফার সম্ভাবনার গুজবে কান দিয়ে শেয়ারে টাকা খোয়ানো লোকের সংখ্যা বড় কম নয়।
সেই ভুল যাতে আপনার না-হয়, তা নিশ্চিত করতেই আজকের মজলিসি আড্ডা। আমার পরামর্শ হল, নাম শুনুন। খবরেও কান দিন। কিন্তু চূড়ান্ত বিচার-বিবেচনার পথটা খোলা রাখুন। শেয়ার, তা সে নগদেই (ক্যাশ মার্কেট) কিনুন বা ধারে (ডেরিভেটিভ্স) আদ্যপান্ত খোঁজ-খবর করা বা খুঁটিনাটি বিচারের রাস্তা কিন্তু এড়িয়ে যাওয়ার নয়।
এক সময়ে এই খোঁজ-খবরের পথটা বেশ সোজা ছিল। আমাদের বাবা-ঠাকুরদারা যখন শেয়ার কেনা-বেচা করতেন, তখন সংস্থা থেকেই ডাক আসত স্বচক্ষে দেখে যাওয়ার জন্য যে, তারা আসলে করেটা কী। এ যুগে অত দূর যাওয়ার ভাবনাটা একটু বাড়াবাড়ি হবে। কারণ আমাদের নাকের ডগায় কম্পিউটার আর তাতে জগৎ-বিস্তৃত তথ্যের জাল। হাতের মাউসটায় ক্লিক করুন, কোনও না-কোনও ভাবে সব তথ্য চোখের সামনে খুলে যাবেই। তবে প্রশ্ন হল, খোঁজ নেবেন কোন বিষয়টার? কোনটার চুলচেরা বিশ্লেষণ জরুরি? আসুন এ বার সেগুলোই দেখে নিই।

আগে চোখে দেখা
বিয়ের সম্বন্ধ এলে ‘দেখতে যাওয়া’-র মতো (যদিও এই পদ্ধতি আমার পছন্দ নয়), কোনও সংস্থার শেয়ারের খবর কানে এলেই প্রথমে দেখতে হবে সংস্থাটি কোথাকার, কী ব্যবসা করে ইত্যাদি। খুলে ফেলুন তার ওয়েবসাইট।
একটা উদাহরণ দিই। বেশ কিছু দিন আগে পর্যন্ত আমার বেশ পছন্দের একটা ওষুধ সংস্থা ছিল, মাঝারি মাপের। কিন্তু তার ওয়েবসাইট খুলে দেখি, আগের দেড় বছরের হিসেব-নিকেশ (ব্যালান্স শিট) আপডেটই করা হয়নি সেখানে। সুতরাং পত্রপাঠ পছন্দের তালিকা থেকে বিদায়। বিনিয়োগকারীদের এই তথ্য জানালাম। আর এর অব্যবহিত পরেই হঠাৎ দাম পড়ে যাওয়ার দরুন শেয়ারটির লেনদেন বন্ধ হয়ে গেল। যাকে বলে ‘সেলিং ফ্রিজ’। এ ক্ষেত্রে আমার আশঙ্কা মিলে যাওয়াটা কাকতালীয় হতে পারে। কিন্তু এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখায় যে, সংস্থা সম্পর্কে সর্বশেষ তথ্য হাতে থাকা কতখানি জরুরি।

সর্ষের মধ্যে ভূত নেই তো?
• যে সংস্থার শেয়ার কিনতে চলেছেন, তার পরিচালকমণ্ডলী (ম্যানেজমেন্ট) কী ধরনের, সেটাই আপনার অন্যতম প্রথম বিচার্য।
• আপনি কি পরিবারতন্ত্রে বিশ্বাস করেন? যদি তা না-করেন, তবে পরিচালকমণ্ডলীর মধ্যে যদি দেখেন শুধুই পরিবার-পরিজন, অবিলম্বে সে পথ পরিহার করুন।
• পরিচালন পর্ষদে থাকা ডিরেক্টরদের নাম দেখুন। দুর্নীতির সঙ্গে যোগ ছিল বা আছে, তেমন একটি নামও পেলে সে সংস্থার থেকে শত হাত দূরে থাকা ভাল।

ভরসা থাকুক
চিকিৎসক জানেন, কোন সংস্থার কোন ওষুধ ভাল। একজন গৃহবধূ জানেন জামা-কাপড় কাচতে কোন ডিটারজেন্টই তাঁর বেশি পছন্দের। এঁরা প্রত্যেকেই ওই সব পণ্য, তার গুণগত মান ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার ব্র্যান্ডের জোর সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। এই একই শিক্ষা শেয়ার কেনার ক্ষেত্রেও কাজে লাগান। মোদ্দা কথা হল, সংস্থার পণ্য ও ব্র্যান্ড-মূল্য ভাল না খারাপ, তা বুঝতে সাধারণ বুদ্ধি প্রয়োগ করতে ভুলবেন না। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তা বলে নিজের বোঝার ক্ষমতাকে ছোট করে দেখবেন না।

আপনার গুরুত্ব কতটা?
প্রথমেই আপনি সংস্থার ওয়েবসাইট খুলে ফেলেছেন। যার শেয়ার কিনবেন, তা কতটা ভরসাযোগ্য, বুঝতে চেষ্টা করছেন। এ বার চেষ্টাটা আরও একটু জোরদার করতে খুলুন ওয়েবসাইটের ‘ইনভেস্টর’ অংশটি। এটা দেখলেই বুঝে যাবেন বিনিয়োগকারীদের কতটা গুরুত্ব দেয় ওই সংস্থা। তার কাজকর্মের খতিয়ান যা লেখা আছে, সেটা কি নেহাতই দায়সারা? না কি আপনার মতো অসংখ্য লগ্নিকারীর সামনে নিজেদের সমস্তটা স্বচ্ছ ও সুন্দর ভাবে, সততার সঙ্গে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে? এতে আপনার সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয় এবং সংস্থাও বিনিয়োগকারীদের প্রতি যথাযথ দায়বদ্ধ থাকে। দায়সারা তথ্য দেওয়া সংস্থাকে এড়িয়ে চলুন।

জবর জবর তিন বর
জানেন তো, ঠিকঠাক শেয়ার বাছাইয়ের জন্য আপনাকেও তিন তিনটে বর দিয়েছে ‘গুপী-বাঘা’র ভূতের রাজা! যদি এই তিন বরের মোক্ষম প্রয়োগ করতে পারেন, তা হলে লাভের সম্ভাবনা বাড়বে।
ভূতের রাজা বলেছেন, কোনও সংস্থার আর্থিক ফলাফল থেকে প্রাথমিক ভাবে তিনটে অঙ্ক কষলে জানা-বোঝার দায়িত্ব অনেকটাই সারা হয়ে যায়—

এক নম্বর: আর্নিংস পার শেয়ার (ইপিএস)। অর্থাৎ শেয়ার প্রতি আয়। যে সংস্থার শেয়ার কিনতে চলেছেন, তার লাভের কতটা আপনার, তারই পরিমাপকে বলে ইপিএস। সংস্থার মোট আয় থেকে মোট ব্যয় এবং ডিভিডেন্ড (যে লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের দেওয়া হয়) বাদ দিলে যা পড়ে থাকে, তাকে মোট শেয়ারের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে পাওয়া যায় এই শেয়ার প্রতি আয়। এই আয় সংস্থার অংশীদার (শেয়ারহোল্ডার) হিসেবে আপনার আয়।

কী লাভ? কোম্পানির আয় জানতে পারলেন, অতএব নজর রাখতে পারবেন আপনার বেশি আয়, মানে উঁচু ইপিএস-এর দিকে। সাবধান কম দামি শেয়ার কিনতে গিয়ে, কম ইপিএসের শেয়ারে টাকা ঢেলে ফেললে কিন্তু সস্তার তিন অবস্থা হওয়ার সম্ভাবনা।

দুই নম্বর: প্রাইস টু আর্নিং রেশিও (পি ই)। অর্থাৎ দাম অনুপাতে শেয়ার প্রতি আয়। আপনার প্রতি শেয়ারের আয় কত, তা জেনেছেন ইপিএস থেকে। এ বার ওই আয় অনুযায়ী বাজারে শেয়ারের বর্তমান দরটি ন্যায্য না অন্যায্য, সেটা কী ভাবে বুঝবেন? মানে সোজা কথায়, যে-দামে শেয়ারটি পাওয়া যাচ্ছে, তা ৯০ টাকায় এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারার মতো হয়ে দাঁড়াচ্ছে না তো? এটাই বলে দেবে এই পি ই রেশিও। বাজারে শেয়ারের দামকে তার ইপিএস বা শেয়ার প্রতি আয় দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যায় যে- অনুপাত, তা-ই হচ্ছে পি ই।

কী লাভ? পি ই রেশিও যত কম হবে, সংস্থার বাজার দর তত ন্যায্য। তবে পি ই রেশিও বিভিন্ন শিল্প ক্ষেত্র অনুযায়ী কম-বেশি হতে পারে। মনে রাখবেন যে-সংস্থার বুক ভ্যালু (সংস্থার সম্পদের মোট মূল্যায়ন) বেশি, সেটির জন্যই শুধু একটু উঁচু পি ই-তে শেয়ার কেনা চলে, অন্যথায় নয়।

তিন নম্বর: প্রাইস টু বুক ভ্যালু রেশিও (পি বি)। অর্থাৎ দাম অনুপাতে সংস্থার সম্পদের মূল্যায়ন। এটি লগ্নিকারী হিসেবে আপনার সুরক্ষাকবচ। কারণ পি বি রেশিও আগেভাগেই জানিয়ে দেয় সোনার দরে নকল গয়না কিনছেন না তো! সংস্থার মোট সম্পত্তির কতটা অংশ একজন শেয়ারহোল্ডার হিসেবে আপনার অধিকারে, তাকেই বলে বুক ভ্যালু পার শেয়ার (বি ভি)। এ বার বাজার দরের সঙ্গে একে তুলনা করুন। যা দাঁড়াল, সেটাই হল পি বি।

কী লাভ? কোনও সংস্থা যদি পাততাড়ি গোটায়, তবে আইন অনুযায়ী বুক ভ্যালুর সমানুপাতে বিনিয়োগকারীর টাকা ফেরত পাওয়ার কথা। কোনও সংস্থার পি বি রেশিও ১ হলে নিশ্চিন্ত থাকুন। যদি কোম্পানি উঠেও যায়, শেয়ারের যা বাজার দর, ঠিক তত টাকা আপনি শেয়ারহোল্ডার হিসেবে ফেরত পাবেন। পি বি ২ হলে, ফেরত পাবেন ৫০%, অর্থাৎ অর্ধেক। আর ৪ হলে ২৫%, মানে সিকি ভাগ।

কোথায় পাব তারে?
এ বার প্রশ্ন হল ভূতের রাজার এই তিন বর আপনি পাবেন কোথায়? সংস্থার আয়-ব্যয়ের হিসাব বা ব্যালান্স শিট থেকে ওই তথ্যগুলি বার করা একটু কঠিন, যদি না নিয়মিত তা করার অভ্যাস থাকে। এটারও সোজা পথ, ইন্টারনেট। যা চাইছেন, তা খুঁজতে চেয়ে একটি মাত্র ‘এন্টার’, ব্যাস্। এই পথে গোটা দুনিয়া আপনার মুঠোয় আসে, আর এ তো সামান্য অনুপাত বিশ্লেষণ (রেশিও অ্যানালিসিস)। শুধু দেখে নেবেন, তথ্যগুলো যেন পুরনো নয়, একেবারে সাম্প্রতিক হয়।

ঝুঁকিকে যায় চেনা
এতক্ষণ লাভের হিসাব কষার চেষ্টা হল। এ বার একটু তার উল্টোপিঠে কী আছে দেখা যাক। কারণ শেয়ার বাজারে এক দিকে যেমন লাভ থাকে, তেমনই অন্য দিকে থাকে ঝুঁকি। এই ঝুঁকি মাপাই আসলে লগ্নিকারীর ব্রহ্মাস্ত্র। আপাতত নগদ বাজারের ঝুঁকির কথাই বলব।
• ঝুঁকি আর লাভের সম্পর্ক অতি নিবিড়। একে অন্যকে এড়িয়ে চলতে পারে না। এক কথায় ঝুঁকি না-নিলে লাভ হবে না। কিন্তু কতটা লাভের জন্য, কতটা ঝুঁকি নেওয়া যাবে, সেটা অবশ্যই হিসেব করে চলা যেতে পারে।
• যে সংস্থার শেয়ার কিনছেন, তা কতটা ধারে চলে, তার ডেট-ইক্যুইটি রেশিও খেয়াল রাখুন। তবে আরও গুরুত্বপূর্ণ, সংস্থা তার ধারের জন্য যে -পরিমাণ সুদ গোনে, তা তার ঘরে যত নগদ আছে, তার কতটা। এর জন্য দেখতে হবে ইন্টারেস্ট কভারেজ রেশিও। ব্লু চিপ নামে যাদের ডাকা হয়, সেই পুরনো, বড় ও ভরসাযোগ্য সংস্থাগুলির ক্ষেত্রে ইপিএস, বুক ভ্যালু এবং ইন্টারেস্ট কভারেজ রেশিও বেশি থাকতে দেখা যায়। এ রকম সংস্থায় বিনিয়োগ বহুলাংশে নিরাপদ ঝুঁকি কম, লাভ বেশি।
• ২০০ টাকার উপর ইপিএস-এর শেয়ারে যে-বিনিয়োগকারী লগ্নি করছেন, তিনি ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে ফেলছেন। তবে সঙ্গে সঙ্গে অন্য সব দিক খতিয়ে দেখার পরই শেয়ারটি বাছতে হবে। কোন অঙ্কে কতটা নীচে নামবেন, অর্থাৎ ঝুঁকি বাড়াবেন, তা সম্পূর্ণ ভাবে লগ্নিকারীর অভিরুচি।
• বিশেষজ্ঞরা বিটা বলে একটি অনুপাত ব্যবহার করেন ঝুঁকি মাপার জন্য। বিটা ‘শূন্য’ মানে ঝুঁকি শূন্য। এই ক্ষেত্রে রিটার্ন পূর্বনির্ধারিত এবং অল্প। একটু একটু করে বাড়াতে বাড়াতে যদি আপনি বিটা ‘১’ পরিমাণ ঝুঁকি নিতে পারেন, তা হলে পৌঁছে যাচ্ছেন শেয়ার বাজারে। এখানে গড় বিটা ‘১’ ধরা হয়। বিভিন্ন সংস্থার বিটা, ‘১’-এর কম, ‘১’ বা তার বেশি হতে পারে। যদি আলাদা আলাদা সংস্থার শেয়ার কেনেন, তা হলে সব মিলিয়ে গড় বিটা হিসাব করতে হবে। আপনি মোট যতগুলি শেয়ার কিনলেন, তাদের একসঙ্গে বলা হয় আপনার পোর্টফোলিও। যদি আপনার শেয়ারের পোর্টফোলিও-র গড় বিটা হয় ‘১’, তবে সেটিকে বলা যাবে আদর্শ ব্যালান্সড পোর্টফোলিও। অর্থাৎ যেখানে ঝুঁকি এবং লাভের মধ্যে যথাযথ ভারসাম্য বজায় রাখা হয়েছে।
ব্যালান্সড পোর্টফোলিও-র উদাহরণ আছে হাতের কাছেই শেয়ার বাজারের যে-কোনও সূচক বা ইনডেক্স (যেমন, সেনসেক্স বা নিফ্টি)। এই সব সূচকের আওতায় বিভিন্ন শেয়ার নির্দিষ্ট অনুপাতে রয়েছে। শেয়ার বাজারে ‘বাস্কেট ট্রেডিং’ নামে একটি ব্যবস্থা আছে সূচকের সমানুপাতে শেয়ার কেনার, খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন।

ছাতা বনাম সানগ্লাস
শেয়ার কিনে লাভ করতে অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা নিজেদের লগ্নি বিভিন্ন ধরনের শেয়ারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়ে ঝুঁকি ও লাভের মধ্যে একটা ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেন। কেউ যদি চড়া রিটার্নের লোভে একটা বা একই ধরনের শেয়ারে পুরো টাকা লাগিয়ে রাখেন, তা হলে তো সেটা পুরোপুরি ঝুঁকির। ডুবলে পুরোটাই ডুববে। যতটা সম্ভব কম ঝুঁকিতে বড় রিটার্নের সম্ভাবনা কিন্তু এতে তৈরি হল না। তা হলে? উপায় একমাত্র ব্যালান্সড পোর্টফোলিও। কিন্তু কী ভাবে বানাবেন সেটা?
সহজ একটা উদাহরণ দিচ্ছি।
ধরুন, ছাতার বিক্রি বাড়বে বর্ষা বেশি হলে, গ্রীষ্ম প্রখর হলে বেশি বিকোবে সানগ্লাস। তা হলে দাঁড়াল এই ছাতা সংস্থা বর্ষায় বেশি ব্যবসা করবে। সানগ্লাস সংস্থা অন্য সময়ে। কাজেই ঝুঁকি যতটা সম্ভব কমাতে এবং রিটার্ন যতটা সম্ভব বাড়াতে সমপরিমাণ ছাতা এবং সানগ্লাস সংস্থার শেয়ারে টাকা লাগাতে হবে। সাধারণ বিনিয়োগকারী মোট ১০ থেকে ১২টি শেয়ারে লগ্নি করতে পারেন। আর অভিজ্ঞতায় সুপটু হলে এগিয়ে যান বেশি সংখ্যার দিকে।
এই যুক্তি অনুযায়ীই, এ বার কোন কোন শিল্পে শেয়ারে টাকা খাটাবেন, সেটা বেছে নিতে পারেন। ১০ থেকে ১২টি শেয়ার বেছে নেওয়া উচিত চার থেকে পাঁচটি শিল্পক্ষেত্র থেকে। তার মধ্যে কম ঝুঁকির ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) ক্ষেত্রের থাকার কথা এক নম্বরে। এ ক্ষেত্রে আমার পছন্দ বড় ও দামি সংস্থা। একেবারে শেষে থাকবে সেই ক্ষেত্র, যাতে আপনি সব চেয়ে বেশি ঝুঁকি নিতে চান। মাঝে থাকবে ব্যাঙ্ক, বিদ্যুৎ, ওষুধ, পরিকাঠামো নির্মাণ, টেলিকম ইত্যাদি ক্ষেত্রের মধ্যে যা আপনার পছন্দ। আরও একবার কাজে লাগান সাধারণ বুদ্ধি। শেষে সব শেয়ারের গড় বিটা যদি ‘১’ বা তার কাছাকাছি থাকে, তা হলে আপনার পোর্টফোলিও তৈরি। যাতে ঝুঁকি এবং রিটার্নের মধ্যে ভারসাম্য বা সামঞ্জস্য আনা হয়েছে।

হাতে পেন্সিল চাই না
শেয়ার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কিন্তু ‘ছিল বেড়াল, হয়ে গেল রুমাল’ হওয়ার একটা রাস্তা থেকেই যায় আমার বহু যত্নে বার করা সেই ওষুধ কোম্পানির মতো। হঠাৎ দাম পড়ে যাওয়ায় লেনদেন বন্ধ হওয়ার আগে, ওই সংস্থার শেয়ার কিন্তু অনেক লাভও দেখিয়েছিল। কাজেই আপনাকে দেখতে হবে—
• সংস্থাটি পুরনো কি না।
• পাঁচ (নিদেনপক্ষে তিন) বছরে বিনিয়োগকারীদের তা কী দিয়েছে?
• পুরনো সংস্থা হলে বোনাস শেষ বার কবে দিয়েছিল?
• প্রত্যেক বছরে কত শতাংশ ডিভিডেন্ড দেয়?
লাভ যদি সংস্থার খাতাতেই সীমাবদ্ধ থাকে, আর লগ্নিকারীর হাতে যদি পড়ে থাকে শুধু পেন্সিল, সে লাভ কখন কোন পথে ডানা মেলে উড়ে যাবে, বিনিয়োগকারীরা খুঁজেও পাবেন না।

পরিশেষে
প্রেম করবেন প্রথম দর্শনে, কিন্তু সে প্রেম শেষ জীবন পর্যন্ত টিকিয়ে রাখার প্রয়োজন সব ক্ষেত্রে নেই। প্রথম বছরটা তো টেকাতেই হবে, না হলে ‘ক্যাপিটাল গেন’ করের আওতায় পড়ে যাবেন। মানে, শেয়ার কেনার পর অন্তত একটা বছর হাতে না রেখে বেচে দিলে, রিটার্নের উপর ক্যাপিটাল গেইন বা মূলধনী লাভকর দিতে হয়।
মনে রাখবেন, শেয়ার যেমন স্বল্প মেয়াদে লাভ দেয় না, তেমনই দীর্ঘ মেয়াদে লাভ দেখলে মা লক্ষ্মীকে ঘরে তুলতে হয়। আরও, আরও, আরও লাভের লোভ করলে লাভের গুড় পিঁপড়েতে চেটে খাওয়ার সম্ভাবনা।

লেখক শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞ (মতামত ব্যক্তিগত)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.